টাইটানিক ডুবি দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিত চক্রান্ত

টাইটানিক সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা গেলেও বেশ কিছু এখনও অজানা। টাইটানিক সত্যিই ডুবেছিল, না কি নেপথ্যে রয়েছে অন্য কোনও রহস্য! প্রমান অবশ্য পাওয়া গেছে। টাইটানিক ডুবির গবেষনা থেকে উঠে আসে অবাক করা কিছু তথ্য। জানা যায়, এটি নিছকই দুর্ঘটনা নয়- ছিল পরিকল্পিত চক্রান্ত

টাইটানিকের মালিকানা প্রতিষ্ঠান ‘হোয়াইট স্টার লাইন’ (white star line) তাদের পুরোনো জাহাজের জন্য ক্ষতিপূরণের অর্থ আদায় করতে সবচেয়ে বড়ো মিথ্যার আশ্রয় নেয় । হোয়াইট স্টার লাইন’ এর হুবহু একই রকমের দুটি জাহাজ ছিল : অলিম্পিক (Olympic) ও টাইটানিক (titanic) ।

তথ্য অনুযায়ী, তারা টাইটানিকের নাম করে অলিম্পিককেই পরিকল্পিত ভাবে ডুবিয়ে দেয়। কিন্তু এর পিছনে এমন কী উদ্দ্যেশ্য ছিল?

হোয়াইট স্টার লাইন’ ৩ টি বিলাস বহুল জাহাজ নির্মাণের পরিকল্পনা করে : প্রথমে অলিম্পিক,  তারপর টাইটানিক ও শেষে ব্রিটানিক। ১৯১১ সালের ১৪ই জুন অলিম্পিক প্রথম যাত্রা শুরু করে। ওই বছরে ২০শে সেপ্টেম্বর অলিম্পিক তার পঞ্চম যাত্রায় ব্রিটিশ যুদ্ধ জাহাজ HMS HAWK এর সঙ্গে ধাক্কা লেগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন হোয়াইট স্টার লাইন’ সেটির মেরামতির জন্য বীমা কোম্পানির দ্বারস্থ হলে বীমার নিয়মানুযায়ী ওই জাহাজ ক্ষতিপূরণের শর্ত বহির্ভূত বলে পরিগণিত হয়।

অন্যদিকে টাইটানিক সে সময় নির্মাণাধীন থাকায় হোয়াইট স্টার লাইন প্রায় দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়। ইতিমধ্যে তাদের বিলাসবহুল টাইটানিকের জন্য বিনিয়োগে সম্মত হন আমেরিকার কুখ্যাত বিনিয়োগকারী জে পি মরগান। এদিকে হোয়াইট স্টার লাইন এর মালিক ব্রুস ইসমেও ছিলেন কুট ব্যবসায়ী। দুই দুর্নীতিপূর্ণ ব্যবসায়ী বীমা জালিয়াতির পরিকল্পনা করেন।

ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজ অলিম্পিক এর জন্য বীমা কোম্পানি ক্ষতিপূরণের টাকা না দিলেও নতুন জাহাজ টাইটানিক যদি ডুবে যায় তাহলে তারা পুরো টাকা দিতে বাধ্য। তখনই পরিকল্পনা করে অলিম্পিকের নাম বদলে টাইটানিক রাখা হয় ও টাইটানিক নামধারী পুরোনো অলিম্পিককেই পরিকল্পনা মাফিক ডোবানো হয়। দুই ধূর্ত ব্যবসায়ী অলিম্পিককে কোনো রকমে চলার উপযুক্ত করে সাউদাম্পটন বন্দরে এনে পূর্ণাঙ্গ মেরামতির জন্য বেলফাস্টে নিয়ে আসা হয়। তখন বেলফাস্টে টাইটানিকের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ। অলিম্পিক ও টাইটানিক ভিতরে ও বাইরে সবদিক থেকে দেখতে হুবহু একই রকম ছিল। পাশাপাশি রাখলে বিভাজন অসম্ভব।

