বোয়াল মাছের ভাঙা ও কিমার খিচুড়ির সহজ রেসিপি

শীতের খাইখাই

শীত মানেই কী খাই, কী খাই। নিতান্ত পেটরোগা বাঙালিও এই সময় সুখাদ্যের টান এড়াতে পারে না। তাই শীত স্পেশাল কিছু রান্না রইল আজকের রেসিপিতে।

মূলো খড়খড়ি

কী কী লাগবে

মূলো-৫০০ গ্রাম

নারকেল- আধ মালা

সাদা তিল-৫০ গ্রাম

হলুদ গুঁড়ো-২ চা চামচ

লঙ্কা গুঁড়ো- আন্দাজমতো

কালোজিরে-ফোড়নের জন্য

সরষে- ফোড়নের জন্য

শুকনো লঙ্কা- ৩টে

কাঁচালঙ্কা-৩-৪ টে

সর্ষের তেল-রাঁধবার জন্য

চিনি-স্বাদ অনুযায়ী

নুন-স্বাদ অনুযায়ী

কীভাবে রাঁধতে হবে

মূলো খোসা ছাড়িয়ে সরু সরু করে কেটে নিতে হবে। নারকেল কুড়িয়ে রাখতে হবে। সাদা তিল ভালোভাবে ধুয়ে বেটে নিতে হবে। কড়াই গ্যাসে বসিয়ে তেল দিয়ে গরম করে কালোজিরে, সর্ষে ও শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিয়ে কুচিয়ে রাখা মূলো দিয়ে নাড়াচাড়া করে কাঁচা লঙ্কা , হলুদগুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো, নুন আর চিনি দিয়ে গ্যাস কমিয়ে কিছুক্ষণ রাখতে হবে। মূলো তাজা ও কচি হলে মূলো থেকে বেরোনো জলেই মূলো সেদ্ধ হয়ে যাবে। মূলোর জল কম বের হলে অল্প জল দিতে হবে। মূলো সেদ্ধ হয়ে এলে নারকেল কোরা দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়তে হবে। তারপর তিলবাটা দিয়ে বেশ করে শুকিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে মূলো খড়খড়ি। খাবার জন্য অবশ্যই চাই ধোঁয়া ওঠা ভাত।

বোয়াল মাছের ভাঙা

“আয় রে আয় টিয়ে/ নায়ে ভরা দিয়ে/ না নিয়ে গেল বোয়াল মাছে/ তাই না দেখে ভোঁদর নাচে”- ছড়াটি কে না শুনেছে! বিশালাকায় এই মাছটির স্বাদ শীতে বৃদ্ধি পায়। হারিয়ে যাওয়া রান্নায় আজ তাই শীতের বেগুন দিয়ে শীতের বোয়ালের স্পেশাল পদ বোয়াল মাছের ভাঙা।

কী কী লাগবে

বোয়াল মাছ-৫০০ গ্রাম

আলু-২৫০ গ্রাম

বেগুন-৩০০ গ্রাম

আদা-৫০ গ্রাম

হলুদ গুঁড়ো-২ চা চামচ

লঙ্কা গুঁড়ো-আন্দাজমতো

শুলপো শাক- আধ আঁটি

সর্ষের তেল- রাঁধবার জন্য

কাঁচালঙ্কা-৩-৪ টে

তেজপাতা-৪-৫টা

মেথি-ফোড়নের জন্য

কালোজিরে-ফোড়নের জন্য

নুন-স্বাদ অনুযায়ী

কীভাবে রাঁধতে হবে

মাছ ভালভাবে ধুয়ে নুন হলুদ মাখিয়ে রাখতে হবে। আলু খোসা ছাড়িয়ে ধুয়ে নিয়ে ছোট ছোট ডুমো করে কেটে নিতে হবে। বেগুন ধুয়ে নিয়ে আলুর চেয়ে বড় আকারে টুকরো করে কাটতে হবে। আদা বেটে নিতে হবে।শুলফা শাক ধুয়ে কুচিয়ে রাখতে হবে। কড়াইতে সর্ষের তেল দিয়ে গরম করে মাছ ভেজে নিতে হবে।ভাজা খুব কড়া বা হালকা হবে না। তেল কমে এলে তেল দিয়ে গরম করে শুকনো লঙ্কা আর মেথি ও কালোজিরে ফোড়ন দিয়ে আলু ও বেগুন ভেজে নিতে হবে। ভাজা বেগুন তুলে রেখে ভাজা আলুর ওপরে হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো,  নুন আর কাঁচালঙ্কা দিয়ে জল দিয়ে গ্যাস কমিয়ে ঢাকা দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে আলু নরম হয়ে এলে ভাজা মাছ, আদাবাটা আর ভাজা বেগুন দিয়ে অল্প জল দিতে হবে। মাছ একটু নরম হলে হাতার পেছন দিয়ে ভেঙে দিতে হবে। শুলপো শাক দিয়ে মিশিয়ে অল্প ঝোল থাকা অবস্থায় নামালেই তৈরি হয়ে যাবে বোয়াল মাছের ভাঙা। খেতে হবে গরম ভাতের সঙ্গে।

