জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে নাটকের সূচনা হয়েছিল এবং তা বাংলার নাটক তথা থিয়েটার জগতে যথেষ্ট সাড়া ফেলেছিল। যদিও জোড়াসাঁকো নাট্য শালা বেশি দিন টেঁকেনি। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ বোম্বাই চলে যাওয়ার ফলে নবনাটকের অভিনয় বন্ধ হয়ে গেল, সেই সঙ্গে সঙ্গে জোড়াসাঁকো নাট্যশালাও বন্ধ হয়ে গেল। জোড়াসাঁকো নাট্যশালা বন্ধ হয়ে গেল ঠিকই কিন্তু বাংলা নিজস্ব ধারায় নাটক এর যাত্রা শুরু হয়ে গেল। গুণেন্দ্রনাথ, গগনেন্দ্রনাথ, জ্যোতিরিন্দ্রনাথদের নাটকের প্রতি আকর্ষণ গড়ে ওঠে তাঁদের পিতা ও পিতামহের কাছ থেকে। জ্যোতিরিন্দ্রনাথের নাটকের প্রতি ভালোবাসা ছোটবেলা থেকেই।
আবার নাট্য জগৎ এ এলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ তাঁর সরোজিনী নাটক নিয়ে। তাঁর সরোজিনী নাটক প্রথম অভিনয় হল সিগ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটারে। সেকালের বিখ্যাত নট ও নটীরা যেমন বিনোদিনী ও অমৃতলাল বসু এই নাটকে অভিনয় করেছিলেন। এই নাটকটি প্রচুর খ্যাতি লাভ করলো। সরোজিনী নাটকটির সময়ে রবীন্দ্রনাথ কিশোর। এই নাটকটিতে রাজপুত রমনীদের প্রবেশের দৃশ্যের সংলাপ শুনে রবীন্দ্রনাথ তার জ্যোতিদাদাকে অনুরোধ করলেন এখানে সংলাপ না দিয়ে কবিতা দেওয়ার জন্য। আর সঙ্গে সঙ্গে রবি লিখে ফেললেন জ্বল জ্বল চিতা দ্বিগুন দ্বিগুন/পরাণ সঁপিবে বিধবা বালা গানটি। ওই দৃশ্যে গানটি একটি অন্য মাত্রা নিয়ে এল। অশ্রুমতির বেলা পরবর্তী নাটক। এটি মঞ্চস্থ হল পাবলিক স্টেজে। নাটকের কলাকুশলীরা শুধু মাত্র ঠাকুর পরিবারের সদস্যদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলো না। বাইরে থেকে অনেকেই এলেন, যা একেবারে অন্য ব্যাপার। কিন্তু তখনকার সময়ের মেয়েদের কাছে এসব শুধুই শোনা কথা, কারন তখন মেয়েদের অনুমতি নেই নাটক দেখার। এই নাটক জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ির মেয়েদের জন্য ছিল না। বাড়ির অন্দরমহলের ঘুলঘুলি দিয়ে যা একটু দেখা যায়। কিন্তু তাতে কি কারুর সাধ মেটে? তাদের খুব ইচ্ছা হয় নাটক দেখার। তাদের এই ইচ্ছা পূরণের জন্য বাড়ির ছেলেরা ব্যস্ত হয়ে পড়ল কি করে সম্ভব করে তোলা যায় বাড়ির মহিলাদের নাটক দেখা।