১৯১২ সালের মার্চের প্রথম সপ্তাহে দুটি জাহাজ পাশাপাশি রাখা হলেও সুযোগ বুঝে সবচেয়ে বড় হাতসাফাইটি করা হয় এক রাতের মধ্যেই। হোয়াইট স্টার লাইন দাবি করে ১৯১২ সালের মার্চ মাসের ৭ তারিখে অলিম্পিক মেরামতি শেষ করে বেলফাস্ট থেকে রওনা দেয়। কিন্তু সেটি ছিল নতুন জাহাজ ‘টাইটানিক’ , যেটি ‘অলিম্পিক’ নাম দিয়ে বেলফাস্ট থেকে বেরিয়ে যায় । ঠিক ৩ সপ্তাহ পরে ‘টাইটানিক ‘ নামধারী অলিম্পিক জাহাজ তার প্রথম যাত্রার প্রস্তুতি নেয়।

এইবার যতবার ‘টাইটানিক’ কথাটি বলা হবে তা আদপে ‘অলিম্পিক’  তা ভুললে চলবে না। ঘটনাগুলো পর পর সাজালে সন্দেহের উদ্রেক অমূলক নয়, আবার তার যথার্থতাও প্রমাণিত। টাইটানিক মানে অলিম্পিককে প্রথম যাত্রার জন্য বেলফাস্ট থেকে সউদাম্পটনে আনা হলে বহুকর্মী জাহাজ থেকে ইস্তফা দিয়ে নেমে আসে, কারণ তারা জানত,  ইচ্ছাকৃত ভাবে কিছুদিনের মধ্যেই এই জাহাজ ডোবানো হবে।

FotoJet (201)

সে সময় ব্রিটেনে জাতীয় কয়লা ধর্মঘট এর কারণে বহু জাহাজ বন্দরে আটকে ছিল। হাজার হাজার নাবিক কর্মহীন । এই অবস্থায় এত জনের ইস্তফা অনেকেরই চোখে পড়েছিল। আরো সন্দেহের কারণ, যাত্রা শুরুর আগে আগেই মালিক মরগান সহ ৫০ জন ‘ফার্স্ট ক্লাস’ যাত্রা বাতিল করে।  ১৯১২ সালের ১০ই এপ্রিল সাউদাম্পটন থেকে যাত্রী নিয়ে নিউ ইয়র্কের দিকে যাত্রা শুরু করে টাইটানিক নামধারী অলিম্পিক । জাহাজের প্রথম যাত্রায় ভ্রমণ আভিজাত্যের পরিচায়ক। টাইটানিকের মালিকরা চিন্তায় ছিলেন যে, যখন তারা জাহাজ ডোবাবে এতো যাত্রীর কি হবে ? এই উদেশ্যে পরিকল্পনামাফিক উদ্ধারকারী জাহাজ তৈরী রাখা হয়।

মরগানের অন্য একটি পণ্যবাহী জাহাজ ‘ক্যালিফোর্নিয়ান’ লন্ডন বন্দরে কয়লা ধর্মঘটে আটকে ছিল। হঠাৎ করেই তা আমেরিকার দিকে যাত্রা করে কোনো যাত্রী ছাড়াই, শুধু ৩০০০ কম্বল ও শীতবস্ত্র নিয়ে, এককথায় উদ্ধারকারি জাহাজে যা যা মজুত থাকার কথা তাইই ছিল। যদিও তাতে পর্যাপ্ত কয়লা না থাকায় বেশি দূর যাওয়া অসম্ভব ছিল না সেটির পক্ষে। কিন্তু CALIFORNIAN এর ক্যাপ্টেন ১৪ই এপ্রিল মাঝ সাগরে ইঞ্জিন বন্ধ করে দেন।

