ব্যাডগার্লের মন্দির

মন্দির, এমন এক জায়গা যেখানে দেবদেবীর পুজো আরাধনা করা হয়। দেবতাদের কাজ দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন করা। তাই তাঁরা আমাদের আরাধ্য, কিন্তু এই বাংলায় এমন এক মন্দির রয়েছে যেখানে সেই দুষ্টকেই ঘটা করে পুজো করা হয়।
 
সাধারণত শোনা যায়, দেবতারাই মূলত স্বপ্নে এসে দেখা দিয়ে তাঁদের পুজো করতে বলেন, তার পরেই পুজোর প্রচলন হয়।
 
কিন্তু কখনও কি শুনেছেন রাক্ষসেরাও স্বপ্নে এসে পুজো করতে বলে, না শুনে থাকলে পড়ে ফেলুন। এমনটাই হয়েছিল, গঙ্গাপাড়ের বিখ্যাত জনপদ চন্দননগরে, সেখানকার বিখ্যাত রাক্ষুসে বাড়িতে চার পুরুষ ধরে এক রাক্ষসী পূজিতা হচ্ছেন। ঐ বাড়িতে পুতনা রাক্ষসীর পুজো হয়।
 
পুরান অনুযায়ী, শ্রীকৃষ্ণকে হত্যা করতে মহারাজ কংস পুতনাকে পাঠিয়েছিলেন। পুতনা কংসের আদেশ মতো কৃষ্ণকে হত্যা করতে বৃন্দাবনে গিয়ে উপস্থিত হয়। কৃষ্ণ তখন শিশু, তাকে বিষ মাখানো স্তন্যপান করিয়ে হত্যা করার চেষ্টা করে পুতনা। যদিও তিনি ব্যর্থ হন। পৌরাণিক তথ্যকে প্রামান্য ধরে সেই বর্ণনা অনুযায়ীই এই রাক্ষসীর মূর্তি তৈরি করা হয়েছিল। অধিকারী বাড়ির বর্তমান পুরুষ গৌর অধিকারীর ঠাকুরদাই এই রাক্ষসী মূর্তি স্থাপন করার স্বপ্নদেশ পেয়েছিলেন। তারপরেই এই রাধাগোবিন্দ মন্দিরে রাক্ষসীর মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়। যদিও অধিকারী বাড়ির রাধাগোবিন্দ মন্দিরটি প্রতিষ্টিত করা হয়েছিল ফরাসিদের আগমনেরও আগে। হুগলি জেলার চন্দননগরের নিচুপট্টি এলাকার অধিকারী বাড়িতে প্রবেশ করলেই সর্ব প্রথম নজরে আসবে মন্দির ও তার পাশের রাক্ষসীর মূর্তি।
মূর্তিটির চোখ দুটি জ্বলছে, বড় বড় দুটি দাত বেরিয়ে আছে মুখের পাশে দিয়ে। মন্দিরের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করা এই রাক্ষসীর মূর্তির কোলে রয়েছে শিশু শ্রীকৃষ্ণ। মূর্তিটিকে দেখলে কিঞ্চিৎ ভয়ই অনুভূত হয়। আজও এই রাক্ষসীর নিত্যপুজো চলে আসছে।
 
ওই একই মন্দিরে রয়েছেন রাধাগোবিন্দ, জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রা। সকলেরই তিন বেলা নিত্য পুজো করা হয়। এক সাথেই ভোগ নিবেদন করা হয়। ভগবানদের সঙ্গেই ভগবানদের মতোই পুজা পান পুতনা রাক্ষসীও। দূরদূরান্ত নিলে বহু মানুষ এই বিচিত্র মন্দির দর্শন করতে আসেন। চন্দননগরের প্রসিদ্ধ জগদ্ধাত্রী পুজো ও রথযাত্রার সময়ে অধিকারী বাড়ির এই মন্দিরে সবচেয়ে বেশি জনসমাগম হয়। এই অধিকারী বাড়িকেই অনেকে রাক্ষসী বাড়ি বলে থাকেন। এখানেই দেবতা ও রাক্ষসী, দুজনেই একইসঙ্গে পূজিত হয়।
 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...