বসন্তের হেঁশেলে জেনে নিন আমিষ ছ্যাঁচড়া আর এঁচোড় ছেঁচকির রেসিপি

বসন্ত বাহার

বসন্তের হিল্লোলে যোগ্য সঙ্গত করে নানা রকমের তরকারি। কারও দিন শেষ, কারও আবার দিন শুরু। আজকের রান্নায় দেওয়া হল বসন্ত স্পেশাল এঁচোড় থেকে শেষ বেলাকার সর্ষে শাক আর বিগত দিনের স্মৃতি ভরা মাছের কাঁটার ছ্যাচড়া।

এঁচোড় ছেঁচকি

পেঁয়াজ রসুন ছাড়া একটু অন্য ধরণের এঁচোড়ের রান্না এই এঁচোড় ছেঁচকি।

কী কী লাগবে

এঁচোড়-১ কেজি

আলু-৩০০ গ্রাম

হলুদ গুঁড়ো-২ চা চামচ

জিরে গুঁড়ো-২  চা চামচ

ধনে গুঁড়ো-২ চা চামচ

লঙ্কা গুঁড়ো- স্বাদ অনুযায়ী

নারকেল- আধমালা

আদা-২৫ গ্রাম

তেজপাতা-ফোড়নের জন্য

গোটা জিরে- ফোড়নের জন্য

শুকনো লঙ্কা- ফোড়নের জন্য

কাঁচা লঙ্কা- ৩-৪ টে

সরষের তেল- রাঁধবার জন্য

গরমমশলা গুঁড়ো - ১ চা চামচ

চিনি-স্বাদ অনুযায়ী

নুন- স্বাদ অনুযায়ী

কীভাবে রাঁধতে হবে

এঁচোড়ের খোসা মোটা করে ফেলে, ফুকো ফেলে শাঁসের অংশটা খুব সরু সরু করে কেটে নিতে হবে। কাঁটার সময় হাতে সর্ষের তেল মেখে নিলে এঁচোড়ের কষ হাত থেকে তোলা সহজ হবে।এঁচোড়কাটার আগে জলে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। আলু খোসা ছাড়িয়ে সরু সরু করে কেটে নিতে হবে। আদাও বেটে রাখতে হবে। নারকেল কুরিয়ে নিতে হবে। কড়ায় সর্ষের তেল দিয়ে গরম করে শুকনো লঙ্কা, তেজপাতা ও জিরে ফোড়ন দিয়ে আলু হালকা করে ভেজে তুলে নিতে হবে।এবার প্রয়োজন মনে করলে আরও কিছুটা তেল দিয়ে গরম করে কুচিয়ে রাখা এঁচোড় দিয়ে নাড়াচাড়া করে হলুদ গুঁড়ো, জিরে গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো ও আদাবাটা দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নুন ও কাঁচালঙ্কা দিয়ে, কিছুটা জল দিয়ে থালা চাপা দিয়ে এঁচোড় সেদ্ধ করতে হবে। কিছুক্ষণ পরে থালা তুলে দেখতে হবে এঁচোড় সেদ্ধ হয়েছে কি না। প্রয়োজন হলে আবার কিছুটা জল দিতে হবে।এঁচোড়আধসেদ্ধ হলে ভেজে তুলে রাখা আলু, চিনি আর নারকেল কোরা দিয়ে  আঁচ কমিয়ে আবার ঢেকে রাখতে হবে। তরকারিগুলো সেদ্ধ হয়ে এলে আঁচ বাড়িয়ে জল শুকিয়ে ঝরঝরে করে গরমমশলা গুঁড়ো আর ঘি ছড়িয়ে নামালেই তৈরি এঁচোড় ছেঁচকি। বাঙালির ঘরোয়া এই রান্নাটি ভাত থেকে লুচি, রুটি, পরোটা সব কিছুর সঙ্গেই বেশ ভাল লাগে।

পোস্ত দিয়ে সর্ষে শাক

সর্ষে শাকের এখন শেষ প্রহর। পোস্তর পেলব প্রলেপে সেই শাক যে কতটা  স্বাদু হতে পারে তা জানতে হলে  দেখতে হবে রন্ধনপ্রণালী।

কী কী লাগবে

সর্ষে শাক-১ আঁটি

পোস্ত-২ বড় চামচ

পেঁয়াজ-১ টা বড়

হলুদ গুঁড়ো- ১ চা চামচ

লঙ্কা গুঁড়ো- স্বাদ অনুযায়ী

ধনে গুঁড়ো- ১ চা চামচ

কাঁচা লঙ্কা-২ টো

সর্ষের তেল- রাঁধবার জন্য

চিনি- স্বাদ অনুযায়ী

নুন- স্বাদ অনুযায়ী

কীভাবে রাঁধতে হবে

সর্ষে শাক ভাল করে বেছে ধুয়ে নিতে হবে। এবার কুচি করে কেটে রাখতে হবে। পেঁয়াজ খোসা ছাড়িয়ে কুচিয়ে নিতে হবে।  অর্ধেক পোস্ত বেটে রাখতে হবে। কড়াইতে সর্ষের তেল দিয়ে গরম করে গোটা পোস্ত ফোড়ন দিয়ে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালোভাবে নেড়ে নিতে হবে। এরপর হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো দিয়ে নেড়েচেড়ে শাক দিয়ে আবার মিশিয়ে অল্প জল দিয়ে, আঁচ কমিয়ে থালা চাপা দিয়ে কিছুক্ষণ রাখতে হবে। একটু পরে থালা তুলে দেখতে হবে শাক মজে এসেছে কি না। শাক নরম হলে পোস্তবাটা আর কাঁচালঙ্কা দিয়ে নেড়েচেড়ে নামাতে হবে। খাবার সময় সঙ্গে চাই-ই চাই গরম ভাত।

