আমাদের শরীরের শ্বাসনালীর সামনের দিকে অবস্থান করা ছোট একটি গ্রন্থি হলো থাইরয়েড গ্রন্থি। এই গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন শরীরের নানা কাজে লেগে থাকে যেমন বিপাক ক্রিয়া, বাচ্চাদের স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা, বয়ঃসন্ধি প্রভৃতি নিয়ন্ত্রিত হয় থাইরয়েড নিঃসৃত হরমোনের প্রভাবে। থাইরয়েড হরমোন মূলত দুই প্রকারের হয়ে থাকে, ট্রাইআয়োডোথাইরোনিন (টি ৩) এবং থাইরক্সিন (টি ৪)। এই দুই হরমোনের প্রভাবেই শরীরের মেটাবলিসম রেগুলেট হয়ে থাকে। এই হরমোন দুটি শরীরে একটি নির্দিষ্ট পরিমানে দরকার পড়ে। এর থেকে পরিমানে বেড়ে গেলে বা কমে গেলে সৃষ্টি হয় নানা সমস্যার। চলুন আজ থাইরয়েড থেকে হওয়া সমস্যা গুলি নিয়ে আলোচনা করা যাক....
থাইরয়েডের ফলে যে দুটি রোগ হয় তা হলো, হাইপার-থাইরয়ডিজম এবং হাইপো-থাইরয়ডিজম। থাইরয়েড থেকে পর্যাপ্ত পরিমানের থেকে বেশি পরিমান হরমোন নিঃসৃত হলে সেই কন্ডিশনকে বলা হয় হাইপার-থাইরয়ডিজম এবং প্রয়োজনের তুলনায় কম হরমোন নিঃসৃত হলে সেই কন্ডিশনকে বলা হয় হাইপো-থাইরয়ডিজম। দুই ক্ষেত্রেই শরীরে তৈরী হয় নানা সমস্যা। স্থুলত্ব এসে যাওয়া কিংবা শীর্ণকায় হয়ে যাওয়া এই দুই ক্ষেত্রেরই মূল লক্ষণ বলা যেতে পারে।
হাইপো-থাইরয়ডিজম-এর ক্ষেত্রে অর্থাৎ হরমোন নিঃসরণ কমে গেলে দুর্বলতা, ওজন বেড়ে যাওয়া, ঠান্ডা বেশি লাগা, গায়ে হাত পায়ে বিশেষ করে জয়েন্টগুলিতে ব্যাথার অনুভূতি, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া প্রভৃতি দেখা দিতে পারে। অন্যদিকে, হাইপার-থাইরয়ডিজম অর্থাৎ হরমোন ক্ষরণ বেড়ে গেলে ক্লান্তি, চুল পড়ে যাওয়া, মিক্সিডিমা, স্মৃতি বিস্মরণ, স্বরের পরিবর্তন প্রভৃতি সমস্যা হতে পারে। কিন্তু থাইরয়েড কেন হয়? থাইরয়েড নানা কারণে হতে পারে যেমন, খাবারে আয়োডিনের পরিমান কমে গেলে থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও আগে কখনো থাইরয়েড অপারেশন হলে পরবর্তীকালে তার থাইরয়েডের সমস্যায় আবারো আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। বাঁধাকপি, পুঁইশাক, ব্রকোলি প্রভৃতি খাদ্য বেশি পরিমানে খেলেও থাইরয়েডের সমস্যা হতে পারে। তাই চিকিৎসকেরা থাইরয়েড রোগীদের এইসব খাবার খেতে বারণ করে থাকেন।
গর্ভাবস্থায় থাইরয়েড টেস্ট করানো অত্যন্ত দরকারি কারণ গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে থাইরয়েডের পরিমান একদম সঠিক থাকা উচিত। কারণ মায়ের শরীরে উপস্থিত থাইরোটেড হরমোনের প্রভাবেই শিশুর মস্তিষ্কের উন্নতি হয়ে থাকে। একাহার, গর্ভবতী হওয়ার পরে শরীরে থাইরয়েড হরমোনের চাহিদা বেড়ে যায়। তাই এইসময় থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে বেশি পরিমানে হরমোন নিঃসৃত হতে থাকে। এছাড়া খাবারের সাথে প্রয়োজনীয় আয়োডিন শরীরে প্রবেশ না করলেও থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দেয় শরীরে।
এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক থাইরয়েডের সমস্যা হলে কি জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত.....
১) হাইপো-থাইরয়ডিজমের ক্ষেত্রে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত মাছ অর্থাৎ সামুদ্রিক মাছ বেশি করে খাওয়া উচিত।
২) হাইপো-থাইরয়ডিজমের ক্ষেত্রে ভালো প্রজাতির সমুদ্র শৈবাল অর্থাৎ সি উইড খাওয়া উচিত| এতে থাকে প্রচুর পরিমানে আয়োডিন যা শরীরে আয়োডিনের ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে থাকে|
৩) হাইপো-থাইরয়ডিজমের ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমানে জল খাওয়া উচিত| কষ্কাথিনের সমস্যা দূর করার জন্য জলের পরিমান সবসময় ঠিক রাখা উচিত| এই সময় ট্যাপের জল এড়িয়ে চলা উচিত| ট্যাপের জলে থাকে ফ্লুওরিন আর ক্লোরিন যা শরীরের আয়োডিন শোষনের পরিমান কমিয়ে দেয়|
৪) হাইপার-থাইরয়ডিজমের ক্ষেত্রে সবুজ সবজির রস, কাঁচা খেতে পারলে উপকার পাওয়া যায়|
৫) বাইরের খাবার এবং প্যাকেট করা খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত| তার জায়গায় প্রচুর পরিমানে ফ্রেশ ফল এবং শাকসব্জি খাওয়া উচিত|
৬) আদা হাইপার-থাইরয়ডিজমের ক্ষেত্রে খুব ভালো ফল দেয়|
শরীর থাকলেই তা অসুস্থ হবে| আর তার জন্য আমাদের উচিৎ ভালোমন্দ খাবার খেয়ে শরীরকে সুস্থ রাখা। থাইরয়েডের সমস্যায় অনেকেই ছোটবেলা থেকে ভুগে থাকেন। এই রোগের বিশেষ চিকিৎসাও আছে। তাই শরীরে যদি এই রোগ হানা দেয় তাহলে চিন্তার কিছু নেই। প্রপার ডায়েট মেনে চললেই আর নিয়মিত ওষুধ খেলেই নিয়ন্ত্রণে থাকবে এই অসুখ|