বঙ্গের ইতিহাসে অন্যতম সংযোজন খেজুরির এই ডাকঘর

ভারতে  ব্রিটিশ  শাসনের  আধিপত্য প্রতিষ্ঠার আগে এখানে  পর্তুগীজদের আধিপত্য ছিল, তবে অবশ্যই প্রশাসনিক নয়, এক্কেবারে বাণিজ্যিক।  আর কাঁথি মহকুমার খেজুরি সেইসময় ছিল এক বন্দর। যদিও তখন তার খ্যাতি ছিল কেডগিরি হিসেবেই।  ১৬৭২ সালের পর থেকে এই খেজুরি মানে তৎকালীন  কেডগিরি  হয়ে   ওঠে  পর্তুগীজদের  ব্যবসার এক বড়ো ঘাঁটি। আর বাণিজ্যিক কারণেই বহির্বিশ্বের  সাথে যোগাযোগের জন্য প্রয়োজন ছিল একটি ডাকঘরের।  যদিও  ভারতের সেই  প্রথম  ডাকঘরটি গড়ে ওঠে ব্রিটিশ আমলে।  কবে ? কার উদ্যোগে ? এখন তার কি অবস্থা ! সেই সন্ধান দেব আজ।  

সময়টা ১৮৫০সাল, মহাবিদ্রোহের বছর সাতেক আগের ঘটনা। ব্রিটিশ সরকারের অধীনস্ত ভারতে দেশের প্রথম ডাকঘর প্রতিষ্ঠা হয় পূর্ব মেদিনীপুরের  খেজুরিতে।  তবে শুধু প্রথম ডাকঘর নয়, আরও একটি  ইতিহাসের সাক্ষী এই খেজুরি ডাকঘর। ভারতে টলিগ্রাফ ব্যবস্থাও প্রথম শুরু হয়েছিল এই ডাকঘর থেকেই। যদিও  তখন এ জায়গার নাম ছিল কেডগিরি।    

 ১৮৫১সালে কলকাতা মেডিক্যাল  কলেজের রসায়নের অধ্যাপক ডঃ ডব্লু বি ও’সাউগনেস  প্রথম কলকাতা ও খেজুরির মধ্যে  তার যোগাযোগের  অনুমতি পান।  ১৮৫২সালে  শুরু হয়ে যায় কলকাতা-খেজুরি ভায়া ডায়মন্ডহারবার, বিষ্ণুপুর, মায়াপুর, কুঁকড়াহাটি তার অর্থাৎ টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা।  ১৯০৭ সালের ইম্পিরিয়াল গেজেট অব ইন্ডিয়া থেকে এই তথ্য মেলে।

প্রথমে অবশ্য খেজুরি-কুঁকড়াহাটি ৮২মাইল পথে যোগাযোগ শুরু হয়েছিল ডঃ সাউগনেসের  উদ্ভাবিত ‘টেলিগ্রাফ সিমাফো’যন্ত্রের সাহায্যে।  পরে চালু হয় ‘মর্সকোড‘ পদ্ধতি। এই  ব্যবস্থা  চালু হওয়ার দু’তিন বছরের মধ্যে এক বিধ্বংসী সামুদ্রিক ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে স্বপরিবারে  ভেসে যান  তৎকালীন পোস্টমাস্টার বাটেলবে। তার সঙ্গে সঙ্গেই বিধ্বস্ত হয়ে যায় ডাকঘর। এর পর অবশ্য সেই ডাকঘর নতুন করে চালু করার কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ১৬৯ বছর  বয়সের  খেজুরির গর্ব  এখন  পরিত্যক্ত ও ঘন গাছপালার জঙ্গলের আওতাধীন। এলাকাটি বনবিভাগের  অধীন।

 

এই ঐতিহাসিক  স্থান  রক্ষণাবেক্ষণের জন্য  প্রধানমন্ত্রী  ইন্দিরা   গান্ধীর  আমলে স্থানীয়  বিধায়ক সুনির্মল পাইকের উদ্যোগে ডাকঘরটি মনুমেন্টের  স্বীকৃতি পায়।  সংস্কারের আদেশও  আসে। যোগাযোগ  ভবন   রক্ষণাবেক্ষণের  চেষ্টা  শুরু  করলেও  রাজনৈতিক  বিডম্বনায়  তা  অচিরেই  বন্ধ হয়ে যায়। ক্রমে  ক্রমে তিনতলা বাড়িটি  আজ  প্রায় অবলুপ্তির পথে। বর্তমান   রাজ্য সরকার এই বাড়িকে  স্বীকৃতি দিয়ে  শীঘ্র কাজ শুরুর  আশ্বাস  দিয়েছেন। আর এখন সেই  ইতিহাসকে  জীবন্ত  করার আশায়  রয়েছে  কেডগিরি মানে  খেজুরির  মানুষ।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...