বজ্রপাত থেকে বাঁচতে বজ্রনিরোধক স্তম্ভ তৈরীর পরামর্শ

কলকাতায় বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন বিশ্বউষ্ণায়ন এবং পরিবেশে ওজন স্তরে ক্ষয় হওয়ার জন্য বজ্রপাতের হার বাড়ছে। এ ছাড়াও গাড়ির থেকে তৈরী দূষণ, কলকাতার রাজপথে খাবারের দোকানের জ্বালানি থেকেও যে পরিমান দূষণ হচ্ছে তার ফলেই বজ্রপাতের ঘটনা বাড়ছে। তবে এর হাত থেকে রক্ষা পেতে কিছু উপায়ও আছে বলে বিজ্ঞানীদের মত। তাঁরা বলছেন, যে সব জায়গায় বহু মানুষের সমাগম হয় সেখানে বজ্রনিরোধক স্তম্ভ তৈরী করে তাতে আর্থিং এর ব্যবস্থা করলে বজ্রপাতে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কলকাতার সব জায়গায় এই বজ্রনিরোধক স্তম্ভ এখনও নেই, তবে সাম্প্রতিককালে বজ্রপাতের হার বাড়ার ফলে কলকাতা পুরসভা কিছু কিছু জায়গায় বজ্রনিরোধক স্তম্ভ তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছে ।

কেন বজ্রপাতের পরিমান বেড়ে যাচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তরে পরিবেশবিদ সৌমেন্দ্র মোহন ঘোষ জানিয়েছেন, "শুধু বিশ্বউষ্ণায়ণই নয়, গাড়ির ধোঁয়া ও নির্মাণ কাজের ফলে বাতাসে 'এরোসল' নামের এক ধরণের ধাতব কনা মিশছে। এই এরোসল এর মধ্যে এক ধরণের বিষাক্ত রাসায়নিক থাকে, যা বাতাসে মিশলে বজ্রপাতের হার বেড়ে যায়। পরিবেশে এই এরোসল এর পরিমান রোজই বাড়ছে। ফলে আগে বর্ষাকালে যদি ১০০ টা বাজ পড়তো এখন সেই সংখ্যাটা বেড়ে ১৫০ থেকে ২০০ র কাছাকাছি হয়েছে। আগামী দিনে বজ্রপাতের সংখ্যা আরও বাড়তে চলেছে। তাই একদিকে বিশ্বউষ্ণায়ন আর অন্য দিকে বাতাসে ভাসমান কনা বাড়ার ফলে বজ্রপাতের হার বাড়ছে।"

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রাক্তন অধ্যাপক প্রবীর কুমার বসু জানান," জলীয় বাষ্প যখন উপরে ওঠে তখন তা ট্রপস্ফিয়ার এ মেশে। ট্রপস্ফিয়ার হচ্ছে বায়ুমণ্ডলের শীতলতম অঞ্চল। এখানে জলীয় বাষ্প বরফে পরিণত হয়। এই বরফই আবার মেঘে পরিণত হয়ে ভারী হয়ে নিচের দিকে নেমে আসে। বায়ুমণ্ডলের আবার আপার স্ফিয়ার ও লোয়ার স্ফিয়ার আছে। আপার স্ফিয়ার ধনাত্বক তড়িৎ আধান যুক্তলোয়ার স্ফিয়ার ঋণাত্মক তড়িৎ আধান যুক্ত অবস্থায় থাকে। তাই মেঘ যখন নিচ থেকে ওপরে ওঠে তখন সে ঋণাত্মক আধান যুক্ত অবস্থায় থাকে, আবার ভারী ও ওপর থেকে যে মেঘ নিচে নেমে আসে সেই মেঘ পজিটিভলি চার্জড বা ধনাত্মক আধান যুক্ত অবস্থায় থাকে। এই ওঠা নামার সময় উভয় মেঘের মধ্যে সংঘর্ষ হয় তখন ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আধান যুক্ত মেঘের সংঘৰ্ষ হয়, তার ফলে স্থির তড়িৎ উৎপন্ন হয়,যা বজ্রপাতে পরিণত হয়ে ভূমিতে নেমে আসে। পৃথিবীতে পার্টিকুলেট ম্যাটার রোজই অনেক বেড়ে যাওয়ার জন্য এখন বজ্রপাতের হার বেড়ে চলেছে।"

তবে এর থেকে বাঁচার কোনো উপায় যে নেই তা নয়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর অধ্যাপক সাধন কুমার ঘোষ জানান, "খেলার মাঠে, জনবহুল এলাকাতে, দর্শনীয় জায়গাতে বজ্রনিরোধক স্তম্ভ তৈরী করলে বজ্রপাতের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।" কী এই বজ্রনিরোধক স্তম্ভ? এই প্রশ্নের উত্তরে সাধন বাবু জানান, "এটা হলো এক ধরণের আর্থিং ব্যবস্থা। যেখানে বজ্রনিরোধক স্তম্ভ বসানো হবে সেই জায়গার আয়তনের উপর নির্ভর করে স্থির হবে স্তম্ভ কতটা উঁচু করতে হবে। এই স্তম্ভের সঙ্গে আর্থিং ব্যবস্থা সংযুক্ত করে দিলেই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। বজ্রনিরোধক স্তম্ভ যে জায়গায় বসানো হবে সেখানে বজ্রপাত হলে তার থেকে উৎপন্ন বিদ্যুৎ ওই বজ্রনিরোধক স্তম্ভ টেনে নেবে। ফলে বজ্রপাতে প্রাণহানির সম্ভাবনা হ্রাস পাবে বা থাকবে না।"

কলকাতা পুরসভা ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি জায়গায় বজ্রনিরোধক স্তম্ভ বসিয়েছে। কলকাতা পুরসভার তরফে আরো বজ্রনিরোধক স্তম্ভ বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কলকাতার খেলার মাঠগুলোতে বজ্রনিরোধক স্তম্ভ বসানোর সুপারিশ করছেন পরিবেশবিদরা। এছাড়াও কলকাতার স্টেডিয়ামগুলোতেও যাতে বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা চালু করা যায় সেদিকে নজর দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষর কাছে আবেদন করছেন পরিবেশবিদরা।

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...