যদি এমন হয় হঠাৎ কলকাতা থেকে লন্ডন যাওয়ার ইচ্ছে হলো আর- শুধু একটা বাসে বসলে ইচ্ছে পূরণ হতো, তাহলে কেমন হতো! অবাস্তব মনে হচ্ছে? এক্কেবারে না। এমন অদ্ভুত ঘটনাই ঘটত, তাও প্রায় ৫২ বছর আগে খোদ কলকাতা মানে তৎকালীন ক্যালকাটাতে। আর তা ঘটাতো ‘অ্যালবার্ট’- কিন্তু কে সে? আর কলকাতা থেকে লন্ডন যাওয়া যেত শুধু এক বাসে! আজ সেই কথাই বলবো।
এক কথায় কলকাতা আর লন্ডনকে মিলিয়ে দিয়েছিল ‘অ্যালবার্ট’। এখন অবশ্য সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে ‘অ্যালবার্ট’ এর সাথে বেশ কিছু মানুষের পরিচিতি ঘটেছে। একটা সময় পৃথিবীর সবথেকে লম্বা রুটের পাঁচ তারা বাস ছিল ‘অ্যালবার্ট’। সময়টা ১৯৬৮, মানে তখনও ক্যালকাটা ‘কলকাতা’ হয়নি। এই পুরো বিষয়টির উদ্যোক্তা ছিলেন অ্যান্ডি স্টুয়ার্ট নামের এক ব্রিটিশ পর্যটক, যিনি সিডনি থেকে নিজের শহর লন্ডনে ফেরার পরিকল্পনা করেন এক এডভেঞ্চারাস পদ্ধতিতে। ১৩ জন সঙ্গীকে নিয়ে এক সুন্দর ডাবল ডেকার বাসে ১৯৬৮-এর অক্টোবরে সিডনি থেকে পাড়ি দিলেন লন্ডনের দিকে। তবে কলকাতায় আসেন ট্রেন এবং জাহাজে করেই। কিন্তু কলকাতা থেকে শুরু হয়েছিল সেই দীর্ঘ স্বপ্নের যাত্রা । মোট ১৫০টি সীমান্ত পেরিয়ে অ্যালবার্ট পৌঁছতো লন্ডন। তৈরি হল পৃথিবীর সবথেকে লম্বা বাস রুট। খ্যাতির শীর্ষে এলো ‘অ্যালবার্ট’ আর পৃথিবীর দীর্ঘতম বাসরুটের দাবিদার হলো এই তিলোত্তমা ।
‘অ্যালবার্ট’ এর ভেতরে ছিল ফাইভ স্টার বন্দোবস্ত; খুব বেশি যাত্রী নেওয়া যেত না। আর তা অধিকাংশেরই সাধ্যাতীত ছিল। কারণ কলকাতা থেকে লন্ডন যাওয়ার সিঙ্গল ট্রিপের ভাড়া ছিল ৮৫ পাউন্ড, যা কিন্তু ভারতীয় মুদ্রায় তৎকালীন সময়ে ছিল রীতিমতো মূল্যবান। কিন্তু যারা চড়তেন, তাঁরা এক অদ্ভুত অ্যাডভেঞ্চারের সাক্ষী থাকতেন। মূলত কলকাতা আর লন্ডনের মধ্যে হলেও, চারটে ট্রিপ করা হয় সিডনি থেকেও। শেষ ট্রিপটি ছিল ১৯৭৬ সালে। কিন্তু সেই ঐতিহাসিক রোমাঞ্চকর দীর্ঘ যাত্রা পথের ইতিহাস তো অবিস্মরণীয়, আর তাই আজও ভাইরাল হয় ‘অ্যালবার্ট’, আজও স্মৃতির পাতায় জ্বলে ওঠে সেই কলকাতা থেকে লন্ডন যাত্রার ছবি।