"তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে
সব গাছ ছাড়িয়ে উঁকি মারে আকাশে"।।
ছোটবেলায় পড়া কবিতাটা শুধু আমাদের জেনারেশন নয়, এখনকার শিশুদেরও খুব পছন্দের একটি কবিতা। আমরা কল্পনায় ছেলেবেলায় চলে যেতাম সেই এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা ইয়াব্বড় তালগাছের জগতে। যেখানে সব গাছকে নিচে রেখে শুধুমাত্র তালগাছটি মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকত। পরে যখন সেই তালগাছ দেখেছি, তখন কল্পনার সঙ্গে যথারীতি মেলেনি। কারন কল্পনা ছিল আরো একটু রঙিন। তবে, যদিও ছোটবেলায় সেই কল্পনাই আমাদের ভাসিয়ে বেড়াত।
কিন্তু সত্যি সত্যি উঁচু গাছ বলতে আমরা জানলাম আমাদের নাগালের মধ্যে নয়, দেশের বাইরে সিয়েরা নেভাদার পূর্বে গ্রেট বেসিন অঞ্চলে রেডউড প্রজাতির অন্তর্গত সেকুইয়া জাতির অভয়ারণ্যে অবস্থিত যে সর্ববৃহৎ মহীরুহটি রয়েছে, সেটির নাম ‘জেনারেল শেরম্যান’। গাছটির উচ্চতা ২৭৪.৯ ফুট। জমির পরিধি ১০২.৬ ফুট। ১৩০ ফুট ওপরে এর প্রথম শাখা। আয়তন ৫২.৫০০ ঘনফুট। অর্থাৎ এই গাছের উচ্চতা প্রায় ২৭ তলা বাড়ির সমান। ভেবে দেখুন একবার, তের তলা একটি বাড়ি, এই গাছটির প্রথম শাখাটিকেও স্পর্শ করতে পারবে না।
এখানে বলে রাখা ভাল, গাছের উচ্চতা মাপা নিয়েও বেশ মজার ব্যাপার আছে। আগে মানুষ গাছের উচ্চতা নির্ণয় করতে যে সব পদ্ধতি আবিষ্কার করত, সেগুলি এখনকার মত নিখুঁত ছিল না। তাই অনেক সময়েই উচ্চতা মাপতে গিয়ে বেশিই মাপা হয়ে যেত। পরে আধুনিক পদ্ধতি আসার পরে দেখা গেল গন্ডগোল। আগের ম্যাপ অনুযায়ী গাছগুলির উচ্চতা কমে যাচ্ছে। তখনই বিজ্ঞানীরা সর্বজনবিদিত একটি গড় হিসেবে বের করলেন। বেশ কয়েকটি সহজ পদ্ধতির মধ্যে সহজ পদ্ধতি হচ্ছে গাছের মগডাল থেকে ফিতে ঝুলিয়ে হিসেবে করা। তবে উচ্চতম গাছের মাপ তো এরকমভাবে নেওয়া সম্ভব নয়। সাধারণ উচ্চতাবিশিষ্ট গাছগুলি এভাবেই মাপা হয়। আর বিরাটাকার গাছগুলি বিশেষভাবে লেজার রশ্মির সাহায্যে মাপা হয়।
এবারে আপনাদের জানাবো, সম্প্রতি আবিষ্কার হওয়া পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু গাছের কথা। গত বছর বোর্নিও দ্বীপের অরণ্যে 'হলদে মেরানটি' বলে পরিচিত একটি গাছ খুঁজে বের করেন নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা গাছটি ভালোভাবে শনাক্ত করতে থ্রিডি স্ক্যান ও ড্রোন নিয়ে যান। মালয়েশিয়ার সাবাহ এলাকার সংরক্ষিত ডানাম ভ্যালিতে গাছটি খুঁজে পাওয়া যায়। ওই এলাকার বাসিন্দা এন্ডিং জামি বিশেষ ফিতে দিয়ে গাছটি মেপেছেন। গাছটির উচ্চতা ৩২৮ ফুটের কিছু বেশি। মগডাল থেকে গাছটিকে দেখতে জামির খুব সুন্দর অভিজ্ঞতা হয়েছে। নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডোরিন বোয়েড জানান, এই ধরণের গাছগুলো অনেক উঁচু হয়। এমন আরো উঁচু গাছ আছে নিশ্চয়ই যেগুলো এখনও খুঁজে বের করা যায়নি। এই গাছগুলো সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। তবে গাছটির নাম দেওয়া হয়েছে 'মিনারা'। গাছটি একটু অন্যরকম তা বিজ্ঞানীরাও স্বীকার করেছেন।