মাঝখানে অনেক ঝড় বাদলের গল্প। বদল এসেছে দুজনের জীবনেই। কিন্তু সময় বদলে দিতে পারেনি মনের খুব গোপনে লুকিয়ে রাখা অনুভূতিকে।
কোচানিয়ন মেনন আর লক্ষ্মী আম্মাল। পেরিয়ে এসেছেন ষাটের চৌকাঠ।
কেরালার ত্রিচুর জেলার রামাভর্মাপুরমে একটি বৃদ্ধাশ্রমে এখন তোড়জোড় চলছে তাদের বিয়ের। এটিই কেরলের প্রথম প্রথম সরকারি বৃদ্ধাশ্রম।
এই বৃদ্ধাশ্রমে পা রাখার অনেক আগেই প্রায় ৩০ বছর ধরে একে অপরকে চিনতেন তাঁরা।
২১ বছর আগে স্বামীকে হারান লক্ষ্মী।প্রয়াত স্বামী কৃষ আইয়ারের কেটারিং-এর ব্যবসা ছিল। সেই ব্যবসায় সাহায্য করতেন কোচানিয়ন। সেই সূত্রেই পরিচিতি। কৃষ এর হঠাৎ মৃতু হয়। নিঃসন্তান লক্ষ্মী অসহায় হয়ে পড়েন আকস্মিক আঘাতে।
বেশ কিছু বছর তিনি এভাবেই একা একা থাকতেন। সেই সময় কোচানিয়ন তাঁর পাশে দাঁড়ান। এক সময় কেটারিং এর ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। বসত বাড়ি বিক্রি করে এক আত্মীয়ের বাড়ি চলে যান।
দীর্ঘদিন সেই আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন লক্ষ্মী। নিয়মিত খোঁজ নিতেন কোচানিয়ন।
কয়েক বছর আগে তাঁদের যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যায়। কোচানিয়ন কোথায় চলে যান লক্ষ্মী জানতেও পারেননি।
তারপর এই বৃদ্ধাশ্রমে এসে আবার দেখা দুজনের। দু’প্রান্ত থেকে দুজনে এসে উপস্থিত একই জায়গায়।
লক্ষ্মীর কথায়, ‘খুব অবাক হয়েছিলাম ওঁকে যখন এখানে প্রথম আবিষ্কার করি। ভীষণ খুশি হয়েছিলাম। এতগুলো বছর ধরে একা আছি। কিন্তু কোচিয়ন সবসময় আমার খোঁজ রেখেছে’।
এক মাস পর দুজনে ঠিক করেন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবেন।
কোচিয়েন স্ত্রী সন্তানদের সঙ্গে থাকতেন। পরে বৃদ্ধাশ্রমে আসেন।
লক্ষ্মী আম্মল এবং কোচিয়েন মেনন এর বিয়ের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছেন বৃদ্ধাশ্রম কমিটি। কমিটির অন্যতম সদস্য জন ড্যানিয়েলের পৌরহিত্যে বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে।
তিনি জানিয়েছেন বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকরা ভীষণ খুশি তাঁদের এই সিদ্ধান্তে। লক্ষ্মী আর কোচিইয়েনের জন্য আলাদা ঘর বরাদ্দ করা হবে। তাঁদের বিয়ের অনুষ্ঠানের ভোজ আবাসিকরা নিজেরাই বহন করছেন। তাঁদের তরফ থেকে দুজনের জন্য এতাই উপহার।
কোচিয়েন জানিয়েছেন, ‘ প্রান্ত জীবনে আর কতদিন একসঙ্গে থাকতে পারবেন জানেন না। কিন্তু আমার পাশে লক্ষ্মী আছেন এটাই আমার কাছে ঈশ্বরের আশির্বাদের মতো’।