নামকরণ অনুষ্ঠানে ৮ জন জ্ঞানী পুরুষকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন কপিলাবস্তুর লুম্বিনী নগরের মহারাজ শুদ্ধধন। ধূপ জ্বলছে। ধুনো জ্বলছে। পুজো- পাঠ সমাপ্ত। মহারাজ সমাগত পুরোহিত সম্প্রদায়কে জিজ্ঞাসা করলেন ' রাজপুত্রের নাম কি হবে'।
অন্ত বৈশাখের পূর্ণিমা তিথিতে পৃথিবীর আলো দেখেছে মহারাজ শুদ্ধধন এবং মায়া দেবীর পুত্র। পুত্রের জন্মের সাতদিনের মাথায় মায়াদেবী ইহজগৎ ত্যাগ করেছেন। এখন সেই পুত্রের লালনভার মাতা গৌতমীর।
পুরোহিতরা উত্তর দিলেন, ' এই রাজকুমারের মাধ্যমেই পৃথিবীর মানুষ অর্থ, সিদ্ধি লাভ করবে। তাই তিনি সিদ্ধার্থ। এই কুমার রাজা হলে জীবনে অর্থ আর রাজা না হলে বুদ্ধত্ব লাভ করে জগৎকে কৃতার্থ করবেন।
মরণের পর নির্বাণ পেয়ে নিজেও চরিতার্থ হবেন। তাই তিনি সিদ্ধার্থ।'
রাজা তাঁদের কাছে স্পষ্ট করে জানতে চাইলেন কুমার সিদ্ধার্থ রাজা হবেন নাকি সন্ন্যাসের টান ঘরছাড়া করবে তাঁকে?
নামকরণের অনুষ্ঠান মুহূর্তে তর্ক সভায় পরিণত। নানা মুখ নানা কথা বলে। কিন্তু সে সব বড়ই ঘোলাটে। শেষ পর্যন্ত এক নবীন প্রাজ্ঞ বলে ওঠেন, ' মহারাজ, রাজকুমারের বুদ্ধত্ব প্রাপ্তি অনিবার্য। যেদিন তিনি জরা, রোগ, দুঃখের মুখোমুখি হবেন সেদিনই শিকল কেটে ঘর ছাড়বেন তিনি। আর থাকবেন না।'
'বুদ্ধ' শব্দের অর্থ যিনি বোধি লাভ করেছেন।
একদিন রাতে ঘুমন্ত স্ত্রী গোপা আর পুত্র রাহুলের পিছুটান ত্যাগ করে নিঃশব্দে ত্যাগ করলেন রাজপ্রাসাদ। সিদ্ধার্থ মিশে গেলেন নিয়তির পথে।
দুঃখ আর দুঃখের কারণ খুঁজবেন তিনি। লুম্বিনী নগরীর ঘর ছাড়া রাজপুত্র সফল হয়েছিলেন সন্ধানে।
যুগ যুগ ধরে নির্বাণ লাভের পথ দেখিয়ে আসছেন তিনি। অন্ধকারে ধ্রুবতারার মতো স্থির আলোয়।
তিনি বলেছিলেন এই পৃথিবীর সবই অনিত্য। সবই অস্থায়ী। সংস্কার বা দুঃখ সব কিছুরই ধ্বংস অনিবার্য।
মানুষের কর্মই তার সুখ দুঃখের জন্য দায়ী। সাম্য, মৈত্রী, অহিংসার পথ বেছে নিতে হবে মানুষকে।
গৌতম বুদ্ধের উপদেশ অষ্টাঙ্গিক মার্গ হিসেবে লিপিবদ্ধ।
সম্যক দৃষ্টি, সম্যক সংকল্প, সম্যক বাক্য, সম্যক কর্ম, সম্যক জীবিকা, সম্যক ব্যায়াম, সম্যক স্মৃতি, সম্যক সমাধি। এই আট বাক্যে বুদ্ধদেব আসলে জীবনের আট দিক বলে দিয়েছেন।
অতিমারীর প্রকোপে বিশ্বজুড়ে যখন ত্রাহি রব তখন বুদ্ধের দর্শন নিয়ে আরও বেশি করে ভাবছে মানুষ। আলোচনায় উঠে আসছে তাঁর মধ্য পন্থার কথা।
যখন বাঘিনী তার শাবককে মুখে করে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় নিয়ে যায় তখন খুব জোরে বা হালকা কোনও ভাবেই ধরে না। সে যদি খুব শক্ত করে ধরে তাহলে শাবকটি আঘাত পাবে, আর যদি খুব আলগা করে ধরে তাহলে সে পড়ে যাবে।
জীবনকে বুদ্ধ এভাবেই দেখতে শিখিয়েছিলেন।