গন্তব্য সবুজ দ্বীপ

শহুরে যান্ত্রিকতায় হাঁপিয়ে উঠেছেন? ব্যস্ত জীবনের ফাঁকে একটু সজীবতা, উদ্দামতা প্রয়োজন? চলে আসুন কলকাতা থেকে উত্তরে ৭৫ কিলোমিটার দূরে সবুজ দ্বীপে। একাকিত্ব উপভোগ করতে হলে এখানে শীতের মরশুম এড়িয়ে বছরের যেকোনো সময় আসুন। মনটা পিকনিকের জন্য হুহু করলে সপরিবারে চলে আসতে পারেন।

SabujDweep4

অর্জুন, মেহগনি, শাল, সেগুন গাছের ছায়ায় অনন্ত জলরাশি পরিবৃত এই বিচ্ছিন্ন ভূমিখন্ড আপনাকে পার্থিব জগতের জঞ্জাল থেকে মুক্তি দেবে। কী পরম লালিত্যে নদীমাতৃকা তার আপন বক্ষে আগলে রেখেছে এই ছোট্ট সবুজের আশ্রয়টুকুকে। খেয়াঘাটেও দু'দন্ড বসতে পারেন, আকাশের সীমানা সবুজকে ছুঁয়ে গেছে। পাড়ে নৌকোগুলো বাঁধা যেন অন্য এক সাম্রাজ্যের পথপ্রদর্শক তারা। আপনার আগমনে তার অপেক্ষার দিন শেষ, এবারে আপনাকে সবুজের হাতে সমর্পণ করেই তার দায়ভার মুক্ত হবে।

SabujDweep1

১৯৭৮ সালের বন্যার পর বলাগড়ে বেহুলা ও হুগলী নদীর সঙ্গমস্থলে চর জাগতে শুরু করে, যা এখন‌ সবুজ দ্বীপ নামে খ্যাত। ২০১৭ সালে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়, রাত্রিবাসের জন্য কুড়ির অধিক সংখ্যায় কটেজ তৈরী হয়, জল ও বিদ্যুতের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। বর্তমানে অবস্থার অবনতি হয়েছে। কটেজগুলি অব্যবহার্য অবস্থায় পড়ে রয়েছে, ফলত রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা এখন পুরোপুরিভাবে বন্ধ।

SabujDweep2

দিনের বেলা আটটা থেকে দুপুর তিনটে পর্যন্ত সবুজদ্বীপ পরিভ্রমণের সময় নির্ধারিত হয়েছে, যা প্রশাসনিক সাহায্যে কড়াকড়িভাবে মান্য করা হয়। ছোটখাটো‌ গুটিকতক দোকান‌ রয়েছে। চা, পানীয় জল, ফাস্ট ফুড, টুকিটাকি খাবার এখান থেকে সংগ্রহ করতে পারেন। পিকনিক করতে ইচ্ছুকেরা মোটামুটিভাবে দ্বীপের সম্মুখভাগেই থাকেন, গান-বাজনার জন্য অনেকে সাথে করে বক্সও নিয়ে যান। সম্ভবত অলিখিত চুক্তিতেই সকলে দ্বীপের ভেতরের দিকে পরিবেশের নির্জনতা বজায় রাখেন। বর্তমানে ফোন-ক্যামেরা যন্ত্রের যন্ত্রণায় আমরা মুহুর্ত অনুভব করতেই ভুলে গেছি। কিছুক্ষণের জন্য সবকিছু দূরে রেখে নিশ্চিদ্র নীরবতা অনুভব করুন। শিল্পীর তুলিতে যেমন রঙের বৈচিত্র্য খেলা করে, মানসচক্ষে সে বৈচিত্র্যের সাক্ষী হন।

SabujDweep3

কীভাবে পৌঁছবেন!

হাওড়া স্টেশন থেকে হাওড়া-কাটোয়া লোকাল (টিকিট মূল্য পনেরো টাকা) ধরে বলাগড় স্টেশন যেতে হবে। শিয়ালদা স্টেশন থেকে শিয়ালদা-কাটোয়া ধরেও বলাগড় স্টেশনে পৌঁছোনো যায়। স্টেশন থেকে নেমে টোটো বা রিক্সা করে সুখড়িয়া ফেরিঘাটে পৌঁছতে হবে (সর্বোচ্চ ভাড়া জনপ্রতি কুড়ি টাকা)। সবুজ দ্বীপের উদ্দেশ্যে ফেরিঘাট ‌থেকে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে বড় নৌকোয় যেতে চাইলে, সপরিবারে গেলে এই ব্যবস্থাই যথাযথ। একাকী বা সর্বোচ্চ চারজন যাবার জন্য খেয়া ভাড়া করতে পারেন (চারজন বা একাকী আড়াইশো টাকা), পঞ্চাশ টাকা মাঝি-ভাইদের হাতে দিলে অনেকটা সময় ধরে নৌকোবিহারের আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন। সামনেই দুর্গাপূজা, মা দুগ্গার আগমনবার্তা নিয়ে পাড়ে পাড়ে কাশফুলের প্রকাশ যেকোনো বাঙালীর মনে সাড়া ফেলবে। প্রকৃতির কাছে আমরা দায়বদ্ধ, তাই প্লাস্টিক দ্রব্যাদি এখানে-ওখানে ফেলে পরিবেশকে কলুষিত করবেন না। আশা রাখি, আগামীতে সরকারী তৎপরতায় সবুজ-দ্বীপ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে প্রাধান্য পাবে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...