অবিভক্ত বাংলায় নীল চাষ, নীল বিদ্রোহের ইতিহাস এ সবই কমবেশি সবারই জানা। এই নীলচাষের প্রয়োজন ও পরিদর্শনের জন্যই সাহেবরা বিভিন্ন জায়গায় নীলকুঠি বানাতেন, আর এমন কিছু কুঠি আজও রয়ে গেছে। এমন এক নীলকুঠির সন্ধান দেব আজ, যা এক পর্যটন কেন্দ্র। কোথায়, কেমন সে কুঠি জানাবো সেই কথাই।
অবিভক্ত ভারতে এই নীলচাষের সূত্রপাত ঘটে ১৭৭৭ সালে ফরাসি বণিক লুই বোনার্ডের হাত ধরে। কিন্তু এর বাণিজ্যিক সাফল্য ও উৎপাদনের মূল দায়িত্বে ছিলেন ক্যারল ব্লুম নামের এক ইংরেজ সাহেব। নীলের ব্যবসা তখন ছিল খুব লাভজনক। আর তার তৎপরতায় বাংলায় উৎপাদিত নীল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মুনাফা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছিল। ১৮৩০সাল নাগাদ সারা বাংলায় ১হাজারেরও বেশি নীলকুঠি ছিল বলে জানা যায়।
আজ এমনই এক নীলকুঠির কথা বলবো। বাংলাদেশের মেহেরপুর জেলা সদর থেকে প্রায় ৬কিলোমিটার দূরে কাজলা নদীর পাশে আমঝুপি গ্রামে রয়েছে এই নীলকুঠি। ১৮১৫সাল নাগাদ প্রায় ৭৭একরের মতো জায়গার উপর এই নীলকুঠি স্থাপিত হলেও পরবর্তীকালে তা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই বিশাল চত্বরে প্রবেশ পথ রয়েছে দু’টি। মাঝখানে মূলভবন। দু’দিকে ফুলের বাগান। কিন্তু এখানকার এক বিশেষ দ্রষ্টব্য কবুতরের ঘর। যে সব পায়রা চিঠি আদানপ্রদানের কাজে লাগানো হত, তারা এই ছোট্ট ঘরেই থাকত।
এই নীলকুঠি নিয়ে স্থানীয় মানুষদের মধ্যে জনশ্রুতি কিন্তু কম নেই। কথিত আছে যে, এই বাড়িতেই নাকি নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য লর্ড ক্লাইভ ষড়যন্ত্র করেছিলেন মিরজাফরের সঙ্গে। তবে বেশিরভাগ ঐতিহাসিকের মতে এমন ধারণা ভিত্তিহীন।
কিন্তু ইতিহাসের সাক্ষী স্বরূপ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই নীলকুঠিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়। যা আজও নীল বিদ্রোহের সেই অধ্যায়কে স্মরণ করায়।