হাবসী শাসকের বিজয় স্মারক এই মিনার

                                      মালদা জেলায় ভারত এবং বাংলাদেশের সীমান্তে  এক ঐতিহাসিক শহর রয়েছে  যা ছিল বঙ্গের  প্রথম স্বাধীন রাজা  শশাঙ্কের রাজধানী - গৌড় যদিও এর কিছুটা অংশ আছে বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাতে। কিন্তু ইতিহাসের স্মৃতি বিজড়িত এই শহর বড়ো সোনা মসজিদ, দাখিল দরোয়াজা, লোটন মসজিদ, চিকা মসজিদের মতো বিখ্যাত সব স্থাপত্যের জন্য পর্যটক কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।   এর মধ্যেই মালদা রেল স্টেশন থেকে ১৭ কিলোমিটার এবং দাখিল দরোয়াজা থেকে মোটামুটি এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কুতুব মিনারের মতো দেখতে   ফিরোজ মিনার এক অন্যতম স্থাপত্য। তুঘলকি শৈলীতে নির্মিত পাঁচ তলা এই মিনারের দেওয়াল জুড়ে আছে পোড়ামাটির কাজ।

                                      এই মিনারটি  বিজয় মিনার হিসেবে ১৪৮৮ থেকে  ১৪৮৯ সালে  হাবসি সুলতান সাইফুদ্দিন ফিরোজ শাহ  নির্মাণ করিয়েছিলেন।   হাবসি শাসনকালে তিনিই ছিলেন শ্রেষ্ঠ সুলতান রাজত্ব করেছিলেন ১৪৮৭ থেকে ১৪৯০ সাল পর্যন্ত। যদিও  এই  ফিরোজ শাহ বাংলায় হাবসি শাসনের প্রতিষ্ঠাতা বারবক শাহকে হত্যা করেন। তাঁর আসল নাম ছিল মালিক আনদিল ইলিয়াস শাহি বংশের শেষ সুলতান জালালউদ্দিন ফতে শাহর নাবালক ছেলেকে সিংহাসনে বসাতে চেয়েছিলেন তিনি।   কিন্তু  ফতে শাহর বিধবা স্ত্রী তাতে সম্মত না হওয়ায় তিনি নিজেই সাইফুদ্দিন ফিরোজ শাহ নাম নিয়ে বাংলার সিংহাসনে বসেন। এই মিনার থেকে পরে মাজানা বা আজান দেওয়া হতো। এই মিনার চিরাগ মিনার, পির আশা মিনার নামেও এটি পরিচিত।

                   

                                             এই মিনার নিয়ে লোকমুখে  একটি আশ্চর্য গল্পের প্রচলন আছে। মিনারটি প্রথমে এত উঁচু ছিল না। মিনার তৈরির সময়  সুলতান ফিরোজ শাহ কাজ দেখতে গিয়ে মিনারের উচ্চতা দেখে বিরক্ত হন।   মিস্ত্রিকে জিজ্ঞেস  করে জানতে পারেন যে মিনার আরো  উঁচু হওয়া সম্ভব। কিন্তু  মিস্ত্রি  তা না  করায় সুলতান রেগে  গিয়ে  সেই মিস্ত্রিকে মিনারে চূড়া থেকে নিচে ফেলে দেওয়ার আদেশ দিলেন। মিস্ত্রিকে প্রাণ হারাতে হল।

                                                  সুলতান মিনার থেকে নেমে পরিচারক হিঙ্গাকে মোরগাঁও  যাওয়ার  হুকুম  দেন - যদিও কারণ জানান নি। সঙ্গে  হিঙ্গাও মালিকের আদেশ মান্য করে সেখানে যান।  সেখানে   হিঙ্গার সাথে সাক্ষাৎ হয় সনাতন নামে ব্রাহ্মণ যুবকের।   হিঙ্গার সমস্যার কথা শুনে সে  মোরগাঁও থেকে দক্ষ রাজমিস্ত্রি নিয়ে সুলতানের কাছে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিলেন। কারণ মোরগাঁও ছিল রাজমিস্ত্রিদের জন্য বিখ্যাত। সনাতনের কথামতো রাজমিস্ত্রি নিয়ে হিঙ্গা সুলতানের কাছে হাজির হয়ে  সুলতান কে সনাতনের কথা জানান। সুলতান সাইফুদ্দিন ফিরোজ শাহ তখন সনাতনকে রাজ দরবারের এক উঁচু পদে নিয়োগ করলেন তাঁকে। তারপর  সমাপ্তি  হলো এই  ফিরোজ মিনার নির্মাণ। আজও তা অমলিন হয়ে সেই  সাক্ষ্য  বয়ে চলেছে।

 

                                    

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...