রঙ করা শুকনো সবুজ চুল এবং ক্লাউনের মেকআপ করা এক জোকারের মুখে খেলা করতো গ্লাসগো হাসি। সব জোকারই কি মানুষকে হাসাতে পারেন? কীরকম হতো যদি কোনও জোকার এর হাসানো দেখে আপনার আত্মারাম খাঁচা ছাড়া হওয়ার যোগান হতো! তিনি একজন অভিনেতা। সপ্রতিভ ও উজ্জ্বল। ভাঙা গড়া কাঁধে করে দেখে গিয়েছেন জীবনের মাত্র কয়েকটা বছর।
বলেছিলেন, তাঁর জীবনের নিয়ন্ত্রক তিনি, হলিউড নয়। মজা পান বলেই আছেন। যেদিন মজাটা আর থাকবে না, সেদিনই চলে যাবেন। কথা দিয়ে কথা রেখেছিলেন। কিন্তু কেনো সেই মজাটা পাননি, হদিশ মেলেনা তারও। যদিও তাঁর চলে যাওয়ার উপাখ্যান আজকের এই লেখা নয়।
জনপ্রিয় কমিকসের একজন সুপার ভিলেন। অথচ নেই কোনও বিশেষ মায়াবী ক্ষমতা। রক্ত মাংসের মানুষ শেয়ানে শেয়ানে টক্কর দিয়েছিল নায়ক সুপারহিরো কে। তিনি হিথ লেজার। কখনও সমকামী এনিস, কখনও হাড় হিম করা লাল রঙা ঠোঁটের এক অরাজক। মায়ের পছন্দের উপন্যাস ‘উথারিং হাইটস’-এর প্রধান দুই চরিত্রের নামানুসারে তাঁর এবং দিদির নামকরণ।
১৯৯১ সালে বড়দিন নিয়ে তৈরি ছোট নাটিকায় ‘গাধার’ চরিত্রে প্রথম অভিনয় হাতেখড়ি। ছোট ভাইয়ের অভিনয় গুণে মজে বড়ো দিদি নাম লিখিয়ে দিলেন একটা অপেশাদার থিয়েটার দলে। ছেলেবেলায় হকি কোচ শর্ত রেখেছিলেন নয় হকি স্টিক অথবা মঞ্চ, যে কোনও একটা বেছে নিতে হবে তাঁকে। বলার আর অপেক্ষা রাখেনা কী বেছে নিয়েছিলেন তিনি।
ক্লাস টেনেই চুকিয়ে দিয়েছিলেন পড়াশোনার পাট। পেশাদার অভিনয় জীবনের লক্ষ্যে ষোল বছর বয়সে ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে সিডনি শহরে আসা। বিভিন্ন নাটকে ছোটখাট চরিত্রে অভিনয় করার পর ১৯৯৭ সালে মুক্তি পাওয়া ব্ল্যাক রকের মাধ্যমে বড়ো পর্দায় অভিষেক। ভাগ্যকে অন্যভাবে পরখ করে নিতে এবারে সোজা লস এঞ্জেলেস। উনিশ পেরোলে একজন আমেরিকান এজেন্টের শরণাপন্ন হন এবং প্রেমিকা লিসা জেন এর হাত ধরে সোজা হলিউড।
২০০৩ সাল। ডার্ক নাইট ট্রিলজির প্রথম ভাগ ‘ব্যাটম্যান বিগিনস্’ এ ব্রুস ওয়েইন চরিত্রের জন্যে কমবয়সী অভিনেতা খুঁজতে থাকা পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলান গিয়েছিলেন লেজারের কাছেও। সুপারহিরো সিনেমায় অভিনয় করতে অনুৎসাহী লেজার সেদিন ফিরিয়ে দিয়েছিলেন নোলানকে।
কিন্তু পরবর্তীতে সেই ছবি দেখে মুগ্ধ লেজার নিজের মত পরিবর্তন করেন। নিজেই নোলানের কাছে অনুরোধ করেন পরের ভাগে ভিলেন জোকারের চরিত্রে তাঁকে নেওয়ার জন্য। চরিত্র জীবন্ত করে তুলতে বাদ রাখেননি কোনও পন্থা। চিত্রনাট্য লেখার আগেই জোকার চরিত্রের বিভিন্ন প্রস্তুতি শুরু করে দেন। এক মাসের জন্য একটি হোটেল রুম ভাড়া করে আটকে ফেলেন নিজেকে।
দিনরাত চলতে থাকে অমানুষিক পরিশ্রম। নিজের সৃষ্ট ব্যতিক্রমী এই জোকারের চিন্তাধারা আর অনুভূতি একটি ডায়রিতেও লিখে রাখতেন
তিনি। নিজের অসাধারণ অভিনয় ক্ষমতা দিয়ে কমিকস এর জোকারকে ভিন্ন বাস্তবে রূপান্তর করেন।
পর্দার চরিত্র বাস্তবের মানুষটিকে গ্রাস করেছিল। কম বয়সে এক প্রতিভা নিজের মুক্তি খুঁজে নেয় মৃত্যুতে। কেউ বলেন ওষুধের বিষক্রিয়া, কেউ বলেন ড্রাগ ওভারডোজ। যদিও তাঁর চরিত্রদের মধ্যে তিনি আজও বর্তমান। ১৯৭৯ তে আজকের দিনেই পৃথিবীতে আসা সেই ছোট্ট জোকারের। তাঁর পাগলামিতেই তিনি অনন্য।