সমুদ্রের উপকূল জুড়ে যেন মেলা। সারি সারি তারা হেঁটে চলেছে। বড়ো, ছোট দল বেঁধে। অনেক দূরের পথ হাঁটতে হবে। সেই ভিড়ের মধ্যে থেকেই একজন দলছুট, পিছিয়ে পড়েছে। কেউ মনে রাখেনি তাকে। কিন্তু সে নিজের প্রয়োজন টুকু জানে। গন্তব্যে তাকেও পৌঁছতে হবে। হয়ত জানেনা সামনে প্রতিবন্ধকতা অনেক। তবুও অজানা সাহস সঞ্চয় করে এগিয়ে চলেছে। হাঁটছে, পড়ছে আবারও উঠছে। ফ্লেমিঙ্গো। মানুষদের থেকে যাঁরা একটু এগিয়েই। কারণ জেতার জন্য একরোখা লড়াইটা লড়তে জানে। মানুষও জানে কিন্তু সকলে পেরে ওঠেনা।
মধ্য আফ্রিকার লবণ হ্রদ এদের ঠিকানা। বৃষ্টি হলেই হাজার মাইল পেরিয়ে কিনারায় কাছে এসে যায়। খাদ্য বলতে নীলাভ সবুজ শৈবাল জন্মায়। কিনারায় আসার আরও একটা কারণ বংশবৃদ্ধি। আফ্রিকায় প্রায় কুড়ি লক্ষ পাখির জন্মস্থান এই হ্রদ। একটা নাচের মধ্য দিয়ে এরা সঙ্গী পছন্দ করে। তারপরে ঘর বাঁধে। এরপর আসবে সন্তান। স্বামী স্ত্রী দুজনে মিলেই ডিমে তা দেয়। তিরিশ দিন পর ফুটে ওঠে নতুন প্রাণ। পৃথিবীকে দেওয়া প্রাণীর শ্রেষ্ঠ উপহার। জন্মের পর মা বাবার পেটে জমা এক লালা রস খেয়ে জীবনধারণ করে। ততদিনে আবার লবণ হ্রদ এর জল শুকিয়ে গিয়েছে। প্রকৃতির নিয়ম। কিন্তু বেঁচে থাকতে গেলে যে জল প্রয়োজন।
সবথেকে কাছের জলের ঠিকানা পঞ্চাশ কিমি দূরে। বাচ্চারা আবার উড়তে শেখেনি। হেঁটেই পৌঁছতে হবে। বড়দের দেখানো পথে হাঁটা শুরু। তবে স্বাভাবিক ভাবে দলছুট হয় কেউ। শুরু হল প্রতিকূলতার সঙ্গে যুদ্ধ। কেউ কেউ হাল ছেড়ে দেয়। আর হাল ছেড়ে দেওয়া মানে মৃত্যু। কিন্তু হাল ছাড়েনা একজন। সেই নায়ক। এগিয়ে চলে। বেঁচে থাকার জন্য অন্তহীন পথ হাঁটা। হতে পারে এতটা পথ। একে একে বাঁধা আসে ততক্ষণে আবার পায়ে লবণ জমেছে। হাঁটা এবারে অসম্ভব। জমাট বাঁধা লবণের ভার সামলাতে না পেরে যায় শিশু নায়ক।
কিন্তু চেষ্টার চলতেই থাকে। অবিরাম চেষ্টা। বাকিরা পৌঁছেছে গন্তব্যে। ওর অজান্তেই। ও শুধু নিজের লড়াই ভাবছে। দীর্ঘ যাত্রায় ধীরে ধীরে খসে পড়েছে পায়ের লবণ। আবারও জমতে পারে। কারণ জলেও থাকে লবণ। সেও আগে থাকতেই সতর্ক। একটা প্রশ্ন না চাইতেও ভাবাচ্ছে, কীভাবে পৌঁছবে? আসলে উড়তে না জানলেও জানে সাঁতার। একজন দক্ষ সাঁতারু। সাঁতরেই জিততে হবে। অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। শেষটুকু দেখতেই হবে।
ও বোঝে পিছিয়ে পড়া মানেই হেরে যাওয়া। আর সেটা বিশ্বাস করেনা বলেই একসময় পৌঁছয় কাঙ্খিত গন্তব্যে। জীবনের ঠিকানায়। শুরু হল বাকিদের সঙ্গে, একসঙ্গে বেঁচে থাকা। এইভাবে অনেক জয়ের গল্প অজানাই থেকে যায়। ভাইরাস যেমন অজানা, তেমন মানুষও জানে কীভাবে জিততে হয়।