গত সোমবার সন্ধ্যায় তিন ঘণ্টার তুমুল ঝড়বৃষ্টির কবলে পড়েছিল গোটা কলকাতা শহর। সঙ্গে চলছিল বজ্রপাত।
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছেন যে এদিন শুধু কলকাতা শহরেই পড়েছে ৪৫টি বাজ! হ্যাঁ একদমই ঠিক। তবে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত হতাহতের কোনও খবর মেলেনি। তাহলে কি এই বছর এই বজ্রপাতের বিপদ আরও বাড়বে? অন্যবারের থেকে মৃত্যুর পরিসংখ্যান কি ছাপিয়ে যাবে চলতি বছর? উঠছে এমন ধরণের বহু প্রশ্ন।
এই বিষয়ে আশঙ্কা বাড়িয়ে পুলিশ জানিয়েছেন যে ২০১৯ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে রাজ্যে বজ্রপাত মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছিল প্রায় ৯৯ শতাংশ। এরপর ২০২৩ সালেও বাংলায় বজ্রপাতে মৃত্যু হয় ২৮ জনের। বাদ যায়নি কলকাতা শহরও।
পরিস্থিতিতে বজ্রপাতের আশঙ্কার কথা প্রকাশ্যে আসার পর কিছু ব্যবস্থা কী নিচ্ছে পুলিশ-প্রশাসন? বজ্রগর্ভ মেঘের সঙ্গে বৃষ্টিপাতের সময়ে ফাঁকা জায়গা এড়িয়ে চলতে হবে— এটুকু প্রচার করেই তাঁদের কাজ শেষ! এমনই অভিযোগ উঠছে। বজ্রপাতের আগাম অনুমান করে সতর্ক করার মতো পরিকাঠামো তৈরি হয়নি এখনও। এই বিষয়ে কয়েক বছর আগে আন্তর্জাতিক একটি সংস্থার সঙ্গে যৌথ ভাবে ‘লাইটনিং সেন্সর’ ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে অনেক সময়ে সেই সূত্রে খবর বজ্রপাতের মাত্র দশ মিনিট আগে আসছে। আর তাই কোনওরকম প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না।
এই বিষয়ে আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা হাবিবুর রহমান বিশ্বাস জানিয়েছেন যে সোম-মঙ্গলবারে বজ্রগর্ভ মেঘ-সহ ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। বুধ-বৃহস্পতিবার কিছুটা কম হলেও শুক্রবার আবার ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এমনিতেই কালবৈশাখীর সময়। ফলে, বজ্রপাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েই আছে।
এছাড়া বাড়তি সতর্ক জানাচ্ছে আবহাওয়া দফতর। তাঁরা জানাচ্ছে যে এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে উঁচু বাড়ি, বহুতল বা গাছের আশপাশ থেকে সরে আসতে হবে, এবং দ্রুত কোনও পাকা ছাদের নীচে আশ্রয় নিতে হবে। এছাড়া শৌচাগার বা বেসিনের ধাতব কল থেকেও বিপদ হতে পারে। ফলে দূরে থাকতে হবে। বাড়িতে লোহার জানলা থাকলে তার সামনে থেকেও সরে আসা উচিত। মাটিতে শোয়া নিষিদ্ধ, ফলে দরকারে খাটে শোয়া যেতে পারে।
তাঁরা আরও জানিয়েছেন যে এই বৃষ্টিতে ভেজার নামে বা বৃষ্টির ছবি তুলতে ছাদে উঠে মোবাইল না ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া কোনও ফাঁকা জায়গায় থাকলে মাটিতেই হাঁটু মুড়ে বসে পড়তে হবে, যাতে আশপাশের কোনও কিছুর থেকে নিজের উচ্চতা বেশি না হয়। বজ্রাঘাতে আহত কাউকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে বলে জানিয়েছে লালবাজার।