ট্রাম, কলকাতার একসময়ের ঐতিহ্য আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে| আজ তেমনভাবে কলকাতার বুকে কান পাতলে শোনা যায়না ট্রামের ট্রিং ট্রিং শব্দ| তবে আজও শহরের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তাদের একসময় থাকার অস্তিত্ব| শহরের রাস্তায় আজও রয়ে গেছে ট্রামলাইন এবং কিছু জায়গায় চলছেও ট্রাম|
অন্যদিকে শহরের বুকে প্রতিনিয়ত বাড়ছে দূষণের মাত্রা| পরিবেশবিদরা জানাচ্ছেন, মহানগরীর বাতাসকে দূষণমুক্ত করতে হলে গণপরিবহনমাধ্যম হিসেবে আবারও ট্রামের ফিরে আসাটা জরুরি| ট্রামকে শুধু কলকাতার ঐতিহ্য করে রাখলেই চলবে না| পরিবহনের মাধ্যম হিসেবেও তাকে ব্যবহার করতে হবে| শুক্রবার দক্ষিন কলকাতায় পরিবেশকর্মীদের নিয়ে তাদেরই সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’ আয়োজিত একটি বৈঠকে বায়ুদূষণ সংক্রান্ত কথার ফাঁকেই ট্রাম নিয়ে কথা ওঠে| পরিবেশবিদরা জানান, ইতিমধ্যেই শহরে বায়ুদূষণ অত্যন্ত বেশি হয়ে গিয়েছে| এই দূষণ মূলত হচ্ছে যানবাহনের ধোঁয়া, কলকারখানার ধোঁয়া প্রভৃতি থেকে| তাই কলকাতার বুক থেকে দূষণ দূর করতে গেলে আগে উচিত সেখান থেকে ধোঁয়া দূর করা| আর এই ধোঁয়ার বেশিরভাগটাই আসছে প্রাইভেট কারগুলি থেকে| দূষণ রোধ করার জন্য প্রয়োজন প্রাইভেট কার যতটা সম্ভব কম ব্যবহার করা| তার জন্যই বৈদ্যুতিক ট্রামকে আবারও ফিরিয়ে আনার কথা ভাবা দরকার বলে মনে করছেন ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’-এর কর্মকর্তারা|
এর আগে যখন কলকাতার রাস্তায় ট্রাম চলত তখন ট্রামলাইনের উপর কংক্রিটের ঢালাই থাকার কারণে ট্রাম চলার সময় অত্যধিক শব্দ উৎপন্ন হত যা স্বাভাবিকভাবেই কারোর পক্ষেই শ্রুতিমধুর ছিল না| এই নিয়ে নিজে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন তৎকালীন বিচারপতি শ্রী অরুণ মিশ্র| কিন্তু বৈঠকে পরিবেশবিদদের তরফে জানানো হয়, বর্তমানে এমন প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হয়েছে যার ফলে ট্রাম চললেও আগের মতন শব্দ আর পাওয়া যাবে না| বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশবিদদের সাথে সাথে অন্য গুণীজনেরও| তারা তুলে ধরেন কলকাতার রাস্তায় প্রথম ট্রাম চলার ইতিহাসের কথা| সেখানে উপস্থিত ট্রাম সংগঠনের নেতা সুবীরবাবু জানান, বর্তমানে কলকাতায় ৭টি রুটে মোট ৩২টি ট্রাম চলছে| তিনি জানান, ট্রাম কোম্পানির কাছে ২৫০টিরও বেশি ট্রাম রয়েছে| বন্ধের দিন ৫০ থেকে ৫৫ টি ট্রাম চালানো হলেও অন্য সময়ে অল্প ট্রাম চলে বলেই জানান তিনি| শহরের রাস্তায় ট্রামের পুনর্জীবন লাভ হোক চান সকলেই| এর আগে সরকারের তরফ থেকে ট্রামকে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণা করার কথা উঠলেও তা নিয়ে বেশি এগোনো যায়নি বলেই জানা গেছে| তাই এই সময়ে দাঁড়িয়ে যদি আর একবার ফিরয়ে আনা যায় আভিজাত্যে পূর্ণ ট্রামকে, সেইদিকেই তাকিয়ে রয়েছে তিলোত্তমা কলকাতা|