১১ টাকা গুরুদক্ষিণায় ছাত্রছাত্রীদের সিভিল সার্ভিসের পাঠ দেন বিহারের এই শিক্ষক

কথায় বলে যিনি আদর্শ শিক্ষক তিনি সাধারণ ছাত্রকেও অসাধারণ করে তুলতে পারেন। এই প্রবাদের চাক্ষুস উদাহরণ গুরু রহমান। বিহার রাজ্যের বহু ছাত্রছাত্রীর জীবন বদলের নেপথ্য কারিগর তিনি। আসল নাম ডঃ মতিউর রহমান খান’। তাঁর ছাত্রছাত্রীদের কাছে তিনি গুরু রহমান।

পাটনা শহরে দিনের পর দিন তিনি ছাত্রছাত্রীদের মাত্র ১১ টাকার বিনিময়ে আইপিএস এবং ইউপিএসসি, আইএএস পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার পাঠ দিচ্ছেন। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা কঠিনতম পরীক্ষাগুলির একটি। তার প্রস্তুতিও সহজ ব্যাপার নয়, মেধার সঙ্গে লাগে প্রচন্ড অধ্যাবসায় এবং হাল না ছাড়ার মনের জোর- এই তিন দিয়েই ছাত্রছাত্রীদের গড়ে তুলছেন এই শিক্ষক।

১৯৯৪ সাল শিক্ষক হিসেবে নিজের জীবন শুরু করেছিলেন। প্রচণ্ড অভাবের মধ্যে দিয়ে কেটেছিল ছোটবেলা। বাবা ছিলেন পুলিশ ইন্সপেক্ট্র। চাইতেন ছেলে আইপিএস হোক। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে বদলে যায় জীবন। আর্থিক কারণে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল লেখাপড়ার ভবিষ্যৎ। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের উজ্জ্বল ছাত্র অনটনের বিরুদ্ধে লড়াই করেই ট্রিপল এম শেষ করেন। ভারতের প্রাচীন ইতিহাস এবং সংস্কৃতি তাঁর গবেষণা ও চর্চার বিষয়। বহু উত্থান পতনের মধ্যে দিয়ে এগোতে থাকে জীবন। আর্থিক অসহায়তার মুখে পড়ে কীভাবে হারিয়ে যায় মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ আর স্বপ্ন তা নিজের জীবন দিয়ে বুঝেছিলেন, আর কারুর লেখাপড়ার স্বপ্ন যাতে আর্থিক কারণে নষ্ট হয়ে না যায় সেই কারণে ছাত্রছাত্রীদের নিজেই সাহায্য করতে শুরু করেন। ছাত্রছাত্রীদের থেকে কখনও পারিশ্রমিক দাবী করেননি তিনি। গুরুদক্ষিণা হিসেবে যার যা সামর্থ্য তাই তিনি গ্রহণ করেন।

একবার এক পড়ুয়া তাঁর কাছে পাঠ নেওয়ার তাগিদে আসে। বাড়িতে প্রচন্ড অভাব, কিন্তু দারুণ মেধাবী সেই ছেলেটি বলে ১১ টাকার বেশি দেওয়ার সাধ্য তার নেই। ‘রহমান স্যার’ রাজী হয়ে যান। দিনরাত এক করে পরিশ্রম করে সে সফল হয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায়। আইএস হওয়ার স্বপ্ন সত্যি করে। সেই ছেলে ওড়িশার নোয়াপাড়ার ডিসট্রিক্ট কালেক্টর সাদিক আলম।

এই ঘটনা শুধু ছাত্রের জীবন বদলায়নি, বদলে দিয়েছিল শিক্ষকের জীবনও। সেই ১১ টাকাই হয়ে ওঠে গুরু রহমানের ‘গুরুদক্ষিণা’। ছাত্রের আর্থ-সামাজিক অবস্থান যাই হোক না কেন, তাঁর কাছে পাঠ নিতে গেলে দক্ষিণা ১১ টাকার অঙ্কেই বাঁধা।

১০ হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রী তাঁর।  তাঁদের মধ্যে অন্তত ৩ হাজার সাব ইন্সপেক্টর পদে, ৬০ জন আইপিএস, ৫ জন আইএএস এবং বহুজন বিভিন্ন সরকারী দফতরে কর্মী, আধিকারিকের দায়িত্বে রয়েছে।

শুধুমাত্র কর্মজীবনের লক্ষ্য পূরণ নয়, আদর্শ মানুষ হয়ে ওঠার পাঠও দেন ছাত্রছাত্রীদের। মানুষ মানুষের জন্য,তাই মানুষ সমাজের জন্য, তাই একজনের সুখ-দুঃখ থেকে কখনও অপরজন বিচ্ছিন্ন হয়ে ভাল থাকতে পারে না এই তাঁর বার্তা। একটা বই, একটা কলম আর এক শিশু এই দিয়ে পৃথিবী বদলে দেওয়া সম্ভব এই সত্যিটা নিজের জীবন দিয়ে করে দেখিয়েছেন ছাত্রছাত্রীদের ‘গুরু রহমান’…     

   

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...