হিন্দু পুরাণে উল্লিখিত দশমহাবিদ্যার অন্যতম 'ত্রিপুরাসুন্দরী'। ধারণা করা হয়, দেবীর এই নাম থেকেই ত্রিপুরা রাজ্যের নামকরণ হয়েছে। যদিও অপর এক ধারণা, ত্রিপুরার রাজা ত্রিপুরের নামেই এ রাজ্যের নামকরণ হয়েছে। হিন্দুদের দুই প্রাচীন গ্ৰন্থ মহাভারত আর পুরাণেও ত্রিপারার উল্লেখ পাওয়া যায়। সেই ১৪০০ সাল থেকে মাণিক্য রাজবংশের রাজ্যত্ব চলে আসছে এই রাজ্যে। ব্রিটিশদের আসার আগে বর্তমান বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা জেলাও ছিল মাণিক্য রাজাদের দখলে। রাজ ইতিহাসের ঐতিহ্য সঙ্গে নিয়ে আজকের ত্রিপুরা একেবারে অন্যরকম।
বেড়াতে যাওয়ার লিস্টে উত্তর-পূর্ব ভারত থাকলে আসতেই হবে ত্রিপুরা। পাহাড় ঘেরা সবুজ প্রকৃতি টান যেমন আছে তেমনি ইতিহাস, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যবাহী রাজপ্রাসাদ, বন-বনানী কী নয়! তীর্থ ভ্রমণ করতে যাঁরা ভালবাসেন তাঁদের কাছেও ত্রিপুরা প্রিয়।
কমলেশ্বরী কালী মন্দির- বহু ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে ত্রিপুরায়। যার অন্যতম কমলেশ্বরী কালী মন্দির। জনপ্রিয় এই মন্দিরটির অবস্থান ত্রিপুরার কমলাপুর জেলায়। মা কালীর পুজো করা হয় এই মন্দিরে। রাজধানী আগরতলা থেকে এই মন্দিরের দূরত্ব প্রায় ১২২ কিলোমিটার। এছাড়াও রয়েছে 'ত্রিপুরা সুন্দরী'র মন্দির। হিন্দু শাস্ত্র মতে, শক্তির একান্নটি পিঠের মধ্যে এই মন্দির অন্যতম। পুরাণ অনুসারে, সতীর ডান পা এই স্থানেই পড়েছিল।
উজ্জয়ন্ত প্যালেস- শুধুমাত্র মন্দির নয়, রয়েছে কিছু ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যের নিদর্শন। যার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হল উজ্জয়ন্ত প্যালেস। ১৮৯৯ সাল থেকে ১৯০১ সালের মাঝামাঝি সময়ে এই প্রাসাদটি তৈরি করেছিলেন স্যার অ্যালেকজান্ডার মার্টিন। তবে এই সৌধ তৈরির পিছনে মূল উদ্যোক্তা ছিলেন মহারাজা রাধা কিশোর মানিক্য বাহাদুর। সেই সময় প্রায় ১০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল এই সৌধটি নির্মাণ করতে। এই প্যালেসটির দু'পাশে রয়েছে দুটি দিঘি। প্যালেসটির প্রবেশ পথের মাঝখানে রয়েছে ফোয়ারা আর একটি বাগান। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নামকরণ করেছিলেন এই প্যালেসের। বর্তমানে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার মূল আকর্ষণ হল উজ্জয়ন্ত প্যালেস।
সিপাহীজলা ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি- আগরতলার কাছেই 'সিপাহীজলা ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি' অভয়ারণ্য। বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও গাছের দেখা মিলবে এই অভয়ারণ্যে। এছাড়াও কিছু বন্য জীবজন্তুর খোঁজ মেলে এখানে। বোটানিক্যাল গার্ডেন, চিড়িয়াখানা, লেক দেখতে পর্যটকরা ভিড় জমান এখানে। রাজধানী আগরতলা থেকে এই অভয়ারণ্যে দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার।
কমলাসাগর লেক- আগরতলা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কমলাসাগর লেক। বাংলাদেশ সীমান্ত থেকেও এই লেকের দূরত্ব খুব কম। পঞ্চদশ শতাব্দীতে মহারাজা ধন্য মানিক্য এই লেক খনন করিয়ে ছিলেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পর্যটকদের আকৃষ্ট করে এই স্থান। তবে লেকের সামনেই রয়েছে বিখ্যাত কালী মন্দির। ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল এই মন্দির। প্রত্যেক বছর এপ্রিল ও আগস্ট মাসে পর্যটকদের ভিড় দেখা যায় এই মন্দির চত্বরে।
জাম্পুই হিলস- পর্যটকদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ করবে ত্রিপুরার জাম্পুই হিলস। রাজধানী শহর আগরতলা থেকে এই স্থানের দূরত্ব প্রায় ২১৮ কিলোমিটার। এই অঞ্চল কমলা লেবুর উৎপাদনের জন্যেও যথেষ্ট জনপ্রিয়। ত্রিপুরার উচ্চতম স্থান বেল্টিং শিব-এর অবস্থানও এই অঞ্চলে। এছাড়াও ভগবান শিবের একটি প্রাচীন মন্দির রয়েছে এই স্থানে। বছরের বিভিন্ন সময়ে শিব ভক্তরা ভিড় জমান এখানে।
এছাড়াও আছে ত্রিপুরা মিউজিয়াম, নীরমহল ওয়াটার প্যালেস, ভুবনেশ্বরী মন্দির, উনকোটি পাহাড়, ডাম্বুর লেক ইত্যাদি। ত্রিপুরায় এমন অসংখ্য আকর্ষণীয় পর্যটক স্থান ছড়িয়ে আছে। সেই জন্যই সব ধরনের পর্যৎকদের কাছে ত্রিপুরার আকর্ষণ।
ত্রিপুরার এই জনপ্রিয় ভ্রমণ কেন্দ্রগুলির দূরত্ব রাজধানী আগরতলা থেকে বেশি না। আর এই আগরতলা থেকে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার সড়ক পথে দূরত্ব প্রায় ১৫৭২.৪ কিলোমিটার।
হাতে ৬-৭ দিন সময় থাকলেই ঘুরে আসা যায় ত্রিপুরা। আবার ১৮-২০ দিনের বড় ট্যুরও করা যায়। বেড়াতে যাওয়ার সেরা সময় অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারী।
আগরতলা, ধর্মনগরের মতো ত্রিপুরার বড় শহরে তো বটেই, ছোট শহরেও অনেক হোটেল, লজ, হোম স্টেতে থাকার সুযোগ রয়েছে। অনলাইনেও বুক করা যায় আবার স্পটে গিয়েও বুকিং-এর সুযোগ আছে পর্যটকদের জন্য।