জয়পুর থেকে ৮৫ কিলোমিটার দূরত্বে সিকর জেলার সুরেরা নামক একটি ছোটো গ্রামের বাসিন্দা শ্রাবণ কুমার বাজ্য। চাষাবাদ প্রক্রিয়া সহজ করে তুলতে অভিনব যন্ত্র আবিস্কার করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি।
পড়াশোনা মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত। বিজ্ঞান অথবা প্রযুক্তির উপর কোনো ডিগ্রীই নেই। তাতে কি? তার নির্মিত যন্ত্রগুলির সাহায্যে উপকৃত হয়েছেন রাজস্থানের ১০০ জনেরও অধিক চাষি।
সহজ ছিল না পথ। একাধিক ব্যর্থতা, বন্ধুদের উপহাস ও পরিবারের সন্দেহ ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। সমস্ত বাঁধাকে পিছনে ফেলে স্রেফ ইচ্ছে শক্তির সহায়তায় এই অভিনব যন্ত্র নির্মান করতে সক্ষম হয়েছেন ৪৪ বছরের শ্রাবণ। এ ক্ষেত্রে সম্মুখবর্তী সমস্যাগুলিকে দক্ষ হাতে ব্যবহার করেছেন তিনি। তার নির্দেশিত আলোতেই এখন পথ দেখছেন রাজস্থানের অসংখ্য কৃষিজীবি মানুষ। এখনও পর্যন্ত ৬টি যন্ত্র নির্মান করেছেন তিনি, যার সাহায্যে কৃষিকার্য এখন আরও ধকলহীন ও কার্যকরী হয়ে উঠেছে চাষিদের জন্য।
“ছোটো থেকেই বাবাকে দেখতাম জমিতে চাষাবাদ করতে এবং প্রখর দাবদাহের মধ্যেও অটল হয়ে কিভাবে মাটি কামড়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, যা তাঁর কাছ থেকে তাঁর জীবন নিংড়ে নিয়েছিল। আমি বাবাকে সাহায্য করতে চাইতাম কিন্তু জানতাম না তা কিভাবে সম্ভব। ভীষণ অসহায় লাগত আমার। অতএব আমি অন্য একটি বিকল্প রাস্তা খুঁজতে লাগলাম। কখনও কখনও গর্ত খোঁড়ার কাজে লেগে পড়তাম, আর তা কাজ না করলে চলে যেতাম বাইক সারাতে,” বলছেন এই নির্মাতা।
ছোটো থেকেই যন্ত্রের প্রতি আকর্ষণ বোধ করতেন শ্রাবণ। মেকানিককে দেখে শিখে নিয়েছিলেন পুরোটা। যন্ত্রাংশের প্রতি প্রেম ও ধৈর্য্যের প্রতি অদম্য মনোবলই তাঁকে এই পথে চালনা করে, এবং ক্রমেই তিনি কৃষিকার্যের উপর ঐ অঞ্চলের পথিকৃৎ হয়ে ওঠেন।
“আমার মনে আছে ট্রাক্টরের ইঞ্জিন খারাপ হলেই আমি মেকানিকের অপেক্ষায় বসে থাকতাম। উনি কাজ করতে শুরু করলে, আমি নীচু হয়ে সমস্তটা লক্ষ্য করতাম। এটা আমাকে ভীষণভাবে মুগ্ধ করত, আর যখন আমি বাইক সারাতে শুরু করলাম, বুঝতে পারলাম এই কাজটা আমারই জন্য।“ বলছেন তিনি।
তাঁর তৈরী প্রথম যন্ত্র ‘উইডার’ নির্মাণ করতে লেগে গিয়েছিল বছর দুয়েক। বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে করতে হঠাতই একদিন আবিষ্কার করে ফেলেন এই যন্ত্র। মূল্য স্থির করা হয় ৫৫,০০০-৬৫,০০০ টাকা, বাজারে এই ধরণের একটি যন্ত্রের আনুমানিক মূল্য ১.৫ লক্ষ টাকা। সুতরাং কৃষীজীবি মানুষেরা প্রায় ১ লক্ষ টাকার কম মূল্যে তার থেকে সংগ্রহ করে নিতে পারেন এই যন্ত্র। যন্ত্রটির আপডেটেড ভার্সান আনতে বর্তমানে এ বিষয়ে আরও পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন তিনি।
‘উইডার’ এর মতই সস্তা তার বানানো অন্যান্য যন্ত্রগুলির মূল্য চাষিদের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা ভেবেই স্থির করা। এই কাজের জন্য ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রপতি পুরস্কার সহ অন্যান্য পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। প্রাতিষ্ঠানিক উপাধি না থাকাটা যে কোনো প্রতিবন্ধকতা নয় তা আরও একবার প্রমাণ করলেন সুরেরা গ্রামের এই যন্ত্রপ্রেমী। জীবনের ৪৪টি বছর কাটিয়ে তিনি এখন চাইছেন, “আমি কখনও কোনো ডিগ্রী অর্জন করতে পারিনি। কিন্তু আমি আমার ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার বানানোর জন্য যথাযথ সাহায্য করবো যাতে সে কৃষি সম্প্রদায়কে আমার থেকেও ভাল কিছু দিতে পারে।“