যত দিন যাচ্ছে, আমাদের চারপাশের পরিস্থিতি ভালো হচ্ছে, তা বলা যায় না। সমাজকে কলুষিত করতেই যেন কিছু শ্রেণীর লোকজন উঠে-পড়ে লেগেছে। কিছুদিন আগে পর্যন্তও যেখানে মেয়েরা নিজেদের নিরাপদ বোধ করত, এখন সেখানে প্রতি পদে নিজেদের সুরক্ষা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে নারীসমাজকে। দিনের পর দিন এই যে সামাজিক অবক্ষয়, তার দায় নেবার মত সৎ সাহসও দেখতে পারছেনা কেউই। এই বাড়তে চলা সামাজিক অবক্ষয় গ্রাস করছে আমাদের সুস্থ স্বাভাবিক জীবনের নিশ্চিত দিনযাপনকে। এই অবক্ষয় যে শুধুমাত্র একটি বিশেষ সামাজিক পরিকাঠামোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে তা কিন্তু নয়। নিত্যদিনের বাসে-ট্রেনে, বাজারে-সিনেমা হলে, রাস্তা-ঘাটে এমনকি বিভিন্ন স্কুলেও অনবরত ঘটে চলেছে মহিলাদের ওপর নির্যাতন। কোথাও তার প্রতিবাদ হয়, কোথাও বা হয়না। কেউ সরব হন, কেউ আবার সামাজিক লাঞ্ছনার ভয়ে নীরবেই সব সহ্য করেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবসাদের শিকার হন এই রকম পরিস্থিতিতে পড়া মানুষ। এ ছাড়াও রয়েছে আত্মসুরক্ষার জ্ঞান না থাকা।
এই রকমই পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর থেকে ন্যূনতম পরিকাঠামো আবশ্যিক করতে চায় কেন্দ্র। সার্বিকভাবে সব পড়ুয়াদের আত্মসুরক্ষার পাঠ দিতে বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে পরিকাঠামো তৈরী করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রের তরফে। অল ইন্ডিয়া সার্ভে অন হায়ার এডুকেশন ( এআইএসএইচই )- এর পোর্টালে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কিছু তথ্য আপলোড করতে বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার মত পরিষেবা আছে কি না, মক ড্রিল বা নকল মহড়া করানো হয় কি না, পড়ুয়াদের জন্য কাউন্সিলিং-এর ব্যবস্থা আছে কি না এগুলি বিশদে পোর্টালে তথ্য সমেত আপলোড করতে হবে। এছাড়াও ক্লাসরুম কত, পড়ুয়া-শিক্ষকদের অনুপাত কত, প্রতি বছর ছাত্র-ছাত্রী ভর্তী কেমন হয়- এগুলি তো আছেই যা নিয়মিত পোর্টালে আপলোড করতে হবে। আরও কিছু নতুন তথ্য জানাতে হবে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, বিপর্যয় মোকাবিলা ব্যবস্থা আছে কি না, জরুরি পরিস্থিতি তৈরী হলে সেক্ষেত্রে কি করা দরকার, তার জন্য ফ্যাকাল্টিতে কোনও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে কি না, কোথায় কোথায় কি কি খামতি রয়েছে, তার পর্যালোচনা করে তাও পোর্টাল জানাতে হবে। এছাড়াও পড়ুয়ারা কোনো রকম অসুবিধার মধ্যে পড়লে অভিযোগ জানানোর সঠিক জায়গা আছে কি না, পড়ুয়াদের আত্মসুরক্ষার পাঠ দেওয়া হয় কি না- সবই জানাতে হবে ওই পোর্টালে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরণের কোনো পরিষেবা নেই। যাদবপুরে বিপর্যয় মোকাবিলার কোনো পরিষেবা না থাকলেও সেখানে এই সংক্রান্ত একটি কোর্স রয়েছে। আত্মসুরক্ষার পাঠ-ও ছাত্রীদের দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যারাটে ক্লাব রয়েছে। অবসাদ বা সেই সংক্রান্ত সমস্যা হলে তা সমাধানের জন্য কাউন্সেলিং-এর ব্যবস্থাও রয়েছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিও যাতে নিজেদের পরিকাঠামোকে উন্নত করতে পারে, তার জন্য কেন্দ্রের তরফে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। একথা বলাই যায়, এইভাবে যদি বিশ্ববিদ্যালয় স্তর থেকে পড়ুয়াদের নিজেদের জীবনে নিজেদের সুরক্ষা দেবার মত তৈরী করে দেওয়া যায়, তাহলে কিছুটা হলেও নতুন প্রজন্ম সমাজে ঘটে চলা অনৈতিক কাজকর্মের মোকাবিলা করতে পারবে।