চুর্নি নদীর তীরে নদীয়া জেলার এই 'ব্রহ্মডাঙ্গা'র অদূরেই বর্ডার পেরোলেই বাংলাদেশ। ১৯৪৭ এ দেশভাগের পর ছিন্নমূল মানুষের একমাত্র আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছিল কাছের এই শহর। যদিও আশ্চর্যের ব্যাপার হলো ২ দিনের জন্য এই শহর ছিল পূর্ব পাকিস্তানের ভাগে। কিন্তু ৩ দিনের দিন আবার ভারতের অন্তর্ভুক্তি ঘটে এবং কালক্রমে এই নামও পরিবর্তিত হয়। নাম পরিবর্তনের পিছনে নানা গল্প আছে , আছে বিতর্ক ও মতভেদ। কিন্তু এই শহরের ইতিহাস নেহাতই সাদামাটা নয়। এই চূর্ণী নদীরে তীরে কথিত আছে ডাকাতদের ডেরা ও তাদের আধিপত্যের কথা, এখানে বিশাল কালী পুজো করতো সর্দার রানা ডাকাত। কালক্রমে সেই ডাকাতের ভয়ে 'রানা ডাকাতের ঘাঁটি' বা 'রানাঘাট' নামে পরিচিত হলো ব্রহ্মডাঙ্গা। আবার অনেকের মতে নদিয়ার রাজপরিবারের রানীদের স্নানেরঘাট ছিল এটি, অনেকে রাজপুত রানাদের স্মৃতির ইতিহাস খোঁজেন।.....
তবে নাম পরিবর্তন যে কারণেই হোক না কেন রবীন্দ্রনাথ থেকে নজরুল, বিভূতিভূষণ, গিরিজানাথ মুখোপাধ্যায় সকলেরই আসা যাওয়া ছিল এখানে। আবার নীলবিদ্রোহের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ছিল এই ব্রহ্মডাঙ্গা তথা রানাঘাট, যার বিস্তারিত বিবরণ পাই দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটকে। শিশিরকুমার বসু, কেশবচন্দ্র মিত্রের মতো মানুষের ঠিকানা ছিল এটি।
সাহিত্য সংস্কৃতিতে অন্যতম এই শহর কলকাতার থেকে বয়েসে কিছুটা হলেও প্রবীণ। এখানেই এশিয়ার প্রথম রবীন্দ্রভবন তৈরী হয়েছিল। সাঙ্গীতিক ক্ষেত্রেও রানাঘাটের নিজস্ব সঙ্গীত ঘরানা আছে….যার প্রতিষ্ঠাতা নগেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য্য। স্থাপত্যের দিক থেকে স্কটিশ স্থাপত্যের সন্ধান মেলে পালচৌধুরীর জমিদার বাড়ির, যেখানে ৩০০-র বেশি ঘর আছে, আছে টেরাকোটার ভাস্কর্য সমন্বিত কৃষ্ণ মন্দির। আধুনিকতার স্বাদ এসেছে নানা খাবারে কিন্তু মূলত পান্তুয়া (জগু ময়রার) তার অভিজাত্যটুকু বজায় রেখেছে। তবে আধুনিকতার সঙ্গে পা ফেলে এই ব্রহ্মডাঙ্গা নাম পাল্টে অনেক আগেই হয়েছে রানাঘাট।.... আধুনিকতার ছাপ সুস্পট হলেও সেই ঐতিহ্যের প্রবহমানতার ইঙ্গিত দেয় চূর্ণী নদীর এই ঘাট।