নিজের অভিনীত কোন বাংলা ছবি শর্মিলা ঠাকুরের লিস্টে সব সময় প্রিয়?

অপর্ণা, দয়াময়ী, চম্পা, রেণু, দীপা, টুটুল, মধু, গৌরী, উমা, অদিতি, পুষ্পা, বন্দনা এমন অজস্র নাম মনে রয়ে গিয়েছে দর্শকদের। পরপর বলে গেলে আলাদা করে বলে দিতে হয় না এই নামের মানে। আসলে নাম আলাদা আলাদা হলেও, নামের আড়ালের মানুষটি যে একজনই। সেই হাসি, সেই টোল, সেই চাহনির শর্মিলা ঠাকুর। হিন্দি থেকে বাংলা ছবিতে বারবার জীবন্ত করে তুলেছেন চরিত্রদের।

শর্মিলা ঠাকুর। এই নামটুকুই যথেষ্ট। বলিউডে ম্যাটিলি আইডল, গ্ল্যামার কুইনের শিরোপা পেলেও আজও ‘অপর্ণা’য় মুগ্ধ হয়ে আছে বাঙালি।

sharmila- apu

‘অপুর সংসার’এর অপর্ণাই যখন আবার ‘কাশ্মীর কি কলি’র চম্পা হয়ে উঠল তখন কে বলবে দুজনে এক। সেই মেয়েই আবার হয়ে ওঠে ‘অ্যান ইভনিং ইন প্যারিসের’ সুজি। ‘আরাধনা’র বন্দনা। শর্মিলা বারবার পরীক্ষা-নিরিক্ষা করেছেন নিজের অভিনয় নিয়ে। নানারকম চরিত্রে অভিনয় তারই উদাহরণ। কিন্তু যখনই ছবির ভাষা হয়েছে বাংলা তখন যেন শর্মিলা তছনছের মেয়ে।

নিজের অভিনীত কোন বাংলা ছবি তাঁর সবচেয়ে প্রিয়?

সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ছ’টি বাংলা ছবি আর অভিনীত চরিত্র প্রসঙ্গে বলেছেন তিনি। চেনা নামের বাইরে সিনেমা সমালোচকদের কাছে যথেষ্ট প্রশংসা পেলেও আজ অনেকের কাছেই এইসব ছবি প্রায় অচেনা। কী কী ছবি আছে শর্মিলার লিস্টে?

 

শেষ অঙ্ক (১৯৬০)

রাজকুমার মৈত্রের গল্প এবং হরিদাস ভট্টাচার্যের স্ক্রিনপ্লে দিয়ে তৈরি হয়েছিল শেষ অঙ্ক। ষাটের দশকে অন্যতম সেরা থ্রিলার এই ছবি। উত্তমকুমার, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, বিকাশ রায় প্রমুখ অভিনেতারা ছিলেন। সত্যজিৎ রায়ের দুই ছবির পর শর্মিলা প্রথম পেশাদার অভিনেত্রী হয়ে ওঠেন এই ছবি দিয়েই।

 

 

নির্জন সৈকতে (১৯৬০)

sharmila- nirjan

সমরেশ বসুর গল্প অবলম্বনে তপন সিংহ করেছিলেন ‘নির্জন সৈকতে’। ছায়া দেবী, ভারতী দেবী, রুমা গুহঠাকুরতা, রেণুকা দেবী এবং শর্মিলা- ছবির পাঁচ মহিলা চরিত্রের মধ্যে সর্ব কনিষ্ঠ ছিলেন শর্মিলা। এক তরুণ লেখকের চোখ দিয়ে গোটা ছবিটি দেখেছিল দর্শকরা। কাহিনির সূত্রধর লেখক। সেরা ছবির জাতীয় পুরস্কার পায় এই ছবি। পাঁচ অভিনেত্রী মিলিত ভাবে হন সেরা। ভারতীয় ছবির ইতিহাসে ‘রোড মুভি’র তালিকায় এই ছবি শীর্ষসারির।

এই ছবির সেটেই জয়া ভাদুড়ির সঙ্গে প্রথম আলাপ হয় শর্মিলার।

 

বর্ণালী (১৯৬৩)

বাংলা সিনেমার সর্বকালের সেরা রোমান্টিক ছবির মধ্যে অন্যতম নাম ‘বর্ণালী’। অজয় করের পরিচালনায় এই ছবিতে ফের ফিরেছিল অপু-অপর্ণা জুটি। ছবির স্মৃতি নিয়ে বলতে শর্মিলা বলেন ‘সাদাকালো ছবি বরাবর খুব প্রিয়। এই ছবি মনে হয় কালকের ঘটনা।

ছায়া সূর্য (১৯৬৩)

sharmila- chaya

আশাপূর্ণা দেবীর কাহিনি নির্ভর ছবি ‘ছায়া সূর্য’র শর্মিলা তাঁর অন্য সব ছবির থেকে আলাদা। দূরন্ত সুন্দরী শর্মিলাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না ছবি জুড়ে। বদলে ছবির শুরু থেকে শেষ জুড়ে থাকে এক রোগা কালো জেদি একরোখা ‘ঘেঁটু’। পরিচালক পার্থপ্রতিম চৌধুরী বেছে নিয়েছিলেন শর্মিলাকে। সত্যজিৎ রায়-তপন সিনহা ছিলেন তাঁর মেন্টর কিন্তু এই ছবি করতে গিয়ে পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে একেবারে অন্য অভিজ্ঞতা হল। অনেকটা বন্ধুর মতো।

 

কিনু গোয়ালার গলি (১৯৬৪)

সন্তোষকুমার ঘোষের ছবি নিয়ে তৈরী হয়েছিল ‘কিনু গোয়ালার গলি’। রবি চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনা। এই ছবিতে আবার ফিরেছিলেন শর্মিলা-সৌমিত্র।

 

শুভ মহরৎ (২০০৩)

sharmila- subhomaharat

প্রায় দু’দশক পর ‘আবার অরণ্য’ আর ‘শুভ মহরৎ’ দিয়ে বাংলা ছবিতে ফিরেছিলেন শর্মিলা। মিস মার্পল চরিত্রের অনুকরণে বাংলায় থ্রিলার ‘শুভ মহরৎ’। ঋতুপর্ণ ঘোষের গোয়েন্দা গল্প। গোয়েন্দার ভূমিকায় রাখী গুলজার। বর্ষীয়ান এক অভিনেত্রীর ভূমিকায় শর্মিলা। তাঁর অভিনয়ে দর্শকরা ফিরে পেয়েছিল পুরনো শর্মিলাকে। আর উঠে এসেছিল অবধারিত এক প্রশ্ন- বাংলা ছবিতে কেন বারবার দেখা যায় না তাঁকে?

শর্মিলা বলেন, ‘অনেক দিন ধরে কাজ করতে চেয়েছিলাম ঋতুর সঙ্গে।শেষ পর্যন্ত ‘শুভ মহরৎ’ সম্ভব হয়।’ ছবি দেখে মৃণাল সেন বলেছিলেন এত সুন্দরী ভিলেন আগে কখনও দেখেননি।   

 

তথ্যসূত্রঃ (দ্য টেলিগ্রাফ, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ওপেন দ্য ম্যাগাজিন)

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...