গান, গিটার আর রাজনীতি। তিন মিলে তিনি। গৌতম চট্টোপাধ্যায়। এক আগুনে মানুষের নাম।
যে দিকেই তাকিয়েছেন, বদলের রঙে রাঙিয়েছেন সেই দিককে।
বাড়িতে ছিল একটা বাতিল হাওয়াইয়ান গিটার। পাড়ার দোকানে নিয়ে গেলেন সেটাকে। নানা কৌশলে সেই গিটারই বদলে গেল স্প্যানিশ রোয়াবে।
এমন রোয়াব সবাই দেখাতে পারে না তিনি পেরেছিলেন। গানের জন্য সব ছেড়েছিলেন। কী প্রবল পাগলামি যে ভর করল, চাকরি ছাড়তেও ডরালেন না।
পাঁচ ভাই তাঁরা। বেহালার বাড়িতে গানের চর্চা ছিল। পাঁচ ভাই-ই যন্ত্র সঙ্গীত শিখেছিলেন। গৌতম শিখতেন তবলা।
হেন কোনও যন্ত্র ছিল না, যা বাজাতে পারতেন না। শিখতেও সময় লাগত না।
প্রেসিডেন্সিতে ফিজিওলজির ছাত্র ছিলেন। বিদেশী গান শুনতেন প্রচন্ড। একটা এঙ্গলো ব্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কলেজে পড়তে পড়তেই হাতে আসে সেই স্প্যানিশ গিটার।
সরাসরি জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। একেবারে আষ্টেপৃষ্ঠে। স্লোগান, মিটিং, মিছিল, দেওয়াল লেখা থেকে শুরু করে সক্রিয় রাজনীতি। বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল। গ্রামে গ্রামে ঘুরতেন। পুলিশের গুলিতে সঙ্গী সাথীদের প্রাণ হারাতেও দেখতে হয়েছে। যেতে হয়েছিল আন্ডারগ্রাউন্ডে। শেষে বেহালার বাড়ি থেকেই গ্রেফতার করে পুলিশ। দেড় বছর জেলবন্দি।
কলকাতার বাইরে থাকতে হবে এই শর্তে আসে মুক্তি।
এরপর ফের গানের ভুবনে। প্রথমে সপ্তর্ষি নামে একটি দল গড়েন।
পরে ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’। দলের সদস্য রঞ্জন ঘোষালের দেওয়া নাম।
বাংলা গানের দুনিয়ায় বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল মহীনের ঘোড়ার দল।
বদল নয়, পড়ুন বিপ্লব।
প্রেমের আদলে প্রতিবাদের সুর। ব্যাথা বেদনার কাব্য।
চিরকাল তিনি ছক ভাঙা। সারা পৃথিবীর গানের ভাষায় মিলিয়ে দিয়েছিলেন বাংলা গানকে। মহীনের ঘোড়াগুলি কোনও এক একক ব্যান্ডের নাম নয়। আসলে এক সময়ের নাম। এক ধাক্কায় পৃথিবীর মঞ্চে।
পরে ভেঙে গিয়েছিল ব্যান্ড। বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছিল সদস্যরা। গৌতম নিজেই মনের ভারে অন্য পেশায়। সময় হারায়, মানুষ হারায় কিন্তু সুর জেগে থাকে। গান বয়ে চলে। তাঁদের ক্ষেত্রেই এর ব্যতিক্রম হয়নি।
আজও মঞ্চ থেকে মোবাইল সবখানেই মহীনের ঘোড়ারা মাঝমাঠে রাজত্ব করছে…