বাংলার নবজাগরণের জনক তিনি। বন্ধ করেছিলেন সতীদাহ প্রথা থেকে বাল্যবিবাহের মতো নিন্দনীয় রীতি। ব্রাহ্মন্যবাদ ও সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরূদ্ধে তাঁর মর্যাদাপূর্ণ লড়াই আজও অনেকের অনুপ্রেরণা। সেই রামমোহন রায়ের বাড়িতে পুনরায় ঘটলো চুরির ঘটনা। এটাই নতুন নয়, চলতি বছরের মে মাসে এই শতাব্দী প্রাচীন বাড়িতে ঘটেছিল চুরির ঘটনা। তা সত্বেও কেন আটকানো গেল না চুরি, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে ।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, রামমোহনের শতাব্দী প্রাচীন বাড়ি থেকে দরজা সংলগ্ন কিছু পিতলের হাতল ও কড়া খোওয়া গেছে, যেগুলি মূলত রামমোহনের সময়ের। খবর পাওয়ার পর মিউজিয়ামের আধিকারিকদের পক্ষ থেকে থানায় ডায়েরি করা হয়। জানা যাচ্ছে, ট্রাক ড্রাইভার, হেল্পার সহ কিছু স্থানীয় মাদকাসক্ত ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ ভাবে বাড়িটির সামনে গাড়ি পার্ক করেন। এই ধারাবাহিক চুরির ঘটনায় এদের মধ্যে কেউ যুক্ত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
“যদিও তেমন বড় কিছু খোওয়া যায়নি। সমস্তরকম অবৈধ পার্কিং বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। অভিযুক্তদের খুঁজে বের করার প্রক্রিয়া চলছে। মিউজিয়াম আধিকারিকদের কাছে আমরা উপযুক্ত নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করার অনুরোধ জানিয়েছি, আর না হলে অন্তত মিউজিয়ামের গুরূত্বপূর্ণ স্থানগুলিতে সিসিটিভি ইন্সটল করার কথা বলেছি,” বলছেন এক অফিসার।
গত রবিবার রামমোহনের আমহার্স্ট স্ট্রীটের বাড়িতে চুরির ঘটনাটি ঘটে। রামমোহনের চিন্তাধারা ও কাজে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে ‘রাজা’ উপাধি দিয়েছিলেন দ্বিতিয় আকবর। তাঁর সঙ্গে জড়িত বহু ঘটনা ও সংগ্রামের সাক্ষী এই বাড়ি। একটা সময় এখানেই বসতো ব্রাহ্মসমাজের আলচনা চক্র। ১৮১৫ সালে, ফ্রান্সিস মেন্ডেজের থেকে ১৩,০০০ টাকার বিনিময়ে বাড়িটি কিনে নিয়েছেলেন রামমোহন। তাঁর অবর্তমানে দুই পুত্র রাজাপ্রসাদ ও রমাপ্রসাদ এই বাড়িতে থাকতেন। পরে তাঁর বাসভবনটিকে মিউজিয়ামের রূপ দেওয়া হয়।
রামমোহনের ব্যবহৃত নানা সামগ্রী ছাড়াও অজস্র মূল্যবান ও ঐতিহাসিক দলিল রয়েছে এই বাড়িতে। গত তিন মাসে ধারাবাহিক এই চুরির ঘটনা আরও একবার মিউজিয়ামের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুললো। আশ্চর্য্যের বিষয় এই যে, এত বড় হেরিটেজ বাড়িতে একটাও সিসিটিভি নেই, নেই কোনো নিরাপত্তারক্ষী। ৮৫/A রাজা রামমোহন সরণীর এই বাড়ি থেকে আমহার্স্ট স্ট্রীট থানার দূরত্ব মাত্র মিনিট চারেকের। তবু কেন ঘটলো এই ঘটনা? রামমোহনের বাসভবনটি সরকারের তত্ত্বাবধানে না থাকার ফলেই কি এই গাফিলতি? এই প্রশ্ন বারবার উঠে আসছে।