অবসাদ একটি মারণ রোগ। ক্যান্সারের মতোই তীব্র তার অনুভূতি। মানুষের মনে যখন অবসাদ ঘিরে ধরে তখন তার জীবন ছারখার করে দেয়। ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়ে সেই মানুষ। অবসাদ এমনই একটি রোগ যা সময়ের সাথে সাথে মানুষকে আত্মহত্যার জন্যও বাধ্য করে থাকে। দীর্ঘক্ষণ একা থাকতে চাওয়া, কোনো কিছুই ভালো না লাগা, পৃথিবীতে তার কেউ নেই এরকম মনে হওয়া প্রভৃতি অবসাদের লক্ষণ হয়ে থাকে। কোনো কারণ ছাড়াই প্রচন্ড কান্না পাওয়া, সারাক্ষন ক্লান্ত লাগা, সবসময় ঘুমোতে চাওয়া হলো ডিপ্রেশনের চরম মুহূর্ত। এইসব সময়ে অনেক মানুষ চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়েই বাজার থেকে ওষুধ কিনে এনে খেয়ে থাকেন। কিন্তু এইজাতীয় ওষুধ চিকিৎসকের বিনা অনুমতিতে খেলে পরে যে ক্ষতি হতে পারে তার ধারণা মানুষের সেইসময় থাকে না। এমন সময় এই ব্যাপারটি আমরা উপলব্ধি করতে পারি, যখন আর কিচ্ছু করার থাকে না। কিন্তু ওষুধ না খেয়ে শুধু নিজের লাইফস্টাইলে কিছু পরিবর্তন এনেই যদি মানসিক অবসাদকে দূরে পাঠানো যায় তাহলে কেমন হবে?
মানসিক অবসাদে ভোগা মানুষ যেমন বেশি ঘুমোতে চায় তেমনই কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার তারা কম ঘুমোন। ঘুম না হওয়ার কারণে তারা নানাধরণের ঘুমের ওষুধ খেতে থাকেন দীর্ঘদিন ধরে। ঘুমের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা নতুন করে বলার কিছু নেই তা আমরা সবাই জানি। তাই সেইসব মানুষ ঘুমের ওষুধের পরিবর্তে যদি ঘরোয়া কোনো উপায় অবলম্বন করেন তাহলে উপকার পাওয়া যাবে। ঘুম যদি না আসে তাহলে প্রথমেই ঘরের সব আলো নিভিয়ে দিন। তাপর ঘরে কোনো সুন্দর গন্ধযুক্ত ধূপকাঠি বা রুমফ্রেশনার দিয়ে নিন। অ্যারোমাথেরাপির কারণে খুব সহজেই ঘুম চলে আসবে।
অবসাদে ভুগলে মানুষ নাওয়া খাওয়া সব ভুলেই যান। সারাদিন দুঃখের সাগরে ভাসতে ভাসতেই তাদের সময় চলে যায়। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে আবার এর উল্টোটাও হয়। মন ভালো করার জন্য তাদের বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতে মন চায়। কিন্তু অস্বাস্থ্যকর এই খাবারগুলি খাওয়ার ফলে মন ভালো হয় কিনা জানা নেই তবে শরীর খারাপ যে হয় তা সবারই জানা। এই সময় মস্তিষ্ক ঠিক মতো কাজ করতে পারে না তাই এই সময় সকলের উচিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া যাতে মস্তিষ্কে সঠিক নিউট্রিশন পৌঁছতে পারে।
অবসাদে ভোগা মানুষদের মধ্যে একা থাকার ইচ্ছে বেড়ে যায়। নিজেকে একটা ঘরের মধ্যে বন্ধ করে রাখার ফলে তারা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আর সামাজিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে মানুষের সাথে কথা বলা কমে যাওয়া, কোনো কিছু ভালো না লাগা প্রভৃতির সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সব মানুষেরই উচিৎ যতটা সম্ভব বাইরে কাটানো। বাইরে বেরোলে প্রচুর লোকের সাথে মেলামেশা করলে মন ভালো থাকে। বাইরে বেরিয়ে যদি মানুষের সাথে কথা বলতে ভালো নাও লাগে তাতেও অসুবিধা নেই। পরিবেশে বিরাজ করা প্রচুর গাছপালা, পশুপাখিরা কিন্তু তাদের মতো করে ঠিক কাছে টেনে নেবে।
অবসাদের ফলে আমাদের মস্তিষ্ক থেকে কর্টিসোল হরমোনের ক্ষরণের পরিমান বেড়ে যায়। এই কর্টিসোল হরমোনকেই স্ট্রেস হরমোন বলা হয়ে থাকে। আমাদের উচিত মস্তিস্ক যাতে এই স্ট্রেস হরমোন কম ক্ষরণ করে সেই দিকে খেয়াল রাখা। স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ কমানোর জন্য আমাদের প্রয়োজন নিজেদেরকে সচল রাখা। আর সচল রাখার জন্য উচিৎ ব্যায়াম বা যোগাসন করা। যোগাসন করলে কর্টিসোল হরমোনের ক্ষরণ কমে এবং মন ভালো থাকে।
মন খারাপ ভালো করতে পারে এমন একটি খাবার জিনিস হলো চকোলেট। ডার্ক চকোলেট মস্তিষ্কে এন্ডরফিন কেমিক্যালের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। এই কেমিক্যালটি ছাড়াও চকোলেটে থাকে সেরোটোনিন যা একধরনের অ্যান্টি-ডিপ্রেস্যান্ট হিসেবে কাজ করে। এই উপাদানটি মন ভালো করতে সাহায্য করে।
তাই অবসাদে ভুগলে একা থাকার অভ্যেস বা কম খাওয়া, কম ঘুম এইসবের অভ্যেস থাকলে এখনই বদলে ফেলুন সেইসব অভ্যেস। শরীরের উপর মনের প্রভাব পড়তে দেবেন না। সুস্থ থাকুন দেখবেন মন ও ভালো থাকবে।