কোন এক অজানা পথ। ভেসে আসছে মেঠো সুর।
অথবা শহুরে কোন রাস্তা যেখানে শোনা যাচ্ছে কিচিরমিচির। মানুষের।
কত গল্পরা এভাবেই জন্ম নেয় আমাদের আশেপাশে। অথবা জীবনের মধ্যে লুকিয়ে থাকে ছোট-ছোট গল্প। সেই সাজিয়ে রাখা গল্পগুলো আমরা খুঁজে পাই থিয়েটারে।
রঙ্গমঞ্চ মানে শুধু একটা কোন কাল্পনিক জগত নয়। জীবনের সত্যিগুলো লুকিয়ে থাকে এই শিল্পে।
গ্রাম, শহর, রাজ্য, দেশ ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে রয়েছে এই উচ্চমানের শিল্প।
আচ্ছা এই শিল্পের সব সরঞ্জাম যদি পাওয়া যায় এক ছাদের তলায়! কোথায়?
নাট্য-জাদুঘর। পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র নাট্য-সংগ্রহশালা।
নাট্য-শোধ সংস্থান থিয়েটার জাদুঘর।
দু'বছর আগে ভারতের সংস্কৃতি দপ্তরের তরফ থেকে উদ্বোধন করা হয়েছিল এই মিউজিয়ামের।
এই জাদুঘরের ঠিকানা সেক্টর ২, সল্টলেক, কলকাতা ৯১।
সপ্তাহের সাত দিনই সকাল এগারোটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকে এ জাদুঘর।
প্রবেশ মূল্য কুড়ি টাকা। তবে কিছু নির্দিষ্ট অংশ ঘুরে দেখা যায় এই জাদুঘরের। প্রকৃতপক্ষে এই জাদুঘরটি শুরু হয়েছে থিয়েটার বা নাটক নিয়ে গবেষণাকারীদের জন্য।
কিন্তু জীবন নিয়ে আগ্রহ বোধহয় সকলেরই সমান। আর থিয়েটার জীবনের সমার্থক। তাই এই জাদুঘরের কিছু অংশ সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে খুব সম্প্রতি।
২০১৮ সালের ২৫শে আগস্ট প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এবং ভারতরত্ন প্রণব মুখোপাধ্যায় উদ্বোধন করেছিলেন এই জাদুঘরের।
থিয়েটার জগতের এক গুরুত্বপূর্ণ নাম নাট্য শোধ সংস্থান। ১৯৮১ সালে জন্ম এই সংস্থার। থিয়েটারের মত এমন শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছে এই সংস্থার সদস্যরা।
মূলত এঁদের উদ্যোগ এবং ভারত সরকারের আনুকূল্যে প্রতিষ্ঠা হয়েছে এই জাদুঘরের।
এই জাদুঘরে মূলত তিনটি গ্যালারি রয়েছে সংস্কৃত রঙ্গমঞ্চ, লোকশিল্পের রঙ্গমঞ্চ এবং আধুনিক রঙ্গমঞ্চ।
সংস্কৃত সাহিত্যের কিছু কালজয়ী নাটকের রিপ্রেজেন্টেশন রয়েছে এই অংশে। শকুন্তলা নাটকের একটি বিশেষ অংশকে বিভিন্ন পুতুলের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে এখানে।
এছাড়াও বিভিন্ন নাটকে ব্যবহৃত পোশাক, গয়না এমনকি কাল্পনিক প্রাণীদের চামড়াও রয়েছে।
নাটক সংক্রান্ত নানা লোকশিল্প রয়েছে এই দেশ জুড়ে। নৌটঙ্কি, তামাশা, রাসলীলার মত লোক-নাট্যশিল্পের প্রদর্শন করা রয়েছে বিভিন্ন জিনিষপত্রের মাধ্যমে।
সময়ের হাত ধরে থিয়েটারের জগত পরিবর্তিত হয়েছে। কস্টিউম, গয়নার ধরন বদলেছে। আধুনিক থিয়েটারের নানা অংশ সাজানো রয়েছে এই জাদুঘরের তৃতীয় গ্যালারিতে।
তবে এই তিনটি গ্যালারি ঘুরে দেখার অনুমতি মিলতে পারে গবেষণার প্রয়োজনে।
এছাড়াও নাটক সংক্রান্ত বিরল সব তথ্য, পত্রিকা, গদ্য সংরক্ষিত রয়েছে এই জাদুঘরে। এসব কিছুই সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত।
তবে খুব সম্প্রতি প্রশাসনের তরফ থেকে এই জাদুঘরের তিনটি গ্যালারিও সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করার চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে।
অনেক নতুন দুষ্প্রাপ্য নথি সংগ্রহ করা হচ্ছে এই জাদুঘরের জন্য। আগামীদিনে থিয়েটারপ্রেমী মানুষদের কাছে এই জাদুঘর দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে এমনটাই ধারণা।