চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ভিকি প্রসাদ বা বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকা ললিতা গুপ্তা- হিরা ম্যাডামের কথা শুনে আপ্লুত। তাদেরকে বই চিনিয়েছেন হিরা ম্যাডাম। বছর ষাটের মালতী তামাং, রিনা রায় দের পড়াশুনো না শেখার দুঃখ ভুলিয়ে দিয়েছেন শিলিগুড়ি পুরনিগমের ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রকাশনগরের বাসিন্দা হিরাদেবী গুরুং।
আদিবাড়ি মিরিক। ৫৫ বছর আগে বিয়ে হয়ে আসেন এই এলাকায়। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পরই স্বামী ছেড়ে চলে যায়। সেই সময়কার দশম শ্রেণী অব্দি পড়াশুনো জানা হিরা দেবী চাকরি পেয়ে যান নার্সের। এলাকার বেশিরভাগ মানুষ পড়াশুনোর ধারে-কাছে ঘেঁষেনা। একা মানুষ। এক পরিকল্পনা করে ফেললেন। এদের সবাইকে পড়িয়ে শিক্ষিত করে তুলবেন তিনি। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। প্রথম ১০ জন শিশুকে ডেকে নিয়ে পড়ানো শুরু করলেন হিরা দেবী। এলাকার মানুষের কথা মাথায় রেখে হিন্দি, বাংলা এবং ইংরিজি তিন ভাষাতেই তিনি পড়ান। আস্তে আস্তে পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়তে লাগল। শুধু ছোটরাই নয়, বয়সের বাধা ভেঙে আসতে লাগল বয়স্করাও। হিরা দেবী হাসিমুখে সকলকে সমান গুরুত্ব দিয়ে পড়াতে লাগলেন।
বর্তমানে তাঁর বয়স ৮০ পেরিয়েছে। চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। কিন্তু এই কাজে বিশ্রাম নেই। এখনও নিজের কাজ করেন সমান যত্ন আর উদ্যম নিয়ে। একসময় গাছতলা, এলাকার একটি খালি জমিতে মাদুর পেতে পাঠশালা চলত। সেই খালি জায়গায় নির্মাণ কাজ শুরু হয়, তবে তাঁর এই উদ্যোগকে সম্মান জানিয়ে স্থানীয় রয়াল ইয়ুথ ক্লাবের সদস্যরা হিরাদেবীর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। একটি ক্লাসরুম করে দেওয়া হয় তাঁর জন্য। রোজ ঘড়ির কাঁটায় আটটা বাজলেই তিনি চক হাতে ক্লাসরুমে ঢুকে পড়েন। ক্লাসরুম থেকে ভেসে আসে, 'গুড মর্নিং ম্যাডাম'। পড়ুয়াদের কেউ ৪০ কেউ বা আবার ১০। হিরাদেবী জানান, তাঁর বাবা বলতেন, পড়াশোনা শেখানো একটা মহৎ ব্যাপার। তাই তিনি যতটুকু জানেন, তার মাধ্যমেই এলাকার মানুষকে শিক্ষিত করে তুলতে চান। প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে এলাকার সকলকে আলোকিত করে তুলছেন তিনি। লোকজন ভালবেসে কখনও চাল, ডাল দেয়, তাই দিয়েই চলে যায় হিরাদেবীর। ওয়ার্ড কাউন্সিলার তথা পুর নিগমের চেয়ারম্যান দিলীপ সিং জানান, হিরাদেবী নিঃশব্দে সমাজের জন্য কাজ করে চলেছেন। ওঁর আর্থিক সুরাহা যাতে হয়, পুরনিগমের তরফে সেই ব্যাপারে নজর দেওয়া হবে।