জংলা গাছ বলে, যে কিনা চির উপেক্ষিত সে যে নিজ গুনে বিদেশযাত্রা করতে পারে এমন ভেবেছেন? বা তা থেকে প্রায় ৫৬রকম ওষুধ তৈরী হতে পারে– এমন কথাও ভাবেন নি। আজ তেমন এক গাছের কথা বলবো, যে এই বাংলা থেকেই এক বাঙালির হাত ধরে বিদেশেও তার বাজার দর বেশ উঁচু করে ফেলেছে, সেই গল্পই হোক।
বলছি রৌভলফিয়া সার্পেন্টিনার কথা। অচেনা লাগছে! কিন্তু এর ডাকনাম সর্পগন্ধার সঙ্গে পরিচিত প্রায় সবাই। জানেন কি বাড়ির আসেপাশে বেড়ে ওঠা চির উপেক্ষিত ভেষজ গাছ সর্পগন্ধার ভূমিকা ঠিক কতখানি? বর্তমান পরিস্থিতিতে হাই ব্লাডপ্রেসার বা উচ্চরক্তচাপসহ একাধিক রোগের শিকার হচ্ছে মানুষ। আর কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই প্রায় ৫৬রকমের রোগের ওষুধ তৈরি হয় সর্পগন্ধা থেকে। আর এমন এক ভেষজ গাছ যে ছিল উপেক্ষিত, অবহেলিত।
আর তার চাহিদা যে বিদেশেও বিপুল তাও হয়তো অনেকেরই অজানা। এক বাঙালির হাত ধরেই এই লুপ্ত প্রায়, উপেক্ষিত গাছ বিদেশ যাত্রা করছে সফলভাবে। মূলত দীর্ঘদিন ধরে সেই ভেষজ গাছের শিকড় জার্মানি, স্যুইজারল্যান্ডে পাড়ি দিচ্ছে জলপাইগুড়ির বাসিন্দা অনির্বাণ সেনগুপ্তের হাত ধরে। ২০০৫সালের আগে তিনি মূলত ফুলের চর্চার জন্য জলপাইগুড়িতে কিনে ফেলেন তিন একর জমি৷ কিন্তু এক বন্ধুর পরামর্শে শুরু করেন এই গাছের চাষ। সেই শুরু।
ভেষজ গাছ সর্পগন্ধার সন্ধানে তার আনাগোনা ঘটে শিলিগুড়ির সুকনা জঙ্গল থেকে ডুয়ার্সে বনদপ্তরের নার্সারি, আলিপুরদুয়ার, লাটাগুড়ি সর্বত্র। সর্পগন্ধার চারা সংগ্রহ করে শুরু হয় চাষ। আর এখন সেই গাছেরই শিকড় তাঁর কাছ থেকে সংগ্রহ করছে জার্মানি, স্যুইজারল্যান্ডের হোমিও ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলো। প্রতি ৩৬মাস সময় লাগে গাছগুলোর সঠিক বৃদ্ধি হতে। ৩৬মাস পর গাছের শিকড় পরিষ্কার করে তা ছোটো ছোটো ট্রে-তে রাখা হয়। তারপর ট্রেগুলো তাপ দিয়ে নির্দিষ্ট সময় পর নামিয়ে প্যাকেজিং করে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বিদেশে। একশো থেকে দেড়শো কেজি পাঠাতে হয় এই গাছের শিকড়। প্রায় কোটি টাকার মতো এখন লেনদেন হয় এই কাজে। এছাড়াও জলপাইগুড়ি লাগোয়া গ্রামের কিছু মানুষও অনির্বাণবাবুর জমিতে এই গাছের চাষ এবং প্যাকেজিংয়ের কাজ করেন। ফলে কিছু কর্মসংস্থানও হচ্ছে।
একটি উপেক্ষিত ও লুপ্তপ্রায়, গাছ যে এত মূল্যবান হতে পারে আর তার যে ব্যবসায়িক সাফল্য এই পর্যায়ে যেতে পারে তার জ্বলন্ত উদাহরণ মেলে ধরছেন তিনি। তার এই ভেষজ গাছ বাঁচিয়ে রাখার প্রয়াস সত্যি প্রশংসনীয়।