আজ স্পর্ধার ৩৯ বছর

জুন মাসের ইংল্যান্ড ভারতীয় ক্রিকেটকে অনেক কিছু দিয়েছে। ২৫জুন, ১৯৮৩ ভারতের বিশ্ব জয়ের দিন। কপিলের ভারত হারালো লয়েডদের পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জকে। সেই প্রথমবারের জন্য বিশ্ব ক্রিকেটে শুনলো ভারতের হুঙ্কার... সে রাত ছিল স্বপ্নপূরণের রাত। আমাদের মতো দেশ, যেখানে ঘুম থেকে ওঠা ক্রিকেট, ধর্ম ক্রিকেট, খাওয়াতে ক্রিকেট, ঘুমাতে যেতে যেতেও ক্রিকেট। আমাদের এই ধর্ম। ২২ গজই আমাদের মন্দির মসজিদ গির্জা, আর ১১ জন ভগবান। মন্ত্র বলতে জিতে ফিরে আসা...  চিৎকার  ই..ন্ডি...য়া.....ই....ন্ডি....য়া....ইন্ডিয়া, ভেঙে যায় বিভেদ এক ক্রিকেটিয় ধর্মে এক হয় কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী। এই স্বপ্নের পথ চলা ৮৩-এর বিশ্বজয়ের পর থেকেই।

​৮৩ ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে ভারত চ্যাম্পিয়ন হতে পারে, এমন চিন্তাভাবনা কল্পনাতেও কেউ আনেননি৷ কারণ আগের দুটো বিশ্বকাপে একমাত্র ইস্ট আফ্রিকা বাদে আর কোনও  দেশের বিরুদ্ধেই জিততে পারেনি ভারত৷ ১৯৭৫, ৭৯ বিশ্বকাপের পর ৮৩-র বিশ্বকাপও ইংল্যান্ডে হওয়াতে ওই বছরও অন্ডার ডগ হিসেবে শুরু করে ভারত।

FotoJet (12)

২৫ জুন ১৯৮৩ ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে এক গৌরবময় দিন৷ এই দিনেই প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছিল ভারত, আজ স্পর্ধার ৩৯ বছর। যদিও টুর্নামেন্টের শুরুটা একেবারেই ভাল ছিল না ভারতীয়দের৷ ডানকান ফ্লেচারের জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে ১৭ রানে ৫ উইকেট  হারায় ভারত৷ ব্যাট হাতে নামেন ভারত অধিনায়ক কপিল দেব৷ ১৩৮ বলে ১৭৫ রানের ইনিংস ক্রিকেটের ইতিহাসে অমর হয়ে গিয়েছে৷ সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়া হারিয়ে ভারত পৌঁছায় বিশ্বকাপ ফাইনালে। অসম্ভবকে জয় করে ছুটছিল অশ্বমেধের ঘোড়া। বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন দেখা শুরু। ভারত ফাইনালে ওঠার আগে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মতো দলকে হারিয়েছে। গ্রুপ লিগে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিল। জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে ক্যাপ্টেন্স নক খেলে ফেলেছেন কপিল।

ফাইনালে ভারত মুখোমুখি হয় ভিভিয়ান রিচার্ডস, ক্লাইভ লয়েড, ম্যালকম মার্শালদের বিরুদ্ধে। ১৯৮৩ সাল ২৫ জুন, লন্ডনের লর্ডস। একদিকে ভারত, যে দলটা ১৯৭৫ সালের বিশ্বকাপে মাত্র একটি ম্যাচ জিতেছিল। তাও দুর্বল পূর্ব আফ্রিকার বিরুদ্ধে। আর ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বকাপে শুধুই হার। অন্যদিকে ক্লাইভ লয়েড বিশ্বকাপের হ্যাট্রিকের আশায় ঝাঁপাচ্ছেন।

তখন ছিল ৬০ ওভারের খেলা, প্রথম ব্যাটিং ভারতের। লর্ডসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ টস জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেয়। ব‍্যাট করতে নামেন ওপেনিং জুটি সুনীল গাভাস্কার ও শ্রীকান্ত। সুনীল ফেরেন মাত্র ২ রানে। ৫৪.৪ ওভারে উইকেট হারিয়ে ১৮৩ তোলে ভারত। শ্রীকান্ত ৩৮, অমরনাথ ২৬ এবং পাটিল ২৭। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে লক্ষ‍্য খুবই কম।

কিন্তু সেদিনটা যে ভারতের নামে লেখা হয়ে গিয়েছিল। বল হাতে ক্রিজে তখন রুদ্রমূর্তিতে ভারতের দুই বোলার, মদন লাল আর মহিন্দর অমরনাথ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং লাইনআপে আঘাত আনলেন মদন। ওপেনার ডেসমন্ড হেইন্স, তারপর হিলারি গোমস ও ভিভিয়ান রিচার্ডসকে বিদায় করে দিলেন। ভিভকে তালুবন্দি করেন কপিল। বিনির বলে ক্যাচ তুলে লয়েড ধরা পড়েন কপিলের হাতে।

এরপর মহিন্দর অমরনাথ। দুজোঁ, মার্শাল আর হোল্ডিংকে দ্রুত প্যাভিলিয়নে পাঠিয়ে দিলেন। মহিন্দরের ছিল অসাধারণ বোলিং, ১২ রানে ৩ উইকেট আর মদন লালের ৩১ রানে ৩ উইকেট। লালা অমরনাথের দ্বিতীয় পুত্র মহিন্দর তৃতীয় বিশ্বকাপে ভারতের সেরা খেলোয়াড় হয়ে ওঠেন। ৫২ তম ওভারে অলআউট হয় ২ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।

ইতিহাস তৈরি করল কপিলের ভারত। মাহিন্দর অমরনাথ ম্যান অফ দ্য ম্যাচ। লর্ডসের আউটফিল্ডে তখন অসংখ্য মানুষ আর গোটা ভারত জাগছে, মাঝরাত টিভির সামনে দেশ। সে রাত ছিল স্বপ্ন পূরণের রাত। ১৯৭৫ ও ১৯৭৯ সালের চ্যাম্পিয়ন ক্লাইভ লয়েডের দলকে ভারত হারিয়েছে ৮৩ রানে। ক্রিকেটে ভারতের প্রথম বিশ্বজয়। ২৫ জুন ১৯৮৩ দিনটি ছিল ভারতীয় ক্রিকেটের স্বর্ণযুগের সূচনা। এরপর থেকেই দুরন্ত গতিতে ছুটতে শুরু করে ভারতীয় ক্রিকেট। ওই একটি জয়ই ভারতীয় ক্রিকেটের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। ১৯৩২ সাল থেকে ভারত টেস্ট খেলছে। অনেক জয় এসেছে। কিন্তু এই জয় ছিল আলাদা। যা ক্রিকেট ধর্মের জন্ম দিয়েছিল। আজ সেই ক্রিকেটই দেশের আবেগ।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...