প্রেমের শহর আগ্ৰা। মুঘল শাসক শাহজাহান তার স্ত্রী মুমতাজের জন্য তাজমহল নির্মাণ করেছিলেন যমুনার তীরে প্রাচীন এই নগরে। তবে শুধু তাজমহল নয়, মুঘল স্থাপত্যের বহু নিদর্শন পর্যটকদের কাছে বিশেষ করে তুলেছে এই শহরকে।
আগ্রা ইতিহাস নগরী। মুঘল বাদশাহদের প্রিয় শহর। স্বাধীনতার পর উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে অবস্থিত এই জেলা। নতুন দিল্লি থেকে আগ্ৰার দূরত্ব ২১০ কিলোমিটার। আর উত্তরপ্রদেশে রাজধানী লখনউ থেকে ৩৩৫ কিলোমিটার। আগ্ৰার প্রথম আকর্ষণ যদি তাজমহল হয়, দ্বিতীয় অবশ্যই আগ্ৰা দুর্গ বা আগ্ৰা ফোর্ট।
মুঘলদের আসার আগেও অস্তিত্ব ছিল আগ্ৰা ফোর্টের। তবে মুঘল শাসনকালে দুর্গের আয়তন আরও বৃদ্ধি পায়।
এই দুর্গের প্রবেশ দুটি দ্বার রয়েছে। একটির নাম লাহোর গেট ও আরেকটির নাম দিল্লি গেট। বর্তমানে দুর্গটি ভারতীয় সেনাবাহিনীর অধীনে।
এই দুর্গের মূল আকর্ষণ হল দেওয়ান-ই-আম, দেওয়ান-ই-খাস, জাহাঙ্গীর হৌস। সম্রাট আকবর নিজের পুত্রের জন্য নির্মাণ করিয়েছিলেন। এছাড়াও রয়েছে বাবরের আমলে নির্মিত বাওলি নামক একটি জলের কূপ।
শুনলে অবাক হবেন আগ্রা দুর্গে বাংলার কুটির শিল্পের নিদর্শন আছে। জাহাঙ্গীরের স্ত্রী নুরজাহানের সঙ্গে সম্পর্ক নিবিড় বাংলার। নুরজাহানের প্রথম স্বামী ছিলেন বাংলার এক সুবেদার। সেই সময় থেকেই বাংলার শিল্পকলা ও মসলিন কাপড় ছিল নুরজাহানের খুব প্রিয়। আগ্ৰা ফোর্টে অবস্থিত বাংলা মহল তার নির্দেশেই তৈরি হয়েছিল। এই বাংলা মহলেই দেখা মিলবে বাংলার কুটির শিল্পের কাজ। বিখ্যাত গোয়েন্দা শার্লক হোমসের গল্পেও নাম উল্লেখ রয়েছে আগ্ৰা ফোর্টের। অনেক মোঘল সম্রাটরা আত্মগোপন হতে আসতেন এই দুর্গে। ১৫৬৫ সালে তৈরি এই দুর্গ থেকে তাজমহলের দূরত্ব মাত্র ২.৫ কিলোমিটার।
তবে একজন পর্যটকের আগ্ৰা নামটা শোনার পর সবার আগে তাজমহলের কথাই মনে পড়ে। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ স্থানগুলির তালিকায় নাম রয়েছে জনপ্রিয় এই সৌধের। ভারতীয় হিন্দু সংস্কৃতি, পারস্য সংস্কৃতি, তুর্কি সংস্কৃতির নিদর্শনের দেখা মিলবে এই সৌধে। ১৬৪৭ সালে প্রায় কুড়ি হাজার শ্রমিক তাজমহল নির্মাণ করেছিলেন। বর্তমানে পর্যটকদের মূল আকর্ষণ এই সৌধ।
এই আগ্ৰা শহরেই রয়েছে 'বেবি তাজ' আই'টিমাড-উড- দুল্লাহ মকবরা'। ১৬২২-১৬২৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্ত্রী নুরজাহানের নিদের্শে এই সৌধটি নির্মাণ করা হয়েছিল। আই'টিমাড-উড- দুল্লাহ মকবরা'টি দেখতে কিছুটা তাজমহলের মতো। সেই কারণেই পর্যটকদের ভিড় দেখা যায় এখানে। নুরজাহানের পিতা মির্জা গিয়াস বেগের উদ্দেশ্যে এই সৌধটি নির্মাণ করা হয়েছিল।
আগ্ৰা শহরে এছাড়াও বহু জনপ্রিয় ভ্রমণ কেন্দ্র রয়েছে। যার মধ্যে নাম রয়েছে জাহাঙ্গীর মহল, মিনা মসজিদ, নাগিনা মসজিদ, শাহাজাহান মহল, জাসয়ান্ত সিং কি ছাতরী, রাম বারাত, পালিয়াল পার্ক, দয়াল বাগ মন্দির, জামা মসজিদের মতো স্থানের। ট্রেন, বিমান ও সড়ক এই তিন ভাবেই আগ্ৰায় আসা যায়। তবে সড়ক পথে কলকাতা থেকে আগ্ৰার দূরত্ব প্রায় ১,৩৪৩.৯ কিলোমিটার।