বহু শতাব্দী ধরে মানুষদের অবহেলার শিকার কিন্নররা। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হওয়ার দরুণ এই সমাজের বুকে মাথা উঁচু করে হাঁটার অধিকার ছিল না তাদের। সমাজের নানা বিধিনিষেধ বরাদ্দ ছিল তাদেরই জন্য। স্কুল, কলেজ, অফিস-কাছারি কোনটির দ্বারই ছিলোনা খোলা। কিন্তু হার মানেননি কিন্নর দল। ধীরে ধীরে এই সমাজে নিজেদের জায়গা পোক্ত করে নিতে বদ্ধপরিকর ছিল এই বিশেষ মানুষরা। কিন্তু এই পরিবর্তন আসছিলো খুবই ধীরগতিতে।
হঠাৎ একদিন এলো সেই সুখবর। এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ যখন জানা গেলো, কিন্নর দল এইবছর এলাহাবাদের শাহীস্নানে অংশগ্রহণ করতে পারবে। যেখানে কয়েকবছর আগে লক্ষী নারায়ণ ত্রিপাঠীর মতো ব্যক্তিত্ব সমাজের বৃহত্তর অংশের সাথে এই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে যুক্ত করতে চাইছিলেন সেই সময় কিন্নর দলের এই জয় স্বাভাবিকভাবেই আনন্দের বার্তা বহন করছে। মঙ্গলবার অর্ধকুম্ভের পুণ্যলগ্নে গেরুয়া ও লাল শাড়ি পরে সেখানে গিয়ে ডুব দিয়ে শাহীস্নানের পুণ্য অর্জন করে এই কিন্নর সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ। ইতিহাসে এই প্রথমবার কোনো ধর্মীয় সমাবেশে একসাথে যোগদান করার সুযোগ পেলেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষজন। কিন্নর দলের নেত্রী লক্ষী নারায়ণ ত্রিপাঠি বলেন, এই অংশগ্রহণের ফলে তারা নিজেদের সমাজের মূল অংশের একটি ভাগ বলে প্রমান করতে চাইছেন। সৃষ্টিকর্তার এক অন্যতম সৃষ্টি তারা। তাই তিনি মনে করেন, তাদের অন্তরাত্মার সাথেই মিলিত রয়েছে সৃষ্টিকর্তার প্রাণের বীজ।
তৃতীয় লিঙ্গের এই মানুষজন আমাদের শিক্ষিত সমাজে পরিচিত 'হিজড়ে' নামে। সামাজিক স্বীকৃতি না পাওয়ার দরুন জীবিকা নির্বাহের জন্য তাদের পতিতাবৃত্তি, ভিক্ষা বা অসম্মানীয় কোনো কাজ করতে হয়। বরাবরই সমস্ত শুভ অনুষ্ঠান থেকে সরিয়ে রাখা হয় তাদের। তাদের অধিকার অর্জনের জন্য লড়াই বহুদিনের। শেষ পর্যন্ত তাদের অস্তিত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রবর্তন করেছিল এই 'তৃতীয় লিঙ্গের'। তখন থেকেই শুরু হয়েছিল সমতল ভূমিতে পথ চলা। ফিরে তাকাতে হয়নি আর। তারই মধ্যে এরকম সাফল্য যথারীতি সাড়া ফেলেছে সারাবিশ্বে।