সময়টা ২০১১ সাল, নিক ব্রান্ডট নামে এক ওয়াইল্ড লাইফ ফোটোগ্রাফার এক হ্রদের সামনে গিয়ে চমকে গিয়েছিলেন। যেখানে তিনি দেখেন হ্রদের পাড়ে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য পশুপাখির ফসিল - যেন কোনও পাথরের মূর্তি সাজিয়ে রাখা! হ্রদে নামামাত্রই ‘পাথর’ হয়ে যাচ্ছে পশুপাখি! সত্যিই কি সেই হ্রদের এমন রহস্যময় ক্ষমতা রয়েছে? নাকি এটা শুধুই একটা রটনা!
দক্ষিণ আফ্রিকার তানজানিয়ার উত্তর প্রান্তে আছে নেট্রোন নামের লবনাক্ত এই হ্রদ । দৈর্ঘ্যে ৫৭ কিলোমিটার এবং প্রস্থে ২২ কিলোমিটার নেট্রন হ্রদে এওয়াসো নায়গ্রো নদীর জল এসে পড়ে। আশপাশের বেশ কয়েকটি উষ্ণ প্রস্রবণের জলও এই হ্রদে সংমিশ্রিত হওয়ায় বিভিন্ন খনিজে সমৃদ্ধ এই হ্রদের জল। এই হ্রদ কিন্তু সাম্প্রতিক কোনো আলোচ্য বিষয় নয়, বরং অনেক আগে থেকেই পর্যটককুলের বেশ আকর্ষণের বিষয় এই হ্রদ , তা নিয়ে বহু কথা শোনা গেলেও প্রামাণ্য কিছু মেলেনি কোনও দিনই। কিন্তু নিক ব্রান্ডট সেই রটনার বাস্তবায়নের সহযোগী হন।
রহস্য উন্মোচনে শুরু হয় গবেষণা। জানা যায়, প্রচুর সোডিয়াম ও কার্বোনেট যুক্ত ট্র্যাকাইট লাভা দিয়ে প্রায় ২৬ লক্ষ বছর আগে প্লিসটোসিন যুগে তৈরি হয়েছে নেট্রন হ্রদের তলদেশ। এই হ্রদের জলে সোডিয়াম কার্বোনেট এবং সোডার পরিমাণ অত্যধিক বেশি । পরীক্ষায় আরো জানা যায়, হ্রদের জল অস্বাভাবিক ক্ষারধর্মী (পিএইচ ১০.৫) হওয়ায় ত্বক পুড়ে যায়, তাই স্বাভিকভাবেই পশুপাখির পক্ষে তা অসহনীয়।
বছরের বেশির ভাগ সময় হ্রদের জলের তাপমাত্রা থাকে ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে জল দ্রুত বাষ্পীভূত হয়ে যায়। আর তলদেশে পড়ে থাকে জলের মতো তরল লাভা। সোডিয়াম ও কার্বোনেটের জন্য হ্রদে জন্ম নেয় সায়োনোব্যাকটিরিয়া নামে অণুজীব। এই অণুজীবের শরীরে লাল রঞ্জক থাকায় হ্রদের জল লাল রঙের হয়। বিজ্ঞানীদের মতে, এই রঙেই আকৃষ্ট হয়ে পশুপাখি হ্রদে নামে। কিন্তু জলের অতিরিক্ত ক্ষারধর্মীর জন্য সেগুলোর মৃত্যু হয়। নেট্রন হ্রদের জল ক্ষারধর্মী হলেও এই হ্রদই পূর্ব আফ্রিকার একমাত্র লেসার ফ্লেমিঙ্গোদের সবচেয়ে বড় এক প্রজনন ক্ষেত্র।
প্রায় ২৫ লক্ষ লেসার ফ্লেমিঙ্গো এই হ্রদে দেখতে পাওয়া যায়। কারণ এই হ্রদের অগভীর জলে পাওয়া যায় প্রচুর নীলাভ-সবুজ শৈবাল। এই শৈবাল খেয়েই তারা বেঁচে থাকে এবং বংশবৃদ্ধি করে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, হ্রদের এই ক্ষারধর্মীতার সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছে এই ফ্লেমিঙ্গোরা। কিন্তু তাই বলে কৌতূহলী হয়ে ভুলেও পা বাড়াবেন না হ্রদের জলে, তাহলেই বিপদ।