এক অখ্যাত খেলোয়াড়ের বিখ্যাত হওয়ার গল্প

তামিলনাড়ুর অখ্যাত এক গ্রামের মেয়ে গোমতী। তার বাবা চাষাবাদ করেই পরিবারের খরচ চলতেন। কিন্তু মাঠ ভর্তি সোনার ফসলের স্বপ্ন ছাড়াও তার চোখে ছিল এক অন্য স্বপ্ন। তার স্বপ্ন ছিল খেলোয়াড় হওয়ার। সেই স্বপ্ন চোখে নিয়েই গোমতীর বাবা রোজ ভোরবেলায় ৪ কিলোমিটার সাইকেলে করে মেয়েকে নিয়ে যেতেন বড় রাস্তায়। সেখান থেকে আরোও ৫ কিলোমিটার দূরে কলেজের মাঠ। সেখানে তিন ঘন্টার অনুশীলন শেষে ঘরে ফেরা। এই ছিল গোমতী ও তার বাবার প্রতিদিনের রুটিন। তার বাবার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য দিনরাত খেটে পরিশ্রম করে খেলাটাকে আয়ত্ত্বে আনছিলেন গোমতী। কিন্তু বাবার সাহায্য বেশিদিন পাননি তিনি। কিছুদিনের মধ্যেই তার বাবা কঠিন অসুখে পড়েন। চিকিৎসক তার বাবাকে ভালো ভালো খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু বাড়িতে ভালো খাবারের জন্য ছিল না কোনো অর্থ। গরুর জন্য বরাদ্দ খাবার থেকে বাবার খাবার বাঁচিয়ে রাখতেন গোমতী। কিছুদিনের মধ্যেই মারা যান তিনি। এর পরেই গোমতী যাকে বাবার আসনে বসিয়েছিলেন তিনি ছিলেন তার কোচ। তবে তিনিও বেশিদিন বাঁচেননি। এই কোচের কাছেই গোমতী শিখেছিলেন অ্যাথলেটিক্স-এর অ,আ,ক,খ। কিন্তু সেই মেয়ে হেরে যায়নি। কিছু সময়ের জন্য কাহিল হয়ে পড়লেও আবারও উঠে দাঁড়িয়েছে সে। আজ যে ভারতীয়দের গর্বের কারণ। সে গোমতী মারিমুথু।

এশিয়ান অ্যাথলেটিক্স-এ দেশের জন্য সোনা এনে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন এই গোমতীই। দোহায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড মিট প্রতিযোগিতা থেকে চীনের ওয়াং চুনিউ-কে হারিয়ে দেশের জন্য সোনা এনেছেন তিনি। গোমতীর কথায়,  এশিয়ান মিটে সোনার মেডেল নিতে তিনি যে কোনোদিন পোডিয়ামে উঠতে পারবেন তা তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি। ৮০০ মিটার রাউন্ডে প্রথম ল্যাপের শেষে একটু পিছিয়ে পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু জেদ কে সম্বল করে তিনি আবার এগিয়ে যেতে থাকেন। একদম শেষ মুহূর্তে ফিনিশ লাইনের কাছে এসে তিনি ওয়াংকে টপকাতে সমর্থ হন। সোনা জেতার পর সেই সোনা গোমতী উৎসর্গ করেন তার বাবা ও তার কোচকে যাঁরা ছিলেন গোমতীর খেলার অনুপ্রেরণা।

তামিলনাড়ুর অখ্যাত গ্রামের সেই গোমতী আজ সেখানে নানা সম্মানে ভূষিত। তিনি জানান, সেই সময় তাঁর বাবার ও কোচের মৃত্যু তাঁকে ভেঙে দিয়েছিলো। কিন্তু তার বাবা মৃত্যুর আগে তাঁকে বলে যান তিনি যেন কোনোমতে খেলা না ছাড়েন। বাবার এবং কোচের শেষ ইচ্ছে পূরণ করার উদ্দেশ্যেই তিনি সবসময় ডুবে থাকতেন অনুশীলনে। তাই সেই অনুশীলনের ফল আজকের এই সাফল্য। বয়স কোনো বাধা নয়। এর পর তিনি এশিয়ান গেমসে যেতে চান, জানালেন ৩০ বছরের গোমতী।

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...