ছ্যাঁচড়া

এই এমন কিছু রান্না আছে যাদের কৌলীন্য তেমন না থাকলেও আমজনতার কাছে তার বিশেষ কদর। ছ্যাঁচড়া তেমনই একটি পদ। সেকালের বিয়েবাড়ির নিয়মরীতি ও আনন্দ আয়োজনের সঙ্গে আজকের বিবাহ উৎসবের অনেকেই তফাত। সেকালের বিয়েবাড়িতে বিয়ের দিনকয়েক আগে থাকতেই আত্মীয়জন সমাগম হত। সেইসব বাড়িতে বিয়ের দিন সকালে এই পদটি রাঁধা হত। রাতে যে মাছের পদ রান্না হত দিনে সেই মাছের ল্যাজা, মুড়ো, কাঁটা, তেল ইত্যাদি দিয়ে বানানো হত আমিষ ছ্যাঁচড়া। মাছের সঙ্গে যোগ করা হত পুঁইডাঁটা, মিষ্টি কুমড়ো, আলু, বেগুন, শিম থেকে প্রায় সব রকমের তরকারি। সব মিলিয়ে তৈরি হত এক আশ্চর্য স্বাদের পদ-যার তুলনা শুধুই সে নিজে। আজ একবার ফিরে দেখা যাক সেকালের পছন্দের পদটির দিকে। সেকালের পছন্দ আর একালের পছন্দ মিলে যাক।

কী কী লাগবে

পুঁইশাক ও পুঁইডাঁটা-১ কেজি

আলু-৫০০ গ্রাম

পটল-৫০০ গ্রাম

রাঙা আলু-৩৫০ গ্রাম

শিম-৩০০ গ্রাম

বেগুন-৫০০ গ্রাম

হলুদ গুঁড়ো-২ চামচ

লঙ্কা গুঁড়ো -স্বাদ অনুযায়ী

জিরে গুঁড়ো -২ চা চামচ

ধনে গুঁড়ো-৩ চা চামচ

শুকনো লঙ্কা-ফোড়নের জন্য

পাঁচফোড়ন- ফোড়নের জন্য

কাঁচা লঙ্কা- ৫টা

তেজপাতা-৪-৫টা

আদাবাটা- ১ বড় চামচ

মাছের তেল, কাঁটা, ল্যাজা ইত্যাদি -৫০০ গ্রাম

সর্ষের তেল- রাঁধবার জন্য

চিনি- সামান্য

নুন- স্বাদ অনুযায়ী

কীভাবে রাঁধতে হবে

পুঁইশাক ও ডাঁটা ধুয়ে মাঝারি মাপে কেটে নিতে হবে। মাছের ল্যাজা, কাঁটা, তেল সব ধুয়ে পরিষ্কার করে নুন-হলুদ মাখিয়ে রাখতে হবে। আলু, পটল, রাঙা আলু ইত্যাদি খোসা ছাড়িয়ে মাঝারি আকারে কেটে নিতে হবে। শিমের দুপাশের সুতো ফেলে অর্ধেক করতে হবে। বেগুন বড় বড় টুকরো করে কেটে নিতে হবে। কড়াইতে তেল দিয়ে গরম করে মাছের ল্যাজা, কাঁটা, গলা, মুড়ো ভেজে নিতে হবে। মাছের তেল কড়াইতে দিয়ে নেড়েচেড়ে ভেজে কড়ার তেল সমেত একটা বাটিতে ঢেলে রাখতে হবে। কড়াই পরিষ্কার করে নিয়ে বেশ কিছুটা তেল দিয়ে গরম করে শুকনো লঙ্কা, পাঁচফোড়ন, তেজপাতা ফোড়ন দিয়ে সব তরকারি দিয়ে ভাজা ভাজা করে ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে। কিছুক্ষণ পরে ঢাকা খুলে বেগুন তুলে নিয়ে হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো, জিরে গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, আদাবাটা, কাঁচা লঙ্কা, নুন আর চিনি দিয়ে ভালো করে নেড়ে গ্যাস কমিয়ে ঢাকা দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ঢাকা খুলে দেখতে হবে তরকারি সব নরম হয়েছে কি না।একটু নরম হলে মাছের কাঁটা, ল্যাজা, মাথা ইত্যাদি, তেল সহ মাছের তেল ভাজা আর ভাজা বেগুন দিয়ে আঁচ কমিয়ে একটু মজাতে হবে। এই রান্নায় জল দেবার দরকার নেই। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে তাতে তলায় ধরে না রায়। সেইজন্য খুন্তি দিয়ে বারবার কড়াইতে নেড়ে যেতে হবে। মাছে তরকারিতে মিলেমিশে তেল গড়ানো গোছের হলে নামাতে হবে। পরিবেশনের সময় সঙ্গে থাকুক ধোঁয়া ওঠা গরম ভাত।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...