সামনে থাকা একাধিক জাহাজ হিমশৈলের সন্ধান দিলেও, এমনকি রাডারে তা ধরা পড়লেও গতি কমানোর কোনো চেষ্টাই করেনি টাইটানিক অর্থাৎ অলিম্পিক। টাইটানিক ইচ্ছাকৃত ভাবে হিমশৈলের দিকে এগিয়ে যায়। পরবর্তীকালে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের সময় দ্বিতীয় অফিসার জানান- রাতে ডিউটি শেষে তিনি দেড় থেকে ২ মাইল দূরে হিমশৈল দেখেন। জাহাজ ঘুরিয়ে দুর্ঘটনা এড়াবার মতো যথেষ্ট সময় ছিল। তাই কন্ট্রোল রুমে জানানোর প্রয়োজন বোধ করেননি তিনি। ১৪ই এপ্রিল ১১:৪৫ হিমশৈলে ধাক্কা লাগার সাথে সাথে নীচের ৫ টি কম্পার্টমেন্ট একেবারে ভেঙে যায়। হোয়াইট স্টার লাইন এর পরিকল্পনা মতো টাইটানিক বিশাল দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়।

৩৫ মিনিট অতিক্রান্ত হওয়ার পর ক্যাপ্টেন রেডিও বার্তা পাঠায় টাইটানিককে উদ্ধারের জন্য। অথচ জাহাজ ডুবতে ৩৫ মিনিট যথেষ্ট সময়। ডুবতে শুরু করার ১ ঘন্টা ৩৫মিনিট পর নামানো হয় লাইফ বোট। এমনকি তাও ছিল অর্ধেক যাত্রীর জন্য। সেগুলোকে প্রথমে অর্ধেক ভর্তি হতে না হতেই ছেড়ে দেওয়া হয়। এক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।

FotoJet (200)

(Left: White Star Line Chairman, J.Bruce Ismay, Right: Owner of White Star Line, J.P. Morgan)

ক্যাপ্টেন ক্যালিফোর্নিয়ানের জন্য বসে থাকলেও তার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি ওই সময়। রাত ২ টোর মধ্যেই জাহাজ ২ টুকরো হয়ে তলিয়ে যায়। প্রায় ১৫০০ যাত্রী ডুবে যায় আটলান্টিকের হিম শীতল জলে। লাইফ বোটের যাত্রীদের উদ্ধার করা হয় পরদিন সকালে। এর ১ মাস পর দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে যারা ফিরে আসে তাদের ২৪ ঘন্টা আটকে রাখা হয়। হোয়াইট স্টার লাইন’ এর উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা তাদের হুমকি দেন যে টাইটানিক নিয়ে কোনও তথ্য বাইরে গেলে তাদের অবস্থাও ওই টাইটানিকের মতোই হবে। রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা হারানোর ভয়ে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারও বিষয়টি তদন্ত না করেই ধামাচাপা দেয়। এভাবে টাইটানিক নামধারী অলিম্পিক জাহাজ আজও আটলান্টিকের নিচে শুয়ে আছে।

আর আসল টাইটানিক, অলিম্পিক নাম নিয়ে ১৯৪৫ এর ৫ই এপ্রিল পর্যন্ত দীর্ঘ ২৫ বছর সচল থেকে অবসর নেয়। যুদ্ধ জাহাজের সাথে ধাক্কা খেয়ে মেরামতির পর অলিম্পিক কোনো ভাবেই ২৫ বছর পরিবহযোগ্য ছিল না। গবেষণার মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে উঠে এসেছে সত্য যা দ্বিধাহীন ভাবে প্রমান করে কিছু অর্থলোভী কুট ব্যবসায়ীর স্বার্থের শিকার এই চক্রান্তমূলক দুর্ঘটনা। ও একই সাথে মরগ্যান জ্যাকব অ্যাস্টর, ইসিদোর স্ট্রাস এবং বেঞ্জামিন গাগেনহেম ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বীদের হত্যার চক্রান্ত করেন যা সফল হয় ব্রুস ইসমে সাহায্যে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...