আবার বসবে মুঘল রাজদরবার। আগামী ২৩ জুন, রবিবার, এক আষাঢ়ে বিকেলে সাবর্ণ রাজপরিবারের বড়িশার ‘বড়বাড়ি’তে মুঘল দরবারের রাজকাহিনী শোনাতে হাজির থাকবেন মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবরের ২৭তম বংশধর। সুদূর ওমান থেকে আসবেন তিনি। মমতাজ হোসেন চৌধুরী। সঙ্গে তাঁর স্ত্রী মৈত্রেয়ী চৌধুরী এবং কন্যা অমৃতা চৌধুরী। বাহাদুর শাহ জাফরের মেজ ছেলে রুকুদ্দিন হোসেনের বংশধর মমতাজ হোসেন। মুঘল রাজবারের গল্প শোনাবেন তিনি। মুঘল সাম্রাজ্যের নানা অকথিত কাহিনী, অন্দর, বাহির, শাসক-শাসিতের গল্প। গল্পের ছলে উঠে আসবে ইতিহাসের আড়ালে থেকে যাওয়া গুরুত্বপূর্ন তথ্য।
ইতিহাসবিদ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সকলেই উপস্থিত থাকতে পারবেন ‘মুঘল রাজদরবারে’। ইতিহাসের কাহিনী তুলে ধরার এই উদ্যোগ সাবর্ণ রাজ পরিবারের। বাংলার প্রাচীনতম জমিদার পরিবারগুলির মধ্যে অন্যতম সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার। বাংলার বারো ভুঁইয়া তথা সাবর্ণ রায় চৌধুরীদের সঙ্গে মুঘল রাজদরবারের সম্পর্ক প্রায় ৪৮০ বছরের পুরনো। এই পরিবারের পঞ্চানন গঙ্গোপাধ্যায় পঞ্চদশ শতাব্দীতে মুঘল সাম্রাজ্যের পাঠান বাহিনীতে অশ্বারোহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন।পঞ্চানন গঙ্গোপাধ্যায় মুঘল সৈন্যের সেনাপতি পদে থেকে শের খাঁকে পরাজিত করেন। এই সাফল্যে খুশি হয়ে মুঘল সম্রাট তাঁকে “শক্তি খাঁ” উপাধি প্রদান করেন। সেই থেকে পঞ্চানন গঙ্গোপাধ্যায় “পাঁচু শক্তি খাঁ” নামে বিশেষ পরিচিতি পান। সম্রাট হুমায়ুনের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল তাঁর।
পাঁচু শক্তিখান সম্রাট জাহাঙ্গীরের থেকে ৪৫টি গ্রাম সহ হাভেলি পরগনার জায়গির পেয়েছিলেন।পঞ্চদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে হাভেলি শহর বা হালিশহরে তিনি একটি প্রাসাদ নির্মাণ করেন।সাবর্ন রাজ পরিবার এখান থেকেই উত্তরপাড়া, বিরাটি ও বড়িশা সংলগ্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। কলকাতার পত্তন হয় আরও পরে। সুতানুটি, গোবিন্দপুর ও কলিকাতা এই তিনটি গ্রাম ছিল মুঘল শাসকদের খাসমহল। আর এই খাসমহল দেখাশোনার দায়িত্বে ছিল সাবর্ণ রাজ পরিবারের ওপর। তাঁরা প্রথমে ‘গঙ্গোপাধ্যায়’ পদবীধারী ছিলেন। পরে আকবর ও জাহাঙ্গির তাঁদের ‘রায়’ ও ‘চৌধুরী’ উপাধি প্রদান করেন।
ইতিহাসকে ফিরে দেখার জন্য আবার বসবে মুঘল দরবার। উদ্যেশ্য, তথ্য- তত্ত্বের গুরুপাক ছেড়ে গল্প-কথার সহজ ভাষায় অতীতকে তুলে ধরা। হতেও পারে অতীতের ধুলো ঝেড়ে সাধারণের সামনে উঠে আসবে কোনও অজানা ইতিহাসের গুপ্তধন।