যেকোনো দেশের উন্নতি ,অগ্রগতি নির্ভর করে তার শিক্ষা , স্বাস্থ্য , অর্থনীতি , সংস্কৃতির উপর। কিন্তু এই কাঠামোর প্রাথমিক ভিত্তি - শিক্ষা। অবশ্যই সার্বজনীন ও সামগ্রিক। এককথায় দেশের ১০০% মানুষকে প্রাথমিক শিক্ষার আওতাভুক্ত করা, যা না থাকলে অগ্রগতি ও বিকাশের পরবর্তী পদক্ষেপ অসম্ভব। ২০১০ সালে জাতি সঙ্ঘের লক্ষ্য ছিল- ২০১৫ এর মধ্যেই প্রাথমিক শিক্ষার ১০০% সাফল্য। অর্থাৎ দেশের সব শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা। United Nation Millenium Goal এর উদ্দেশ্য - নিরীক্ষরতা দূরীকরণ ও সুস্থ মানসিক বিকাশ - তা সে যে পরিস্থিতেই থাক না কেন।
এই উদ্যোগকেই বাস্তবায়িত করতে কেন্দ্র- রাজ্য সরকারের একাধিক প্রকল্প আছে, আছে N.C.E.R.T এর নিয়মাবলী। বরাদ্দ হয়েছে অর্থ। তার ব্যবহারিক ও বাস্তবিক যথার্থতা কতটা হয়েছে বা তার সাফল্যের গতি প্রকৃতি ঠিক কোন পর্যায়ে তাই আজ আলোচ্য। ভারতে স্বাক্ষরতার নিরিখে সর্বোচ্চ স্থানটি দখল করেছে কেরালা। অর্থাৎ সেখানে স্বাক্ষরতার পরিমান সর্বাধিক। আর সেখান থেকেই প্রাথমিক শিক্ষার বিকাশে এক অভিনব উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে তাও ২০১১ সালে। উদ্দেশ্য ছিল - শিক্ষার্থীদের স্কুলের প্রতি আকৃষ্ট করে স্কুল ছুট বন্ধ করা , শিক্ষাকে আকর্ষণীয় করে তোলার ক্ষেত্র নির্মাণ করা, আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদের সুস্থ পরিবেশে মানসিক সহ সার্বিক বিকাশ ও চরিত্র গঠনের ভিত্তি প্রস্তুত করা। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে সেখানে ব্যক্তিগত উদ্যোগ কার্যকরী ছিল , পরে এর বিকাশকল্পে সরকার তাদের সহযোগী হয়। ঠিক এমন কিছু স্কুল সরকারি সাহায্যে গড়ে তোলা হয়েছে রাজস্থানের আলোয়ার , অন্ধ্র প্রদেশ , চন্ডীগড় , উড়িষ্যা এবং পশ্চিমবঙ্গে। তবে বাকি স্কুলগুলোর কাজ অনেক আগে হলেও পশ্চিমবঙ্গের পথ চলা সবে শুরু হয়েছে।
কিন্তু এতো উদ্যোগ, অভিনবত্ব কিসের ? শিক্ষার্থীর স্কুলে আসার হার বিগত বছরের থেকে বাড়ে বহুগুনে সেকারনেই। এবার আসি সেই কথায়। স্কুলগুলোকে ভারতীয় রেলের মতো করে রং করা হয়েছে। ঠিক যেমন ট্রেন দেখতে, তেমন। যেখানে ক্লাসরুমগুলো এক একটা ট্রেনের কামরার মতো রং করা , ভিতরে বসার ব্যবস্থাও ট্রেনের মতো। প্রধান শিক্ষিকার ঘর ইঞ্জিনের মডেলে বানানো। যার অন্তর্নিহিত অর্থ – ইঞ্জিন ছাড়া যেমন বাকি কোচ চলে না তেমনি শিক্ষকরাই ইঞ্জিন। তাদের দেখানো ও শেখানো পথে শিক্ষার্থীরা নিজেদের গড়ে তুলবে।
খেলার মাঠকে দেওয়া হয়েছে প্লাটফর্মের আকার । এমনই এক স্কুল গড়েছে বীরভূম জেলার মল্লারপুর থানার অধীনে লছিয়াটোড় বাজারের ‘লছিয়াতোড় প্রাথমিক বিদ্যালয়’। পশ্চিমবঙ্গে এই কাজ নতুন হলেও ভারতে নয়। জানা গেছে, এই অভিনবত্বের ফলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে , তাদের পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ বেডেছে , স্কুল ছুট কমেছে আশ্চর্য হারে। আধুনিক ব্যবস্থা হিসেবে মনিটরের ব্যবস্থা আছে। মডেল এসেছে , শিক্ষিকারা Door to Door campaign করে এর সাফল্যকে বাড়িয়েছেন। কিছু প্রয়োজনীয় আধুনিক সরঞ্জাম এখনো অনুদানের অপেক্ষায়। কাজটি সময়সাপেক্ষ।
মিডডে মিলের মাধ্যমে স্কুলে আসার প্রবণতা বাড়লেও শিক্ষার প্রতি আকর্ষণ বাড়ে নি । তাই ‘প্রলোভন নয় অভিনবত্ব ও আকর্ষণ’ হোক শিক্ষা বিস্তারের যথার্থ মাধ্যম, আর সু-শিক্ষক নিয়োগ প্রয়োজন এই সাধু উদ্যোগকে সফল করার জন্য। ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি নয়, ছাত্র গড়াই হোক প্রধান উদ্দেশ্য। লক্ষ্য হোক সঠিক শিক্ষা বিস্তার - সর্বস্তরে।