বিছানায় উঠে ঘুম বাঘমামার

চারদিক জল থই থই, আপাতত কাজকম্মো কিছুই নেই।এমত অবস্থায় দাঁড়িয়ে ঘুম তো পাবেই। আর ঘুম পেলে সবার আগে যে জিনিসটির প্রয়োজন পরে তা হলো নরম তুলতুলে একটি বিছানা।অলস দুপুরে চোখের সামনে বিছানা থাকতে আর কি অন্য ভাবনা চিন্তা মাথায় আসে বলুন? আপনি হলে কি করতেন? অলস দুপুরে হয় একটা বই হাতে নিতেন কিংবা কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতেন সেই নরম বিছানায় গা এলিয়ে! তাই তো? তাহলে বাঘমামার দোষ কোথায়? তার কি একটু বিছানায় শুতে ইচ্ছে করে না? বেচারা একদিন একটু বিছানায় উঠে শুতে গেলো আর অমনি নাকি ভাইরাল হয়ে গেলো। আচ্ছা সে বেচারাই বা কি করবে বলুন? একে তো চারদিক জলমগ্ন, অলস দুপুরে কাজও নেই। তাই সে ভেবেছিলো একটু বিছানায় গা তা এলিয়ে দেওয়াই যাক....

কি ভাবছেন? এসব কি বলছি? না, এতক্ষনে আপনারা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের দৌলতে বাঘমামার বিছানায় উঠে ঘুমানোর ভিডিও নিশ্চই দেখেই ফেলেছেন।ঘটনাটি তাহলে বিস্তারিতভাবেই বলা যাক।ঘটনাটি ঘটেছে আসামে।সেখানে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে কাজিরাঙার বাগরি রেঞ্জের কাছে নিজের দোকানের ভিতরে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন মতিলাল নামক একজন দোকানদার। সেইসময় তিনি চিৎকার শুনতে পান, "বাঘ! বাঘ!"। হতচকিত হয়ে বাইরে আসতেই চক্ষু চড়কগাছ! মতিলালবাবু দেখেন তার দিকেই ধীর গতিতে এগিয়ে আসছে একটি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। প্রাণভয়ে পালতে যাবেন সেই সময় তিনি খেয়াল করেন তিনি যে দাঁড়িয়ে রয়েছেন সেই দিকে মোটেও খেয়াল নেই সেই বাঘমামার। সে নিজের ছন্দেই হেঁটে চলেছে ঘরের উদ্দেশ্যে। তিনি খেয়াল করেন বাঘটি যথেষ্ট ক্লান্ত। কিন্তু তখন সেখানে উপস্থিত মানুষজন বুঝতে পারেননি যে বাঘটি ঠিক করতে চাইছে। উপস্থিত মানুষজনের দিকে বিন্দুমাত্র দৃষ্টিপাত না করে সেই বাঘ সোজা প্রবেশ করে দোকানের ভিতরে। ঢুকেই একলাফে সোজা খাটের উপর! আর ক্লান্ত শরীর নিয়ে খাটে উঠলে কি আর চোখ খোলা রাখা যায়? বাঘমামাও পারেনি। সোজা পাড়ি দিয়েছেন তিনি ঘুমের দেশে। টানা দশ ঘন্টা সেখানে বিশ্রাম নিয়েছেন তিনি।

জানা গেছে, কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান থেকে বন্যার কারণে কোনোভাবে বেরিয়ে আসে এই বাঘটি।মতিলালবাবু সময় নষ্ট না করে খবর দেন বনদফতরে। বাঘমামার বিশ্রামের পালা শেষ হলে সে যাতে নিশ্চিন্তে আবার পার্কে ফিরে যেতে পারে তার জন্য সঠিক বন্দোবস্ত করার ব্যবস্থা করা হয়। প্রথমেই বনদফতরের কর্মীরা সেখানে ভিড় করে থাকা অত্যুৎসাহী জনতাকে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। তারপর সেখানে উপস্থিত হন বন্যপ্রাণী পুনর্বাসন এবং সংরক্ষণের কর্মীরা। তারাই জানান, বাঘটি বন্যার জল থেকে বাঁচতে কোনো একটি উঁচু জায়গায় যেতে চাইছিলো। সেই কারণেই সে রাস্তা পেরিয়ে লোকালয়ে এসে ঢুকে পড়ে। রাস্তায় যানবাহনের প্রাচুর্য্য এবং মানুষের অত্যধিক ভিড় থেকে বাঁচতে সে আশ্রয় নেয় একটি দোকানের ভিতরে এবং ক্লান্ত থাকার দরুন সে বিশ্রামের জায়গা হিসেবে বেছে নেয় সেই দোকানের ভিতরে থাকা খাটটিকে।বনদফতর থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বাঘটিকে নিরাপদ আশ্রয়ে ফেরানোর জন্য তাদের কাছে রয়েছে দুটি পরিকল্পনা। প্রথম পরিকল্পনা অনুযায়ী বাঘটির জন্য একটি নিরাপদ প্যাসেজ তৈরী করা হবে যেটি ব্যবহার করে বাঘটি নিজেই পার্কে ফিরে যেতে পারবে।আর এই পদ্ধতি যদি বিফলে যায় সেই ক্ষেত্রে ঘুমপাড়ানি গুলির ব্যবহার করা হতে পারে।দোকানের বাইরে গার্ডের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। যাতে উৎসাহী জনতা সেখানে ভিড় করে না থাকতে পারে তার জন্যই এই গার্ডের ব্যবস্থা, জানান বনদফতর।

মতিলালবাবুর মতে, এই ঘটনাটি তার কাছে একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা।তার ঘরে নতুন অতিথি পেয়ে বেজায় খুশি তিনি। তিনিও জানান, তার অতিথিকে নিরাপদে ঘরে ফেরানোর জন্য বনদফতর যা করছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।আপাতত খাটে বসা বাঘকে নিয়েই মজে রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। সকলের মুখে এক কথা, বাঘ বলে কি একটু রিলাক্স করতে নেই?

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...