ট্রিং ট্রিং করে ঘন্টা বাজছে। স্মৃতির পথ বেয়ে আসছে কলকাতার নস্ট্যালজিয়া। ট্রাম।
একসময় ট্রাম শব্দটার নাম শুনলে বুকের ধুকপুকুনি বেড়ে যেত। কত প্রেম, বন্ধুত্ব, মান-অভিমানের সাক্ষী ট্রাম। ইতিহাসের স্মৃতি হয়ে আজও কোথাও কোথাও চলমান এই যান।
তেমনি স্মৃতির সাক্ষী 'স্মরণিকা'। এশিয়ার একমাত্র ট্রাম-জাদুঘর। স্মৃতি বয়ে নিয়ে কলকাতার ট্রাম কর্পোরেশন অফিস চত্বরে রয়েছে এই ট্রাম জাদুঘর 'স্মরণিকা'।
ঠিকানা ৬ নং সিধু কানু ডহর, উত্তর চৌরঙ্গী, কলকাতা-৯।
১৯৩৮ সালের একটি ঐতিহ্যবাহী ট্রামের মধ্যে স্মৃতি পূর্ণ করে ২০১৪ সালে প্রথম শুরু হয়েছিল এই ট্রাম-জাদুঘর।
বৃহস্পতিবার বাদে সপ্তাহের বাকি ছ'দিনই দুপুর ১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই জাদুঘর।
মাত্র দশটাকায় এই পুরো সময়টাই স্মৃতি-ভ্রমণ করায় এই স্মরণিকা।
এই জাদুঘরে ট্রাম নামের যানটির গোড়াপত্তন থেকে এতদিনের যাত্রাপথ ছবির মাধ্যমে সাজানো রয়েছে।
স্মৃতি-ভ্রমণ করতে করতে ক্লান্ত লাগলে এই জাদুঘরে থাকা ক্যাফেটেরিয়ার কফির চুমুকে ভ্রমণকারীরা জিরিয়ে নিতে পারে।
ব্রিটিশ শৃংখলে বন্দি ভারতবর্ষ। কলকাতার পথ তখন নস্ট্যালজিয়ার সাক্ষী। পথে পথে যোগাযোগ মাধ্যম খুঁজছিল ইংরেজরা। তখনই তাঁরা চালু করে ট্রাম।
শুধু কলকাতা নয়, চেন্নাই, দিল্লি ও মুম্বাইতেও শুরু হয়েছিল ট্রাম নামক যোগাযোগ ব্যবস্থা।
কিন্তু কালের স্রোতে ট্রাম হারিয়ে গেছে ওই রাজ্যগুলি থেকে।
ঐতিহ্য বুকে নিয়ে কলকাতার রাস্তায় আজও অল্প হলেও চোখে পড়ে ট্রাম। তবে এখন নির্দিষ্ট কিছু জায়গাতেই যাতায়াত করে ট্রাম।
গত কয়েক বছর ধরেই ট্রামকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছিল প্রশাসন। সেই লক্ষ্যেই ২০১৪ সাল থেকে শুরু হয় এই ট্রাম-জাদুঘর।
শুধু ট্রামের ইতিহাস নয়, সমগ্র কলকাতার ইতিহাসও চিত্রের মাধ্যমে ধরা রয়েছে এই জাদুঘরের দেওয়ালে।
এই জাদুঘরের টিকিট ট্রামের টিকিটের মতই যা স্মৃতি-সংগ্রহে রাখার মত।
‘স্মরণিকা’ ট্রাম-জাদুঘরের বাইরের অংশ কাঠ নির্মিত। ভেতরে ইতিহাস সম্বলিত বিশেষ সাজসজ্জা ব্যবহার করা হয়েছে।
একটি বিশেষ ছোট্ট ট্রামগাড়ীকে রূপান্তরিত করা হয়েছে ক্যাফেটেরিয়াতে।
ছবি, কফির চুমুকের পর যদি ইচ্ছে করে পড়াশোনা করতে, তারও উপায় রয়েছে এই ট্রাম জাদুঘরে। যানবাহন সংক্রান্ত বিভিন্ন ঐতিহাসিক ম্যাগাজিন রয়েছে এই জাদুঘরে।
সেই সব ইতিহাস-ভ্রমণ করা যায় অনায়াসেই অতীতের পাতা উল্টাতে উল্টাতে।
তবে বর্তমানে অতিমারির জন্য রয়েছে বিশেষ নিষেধাজ্ঞা। কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষই আপাতত একদিনে এই ট্রাম-জাদুঘরে প্রবেশ করতে পারবে।
তবে ফটোগ্রাফি নিয়ে নেই কোনো নিষেধাজ্ঞা।
একসময় এশিয়ার বৃহত্তম ট্রাম-সার্ভিস ছিল এই কলকাতার ট্রাম গাড়ি। ট্রাম-জাদুঘর সেই ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। আর কলকাতার রাস্তা সেই পুরনো সোঁদা গন্ধ নিয়ে আজও ট্রামের ঘণ্টার অপেক্ষায় থাকে।