কিমার খিচুড়ি

“আদা কাসন্দা দিয়া করিবা খিচুড়ি”- ‘মনসামঙ্গল’ কাব্যে স্বয়ং শিব বলেছিলেন পার্বতীকে। বাংলার গ্রামীণ জনজীবন থেকে মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীর, আকবর এমনকি ঔরঙ্গজেবও খিচুড়ির স্বাদে মুগ্ধ ছিলেন। ভারতে ডাল এসেছিল মধ্যযুগে-প্রথমে উত্তর ভারতে পরে বাংলায়। মোগল পাকশালাতেই সম্ভবতঃ নিরামিষের আগল সরিয়ে খিচুড়িতে যুক্ত হল আমিষ- ডিম, মাছ, মাংস। মোগল দরবারের সেই হারানো সুবাসের ছোঁয়া রইল আজকের রেসিপিতে।

কী কী লাগবে

বাসমতী চাল-৩০০ গ্রাম

মুসুরির ডাল-৩০০ গ্রাম

পাঁঠার মাংসের কিমা-২৫০গ্রাম

ভিনিগার-১ টেবিল চামচ

আদা-৫০ গ্রাম

পেঁয়াজ-৩০০ গ্রাম

হলুদ গুঁড়ো-২ চা চামচ

লঙ্কা গুঁড়ো- আন্দাজমতো

গোটা গরমমশলা-ছোট এলাচ-৫-৬টা, দারচিনি-৫-৬টা, লবঙ্গ -৩-৪টে

গরমমশলাগুঁড়ো- আন্দাজমতো

কাঁচালঙ্কা-৪-৫টা

রসুন-৫-৬কোয়া

চিনি-সামান্য

নুন-স্বাদ অনুযায়ী

ঘি-২০০ গ্রাম

কীভাবে রাঁধতে হবে

প্রথমে এক ডেকচি জল গরম করে নিতে হবে।রান্নায় এই জলই ব্যবহার করতে হবে। মাংসের কিমা ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। অর্ধেক পেঁয়াজ সরু সরু করে কেটে নিতে হবে। বাকি অর্ধেক পেঁয়াজ বেটে রাখতে হবে। পেঁয়াজবাটা, ভিনিগার, আদাবাটা আর নুন দিয়ে কিমা মেখে রাখতে হবে। চাল ও ডাল ভালো করে ধুয়ে জল ঝরিয়ে নিতে হবে। গ্যাসে কড়াই বসিয়ে অর্ধেক ঘি দিয়ে গোটা গরমমশলা ফোড়ন দিয়ে চাল দিয়ে একটু ভেজে নিয়ে মুসুরির ভাল দিয়ে নাড়াচাড়া করে তুলে রাখতে হবে। কড়াই পরিষ্কার করে বাকি ঘি দিয়ে তেজপাতা ফোড়ন দিয়ে মশলা শুদ্ধু কিমা গেলে ভালোভাবে কষতে হবে। দুটো কাঁচালঙ্কা চিরে দিয়ে ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে মাংস কষিয়ে নিয়ে ভাজা চাল আর ডাল দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে আন্দাজমতো নুন আর চিনি দিয়ে বাকি কাঁচালঙ্কা দিয়ে জল দিয়ে আঁচ কিছুটা কমিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। কিছুক্ষণ পরে ঢাকা খুলে দেখতে হবে মাংস সেদ্ধ হল কি না। প্রয়োজন মনে হলে দমে রাখতে হবে। নামানোর সময় ঘি আর গরমমশলা গুঁড়ো ছড়িয়ে নামিয়ে নিলেই তৈরি কিমার খিচুড়ি। শীতের দুপুরে বা রাতে সবসময়েই যা লা জবাব। পাঁঠার মাংস যারা খান না তারা মুরগির কিমা দিয়েও এই রান্নাটি করতে পারেন।পুরো রান্নাটা ঘি দিয়ে না করে সর্ষের তেল দিয়ে খিচুড়ি করে ওপরে ঘি ছড়ানোও যেতে পারে। যেভাবেই করা হোক না কেন অতীত দিনের সুবাসে রসনার পাশাপাশি প্রাণও আকুল হয়ে উঠবে, উঠবেই।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...