ব্রিয়াঞ্জে ট্রেন থেকে নেমেই একটা সিগারেট ধরিয়ে লেকের দিকে দেখছিলাম, আর দু’জনে ছক কষছিলাম অত:কিম।
হঠাৎ এক মহিলার চিৎকার শোনা গেল, উনি লোকজনকে ডাক ছিলেন বাসে ওঠার জন্য।
তাকিয়ে দেখি রেল লাইনের পাশেই তিনটে বাস দাঁড়িয়ে, সেই বাসে লোকজন উঠছে। আমরাও এগিয়ে গেলাম। ভদ্রমহিলাকে জিজ্ঞেস করলাম বাসের টিকিট কোথায় কিনতে হবে। উনি জানালেন যে ট্রেন লাইন বন্ধ থাকায় রেল কোম্পানী বাসের ব্যবস্থা করেছে আমাদের ইন্টারলাইকেন পৌঁছনোর জন্য। এর জন্য আলাদা টিকিট নেই।
আবার বুঝলাম ওই দেশের সাথে আমাদের ফারাক।
বাস ভর্তি হতেই যাত্রা শুরু।
লেকের বাঁদিক ধরে চলাম আমরা ইন্টারলাকেনের উদ্দেশ্যে। আমাদের বাঁদিকে উঁচু পাহাড়। লেক আর তার অন্য পাড়ের পাহাড় ও গাছপালার এক অপূর্ব সৌন্দর্য। হিসেব করে বাসের ডানদিকে বসে ছিলাম।
মিনিট পনের পরেই পৌঁছে গেলাম ইন্টারলাকেন ইস্ট স্টেশনে । এই জায়গাটাও বেশ জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পট। গোল্ডেন পাস রুটে এরপরেও তিনটে ট্রেনে চড়ে স্পিয়েজ, জিউইসমান হয়ে লেক জেনেভার ধারে মনট্রিয়ক্স পর্যন্ত যাওয়া যায়। তবে আমাদের এই রুটের যাত্রা আপাতত শেষ। হাতে সময় নেই। এখন ট্রেনে যাব সুইজারল্যান্ডের রাজধানী বার্ন।
লেক থুনকে ডানদিকে রেখে চলা শুরু হল। এই লেকটা শেষ হতেই এল থুন শহর। সেখান থেকে আবার আ্যারে নদী সঙ্গ নিলাম আমরা, দুইয়েরই গন্তব্য বার্ন শহর।
বার্নে পৌঁছেই চেনা পথে সুইস ফেডারেল প্যালেসে। স্যান্ডস্টোনের এই বিরাট প্রাসাদেই দেশের পার্লিয়ামেন্ট।
আমাকে অবশ্য এই প্রাসাদের চেয়ে এর পিছন দিকটা বেশি টানে। কারন এর পিছনে অনেক নিচে সমতলভূমি, সেখান থেকে ফানিকুলার রেলে পার্লিয়ামেন্ট আসতে হয়। উপর থেকে অনেক দুর অব্দি দেখা যায়, আর সে দেখাতেও চোখের সুখ, হেমন্তের নানা রঙের খেলা সর্বত্র।
খানিকটা দূরে সেই ব্রিজটা দেখা যাচ্ছে, যেটার নিচের দিকটা শীতকালে বরফে ঢাকা দেখেছি। এখন তার চারিপাশেও রঙের মেলা।
এর পরের টার্গেট ছিল জাইটোগ্লগ, যেটা হলো জ্যোতির্বিজ্ঞানের ঘড়ি।
কয়েক’শো বছরের পুরনো এই ঘড়িকে ছোটখাটো প্ল্যানেটরিয়াম বলা চলে।
ঘড়িঘরটি তৈরি হয়েছিল ১২১৮-২০ খ্রীস্টাব্দে, শহরের দরজার টাওয়ার হিসেবে। পরে এটিকে মহিলাদের জেলখানায় রূপান্তরিত করা হয়।
পঞ্চদশ শতাব্দীতে এক বিধ্বংসী আগুনে এই টাওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারপর অনেকবারই এর মেরামত হয়েছে। ঐ সময় মহিলা কারাগারকে এখান থেকে সরিয়ে একটা ঘড়ি বসানো হয়। বার্নের সবচেয়ে পুরনো মনুমেন্ট এই ঘড়ি।
ঘড়ি টাওয়াররে কাছেই হল মুনস্টার, যা আসলে বার্ন ক্যাথেড্রাল। তার কাছেই ওল্ড সিটি সেন্টার যেটি ইউনেস্কোর হেরিটেজ সাইট হিসাবে ঘোষিত। আইনস্টাইনের বাড়িও কাছেই। সেই বাড়িতে আইনস্টাইন বছর তিনেক ছিলেন। তাঁর যুগান্তকারী কিছু গবেষণার কাজও করেছিলেন সেখানেই।
কাফিগটার্ম নামে কয়েকশো বছরের পুরনো আরেকটা ঘড়িও এর কাছাকাছিই আছে।
ঘুরতে ঘুরতে খেয়াল হল দিনের আলো কমে আসছে, আমাদের এবার জ্যুরিখ ফেরা উচিত। তাছাড়া একদিনের পক্ষে যথেষ্ট হয়েছে।তাই টুকটুক করে স্টেশনের দিকে গেলাম। এক ঘণ্টার জার্নি...