শেক্সপিয়র তখন সবে নাটক লেখা শুরু করেছেন।
গ্যালিলিও জেহাদ চালাচ্ছেন চার্চের বিরুদ্ধে। সূর্য নয়, পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে।ভারতে তখন আকবরের রাজত্বকাল। শাহজাহান শিশু।
আজকের পৃথিবীর সঙ্গে সেই পৃথিবীর কোনও মিল নেই। সে যেন এক অন্য পৃথিবীর গল্প।
এই সব গল্প আমরা দেখতে পাই ইতিহাসের পাতায়, অতীতের কাহিনীতে। সাক্ষী বলতে তারাই।
তবে ইতিহাস যেন থেমে গিয়েছে দক্ষিণ গোয়ার লুইতোলিম গ্রামের এই বাড়ির অন্দরে। ৪২৭ বছরের ‘ফিগিয়ারাদো ম্যানসন’। বাড়ি নয়, আসলে এক মিউজিয়াম।
পায়ে পায়ে বাড়ির অন্দরে ঢুকলে মনে হবে যেন টাইমমেশিনে চড়ে অন্য সময়ে চলে এসেছি। আর সেখানে থমকে দাঁড়িয়েছে অতীত। পোর্সিলিনের পট, বেল ঝাড়বাতি, মোমদানি, টাইলস, আসবাবের গায়ে গায়ে না দেখা যুগের স্বাক্ষর।
‘ফিগিয়ারাদো ম্যানসন’ তৈরি হয় ১৫৯০ সালে। পর্তুগিজরা গোয়ায় পা দেওয়ার ঠিক পরেই।
ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী শাহজাহানের তাজমহলও তখন তৈরি হয়নি।
‘ফিগিয়ারাদো ম্যানসন’ তৈরি করেন আদতে পোদিয়ার্স পরিবার। ষোড়শ শতাব্দীতে গোয়ার সাঙ্কোলা থেকে চলে আসেন লুইতোলিম গ্রামে। প্লেগের প্রাদুর্ভাব গ্রাম ছাড়তে বাধ্য করেছিল। বসবাস শুরু করেন লুইতোলিমে । সেই সময়েই তাঁরা ধর্মান্তরিত হন। সারস্বত ব্রাহ্মণ থেকে খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহণ করেন। ‘ফিগিয়ারাদো ’ উপাধি পান।
মানুইয়েল ভিনসেন্ট ডি ফিগিয়ারাদো এই পরিবারের প্রথম পুরুষ। তিনিই প্রথম ‘ফিগিয়ারাদো ’ উপাধি নেন। পেশায় আইনজীবী। পরে পর্তুগীজ অ্যাসেম্বলির সদস্য হন। মানুইয়েল ভিনসেন্ট ডি ফিগিয়ারাদো কে শিল্পপতি হিসেবেও তাঁকে চিনত গোয়া।
মারিয়া দি ফতেমা ফিগিয়ারাদো বর্তমানে এই বাড়ির দায়িত্বে আছেন। বাঁচিয়ে রেখেছেন পুরনো ঐতিহ্যকে। সময়ের ছাপ পড়তে দেননি। বাড়ির প্রতিটা কোণ, আসবাব কোনও কিছুতেই বদল আনতে দেননি। গোয়ার ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা। মারিয়া দি ফতেমা ফিগিয়ারাদো পর্তুগাল সংসদের সর্ব কনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন। দীর্ঘ ৬ দশক পর ভারতে ফেরেন। ২০১০ সালে তাঁরই চেষ্টায় ফিগিয়ারাদো ম্যানসনের একটা অংশ সংগ্রহশালায় রূপ পায়।
চাইলে রাত কাটানোও যায় ফিগিয়ারাদো ম্যানসনে। এই বাড়ির একটি অংশ হোম স্টে হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ইতিহাস এবং গোয়ার অতীত ঐতিহ্যের সাক্ষী হতে চাওয়া মানুষদের জন্য ফিগিয়ারাদো পরিবার দরজা খুলে দিয়েছে ফিগিয়ারাদো ম্যানসনের।