মূলত চারধাম ছড়িয়ে আছে ভারতবর্ষের চার প্রান্তে | উত্তরে বদ্রীনাথ‚ দক্ষিণে রামেশ্বরম‚ পূর্বে পুরী এবং পশ্চিমে দ্বারকা| বিংশ শতাব্দী থেকে এই চারধাম আবার পাল্টে যায়| নতুন চারধাম হয় গঙ্গোত্রী‚ যমুনোত্রী‚ কেদারনাথ এবং বদ্রীনাথ| তবে এই চারধামের থেকেও কঠিন এক তীর্থপথ রয়েছে এই দেশে, তা হিমাচল প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত শ্রীখণ্ড। কুলুর নির্মান্দ অঞ্চলে সমুদ্র থেকে ১৯০০০ ফুট উপরে অবস্থিত শ্রীখণ্ড। প্রতি বছর বহু তীর্থযাত্রী মহাদেবের দর্শন করতে যাত্রা করেন সেই পথে। এই পথে বহু মানুষের মৃত্যুও ঘটে এই পথ এতটাই দুর্গম ও ভয়াবহ।
পাহাড়ের মাথায় থাকা ৭৫ ফুট উঁচু ৪৫ ফুট প্রশস্ত শিবলিঙ্গের দর্শন পাওয়ার জন্য তীর্থযাত্রীদের ভিড় হয় প্রতি বছরই। পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্র ও গুজরাট থেকেই আসেন বেশিরভাগ ভক্তরা। যাত্রাপথ অতীব দুর্গম। কোথাও রাস্তা ভীষণ সরু যার পাশ দিয়েই বয়ে গেছে খরস্রোতা নদী। আবার কোথাও পুরু বরফের স্তরে মোড়া। যাত্রা শুরু হয় সমুদ্রতল থেকে ৬০০০ ফুট উচ্চতায়। এর যে যাত্রাপথটি আছে তা শুরু হয় সিমলা থেকে। সিমলা থেকে জায়ো গ্রামে গাড়ি করে যাওয়া যায় তবে সেখান থেকে সিঙ্ঘাদ(৬৮৭৩ফুট) পর্যন্ত এরপরে চলে ৩ কিলোমিটারের ট্রেক। এর পর চলতে থাকে পদযাত্রা। সিঙ্ঘাদ থেকে তাছ্রু(১১,৩১৮ ফুট), তারপর তাছ্রু থেকে কালিঘাট(১২৫০০ ফুট), তারপর ভীমদ্বার(১৩০০০ ফুট), সেখান থেকে যাওয়া হয় পার্বতীবাগ(১৪৮০০ ফুট) এবং নেইন সরোবর এভাবেই অবশেষে পৌঁছে যাওয়া যায় সেই পবিত্র তীর্থস্থান শ্রীখণ্ডে(১৮৭০০ ফুট)। দর্শন পাওয়া যায় মহাদেবের।
তবে এখানে কোনও মহাদেবের মূর্তি বা মন্দিরের দেখা মেলে না। যা দেখতে পাওয়া যায় তা হল একটি বিশাল পাথরের খন্ড যার আকৃতি শিবলিঙ্গের ন্যায়। এই শ্রীখণ্ডকে ঘিরে একটি পৌরাণিক কাহিনীও জড়িত রয়েছে। বলা হয় প্রভু মহাদেব ভস্মাসুর নামে তাঁর এক ভক্তের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে তাঁকে বর দেন যে সেই অসুর যারই মাথায় হাত রাখবে তিনি ভস্ম হয়ে যাবেন। আর এই বরপ্রাপ্ত হয়ে তিনি মাতা পার্বতীকে ভস্ম করার প্রচেষ্টা করতে থাকে। দেবাদিদেব তখন ভস্মাসুরকে বিভ্রান্ত করে এখানে নিয়ে আসেন এবং নিজে সমাধিস্থ হন। এরপর বিষ্ণুদেব মোহিনী অবতার ধারণ করেন এবং নাচের মাধ্যমে ছল করেই ভস্মাসুরকে নিজের মাথায় নিজের হাত রাখানোর চেষ্টা করতে থাকেন। তাঁর চেষ্টা সফল হওয়া মাত্রই ভস্মাসুর নিজেই ভস্ম হয়ে যায়, বিনাশ ঘটে অসুর শক্তির। কথিত আছে এরপর মাতা পার্বতী তাঁর দুই পুত্র কার্ত্তিক ও গণেশকে নিয়ে এখানে ধ্যানস্থ হন। অবশেষে পাথরটি কয়েকটি খণ্ডে ভেঙ্গে যায় এবং সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন স্বয়ং মহাদেব। বর্তমানে এই পাথরের অংশটিই শ্রীখণ্ড হিসাবে পরিচিত।
আগামী ১৫ই জুলাই থেকে এই বছরের শ্রীখণ্ড মহাদেবের যাত্রা শুরু। চলবে ২৫শে জুলাই পর্যন্ত। এই বছর থেকে তীর্থযাত্রীদের জন্য বেশ কড়া নিয়ম চালু করা হচ্ছে। প্রথমত যাত্রীদের শ্রীখণ্ড যাওয়ার জন্য ১৫০ টাকা দিয়ে নিজের নাম নথিভুক্ত করাতে হবে। তাদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই এবার আয়োজন করা হচ্ছে জায়গায় জায়গায় সুরক্ষা বাহিনী ও মেডিকেল টিম। ফিট সার্টিফিকেট ছাড়া যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে না এবার থেকে কাউকেই। বরফাবৃত পাহাড়ি রাস্তায় হাঁটার উপযোগী জুতো না থাকলেও যাত্রীরা পাবেন না অনুমতি।