আজকে একটু কথা বলা যাক দেশ থেকে অনেক দূরের একটি জায়গা নিয়ে। শুধু দূর নয়, দুর্গমও বলতে পারেন। পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্গম টুরিস্ট স্পট ও বলা যেতে পারে। বলাই বাহুল্য, এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অসাধারন বললেও কম বলা হয়। প্রকৃতি যেন তার সবটুকু ঢেলে দিয়েছে এখানে। দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউন থেকে ২৪৩২ কিমি দূরত্বে, সেন্ট হেলেনা থেকে ২১৬১ কিমি দূরত্বে এবং ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ থেকে ৩৪৮৬ কিমি দূরত্বে অবস্থিত রয়েছে 'ট্রিসটান ডা কুনহা' নামের এই দ্বীপটি। আসতে হবে কেপটাউন থেকে মোটরবোটে। এই দ্বীপে কোনো বিমানবন্দর বা সমুদ্রবন্দর নেই। নেই অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রের সুবিধা। দ্বীপে একটি রেস্টুরেন্টও নেই। হোটেল নেই, ক্রেডিট কার্ড চলেনা। দোকান নেই, বাজার নেই। শুধু আছে কয়েকটা হোম স্টে।
ট্রিসটান দ্বীপের উত্তর দিকে রয়েছে দ্বীপের একমাত্র গ্রাম। ১৮৮৭ সালে রানী ভিক্টোরিয়ার দ্বিতীয় পুত্র ডিউক অফ এডিনবার্গ প্রিন্স আলফ্রেড ট্রিসটান দ্বীপে আসেন। তাঁরই সম্মানার্থে গ্রামটির নাম রাখা হয় 'এডিনবরা অফ দ্য সেভেন সি'জ'। ২০১৮ সালের জনগণনায় জানা গেছে, ৭০টি পরিবারের ২৬৯ জন মানুষ এই গ্রামে বাস করেন। ব্রিটিশ সরকার এদের নাগরিকত্ব দিয়েছে। মূলত কৃষিকাজই এদের পেশা। কৃষি ছাড়াও দ্বীপের বাসিন্দারা দ্বীপে আসা পর্যটকদের কাছে বিভিন্ন হস্তশিল্প, সুভেনির প্রভৃতি বিক্রি করে আয় করেন। সামুদ্রিক বাতাস এখানকার উপরি পাওনা। ১১ কিমি লম্বা একটি দ্বীপে আছে একটিমাত্র রাস্তা, যেখানে চলে একটিমাত্র ১৮ সিটের বাস। রাস্তাটির দুই ধারে রয়েছে ছবির মত সুন্দর বাংলো ধরনের কটেজ। চারদিকে রয়েছে ভুট্টা, আলুর ক্ষেত যেখানে গরু, বাছুর চড়ে বেড়ায়।
তবে একটা অভিনব ব্যাপার করেছে বিবিসি। ২০০১ সাল থেকে এই গ্রামে কয়েকটি রেডিও এবং টিভি চ্যানেল লাইভ দেখা ও শোনার সুবিধা দিয়েছে তারা। ২০০৫ সালে ব্রিটিশ পোস্টাল কোড পায় গ্রামটি। ইন্টারনেট কানেকশনের ব্যবস্থাও করা হয়। এই ইন্টারনেট ব্যবস্থার ফলে অনলাইনে হস্তশিল্প সামগ্রী তথা অন্য যে কোনো জিনিস কেনার সুবিধা হয়। কিন্তু জিনিসপত্র আসে মাছ ধরার বোটে সেই একমাস পরেই। ডিজেল জেনারেটর দিয়ে দ্বীপে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এই দ্বীপে রয়েছে একটিমাত্র মুদির দোকান। কয়েকমাস আগে অর্ডার দিলে তবেই জিনিস পাওয়া যায়। কারন, ওই যে মাছ ধরার বোট কে জানানো হবে প্রথমে, তারপর সেই বোট গিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে খবর দেবে তারপর অন্য আর একটি বোট সেই জিনিসপত্র কেপটাউন থেকে ওই দ্বীপে নিয়ে আসবে। রয়েছে একটি ছোট্ট হাসপাতালও। সেখানে আছেন একজন ডাক্তার। সামান্য রোগের চিকিৎসা সেখানে হয়, কিন্তু জটিল রোগ হলে যেতে হয় সেই দক্ষিণ আফ্রিকা অথবা ইংল্যান্ডে। একটি স্কুলও রয়েছে এই দ্বীপে। ১৯৭৫ সালে সেন্ট মেরি স্কুলটি খোলা হয়েছিল।
এইভাবেই জীবন কাটান এই গ্রামের মানুষেরা। কি মনে হচ্ছে, পারবেন এই গ্রামে গিয়ে থাকতে? তবে এখানে একটি সুপ্ত আগ্নেয়গিরি এবং গভীর অরণ্য রয়েছে, যার জন্য ইউনেস্কো এই দ্বীপকে হেরিটেজ আখ্যা দিয়েছে। এই দ্বীপের একটি অফিসিয়াল ওয়েবসাইট রয়েছে। সেখান থেকেই আপনি ওখানকার তথ্য পেয়ে যাবেন। কখন কেপটাউন থেকে জাহাজ ছাড়ছে, কখন তা এডিনবরা দ্বীপে পৌঁছোচ্ছে, কেমন জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়া- নিয়ে আসা হচ্ছে সেখানে, সব তথ্য আপনি পেয়ে যাবেন ওই ওয়েবসাইটে। এছাড়া ওখান থেকে একটি নিউজলেটারও বেরোয় বছরে দুবার। আপনি তার গ্রাহক হতে পারবেন। একটি পোস্ট অফিস রয়েছে সেখানে, স্থানীয় ছবি সহযোগে স্ট্যাম্প ছাপা হয়।
তাই যেতে পারুন বা নাই পারুন, থাকতে পারুন বা নাই পারুন জানতে পারবেন অনেক কিছুই ওই দ্বীপটি সম্বন্ধে সেখানকার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে। আর যদি ইচ্ছে থাকে বিভিন্ন জায়গা থেকে স্থানীয় হস্ত শিল্প সামগ্রী সংগ্রহের, তাহলে সেটা আপনি খুব সহজেই পেয়ে যাবেন ওই ওয়েবসাইট থেকে অর্ডার দিয়ে। একটু ধৈর্য ধরতে হবে শুধু হাতে পাওয়ার জন্য। তবে কে না জানে, সবুরে মেওয়া ফলে!