‘এই একটি মুহূর্ত চলে গেল, এটা কখনোই ফিরবে না আর, মুহূর্তই মুহূর্তের শেষ- এ কথা জানি বলেই নিঃশেষে পেতে চাই একে, ভবিষ্যতের জন্য কিছু ফেলে না রেখে। ’
বিশ্বাসী ছিলেন নিভৃতযাপনে। নিভৃতির অন্দরেই চলত সারস্বত সাধনা। নীরবতার কন্ঠ যত প্রবল ততই প্রখর শব্দরা।
তীব্র অসহিষ্ণুতার মাঝে তিনি এক ঋজু বটবৃক্ষের ঠাঁই। মানুষটি শঙ্খ ঘোষ।
ধবধবে সাদা ধুতি পাঞ্জাবী। উজ্জ্বল পোশাকের শুভ্রতা থেকে ঝলকে আসে হীরক ব্যক্তিত্বের দ্যুতি। ভিড়ের মধ্যে একা। বাংলা সাহিত্যের
‘মাস্টারমশাই’।
জন্ম অবিভক্ত বঙ্গের চাঁদপুরে। সন ১৯৩২। আসল নাম চিত্তপ্রিয় ঘোষ। তবে সে নাম প্রায় হারিয়ে গিয়েছে ‘শঙ্খে’র আড়ালে।
প্রেসিডেন্সি কলেজে সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করে যোগ দেন অধ্যাপনায়। বঙ্গবাসী কলেজ। সিটি কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। দীর্ঘ অধ্যাপক জীবন। যুক্ত ছিলেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও।
সাত দশকের সাহিত্যিক জীবন। গদ্য। প্রবন্ধ। কবিতা। গভীর মেধার সংযত উচ্চারণ চূড়ান্ত অস্থির মুহূর্তেও বারি ধারায় স্থির করে দেয় সচেতন পাঠকের মনোভূমি। দিক ভুল করা নাবিকের কাছে শুকতারা আলো।
আবার সেই তিনিই গত কয়েক দশকে তীব্র প্রতিবাদের মুখ; সময় এবং সমাজের দায় যিনি কখনও এড়িয়ে যান না। প্রয়োজনে পথে নেমেছেন। মিছিলে হেঁটেছেন। শরীর অশক্ত তবু তিনি অবিচল। বাঙালি সমাজের জাগ্রত বিবেক।
আকাশ-মাপের কবির গৃহের দ্বারটি সদা উন্মুক্ত ছিল সব অক্ষরপ্রেমীদের জন্য। সাক্ষাৎ করতেন। সময় দিতেন। অধরা ছিলেন না দূরাভাষেও। অবারিত হৃদয় শেষ জন্মদিনটিতেও। গত একবছর নিজে হাতে লিখতে পারতেন না। কিন্তু তাঁর কলম থমকে থাকেনি।
শত অসুস্থতার মধ্যেও ভেবেছিলেন ভোট দেবেন। উত্তর কলকাতার মানিকতলা কেন্দ্রের ভোটার কবি নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থার জন্য। কিন্তু সংক্রমন জর্জর কবি পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারেননি। কোভিড বিধি মেনে নির্বাচন কমিশনের কর্মীরা তাঁর বাড়ি গেলেও সম্ভব হয়নি ভোট গ্রহণ। ফিরে আসেন কর্মীরা। বুধবার কবি নিজেই ফিরে গেলেন। অনন্তে…