মিষ্টিমেলা ২০২০

ঠিকানা খুঁজতে বাঙালির গুগল ম্যাপ লাগে না। ঠিক ঠিকানায় পৌঁছতে চিরকুটেরও দরকার নেই তার। শুধু একটা মিষ্টির দোকান হলেই চলবে।

পাড়ার মিষ্টির দোকানও তার সবচেয়ে বড় লোকেশন ম্যাপ। চাকরীর চিঠি হোক বা অনলাইনে খাবার অর্ডার লোকেশন মার্ক একটাই ‘মিষ্টির দোকান’।

মিষ্টি ছাড়া বাঙালি ভাবাই যায় না। 

mistimela-3

পরীক্ষার দিতে যাওয়ার সময় দইয়ের ফোঁটা, পাশ করলে আসে রাজভোগ। নম্বর খারাপ হলেও ‘গোল্লা’র কথাই!

রসগোল্লা থেকে কাঁচাগোল্লা বাঙালির জগৎ আসলে মিষ্টিময়। রস তার স্বাভাবিক প্রকৃতি। পাড়ার আড্ডা থেকে ‘কর্প-মিট’ কোথায় নেই মিষ্টি!

হাল্লা রাজার যুদ্ধ থেমে যায় সন্দেশের হাঁড়ির লোভে। ব্রিটিশ বাঘের মনও বশ মেনেছিল মিষ্টির রসের যাদুতে।  

বঙ্গভূমির জীবনচর্চায় মিষ্টির ইতিহাস খুব প্রাচীন। মধ্যযুগের সূচনা থেকে মিষ্টির চল শুরু হয়। চৈতন্যের সময়ে মিষ্টির ব্যবহার আরও বাড়ে।

শোনা যায় পায়েস, দই এসব খুব ভালোবাসতেন চৈতন্যদেব। কৃষ্ণ ভোগে নানারকম পায়েস আর দই ছিল নিত্য সহচর। 

ছানা আবিষ্কারের পর মিষ্টির ধরন-ধারণ আমূল বদলে যায়। কড়া চিনির বদলে তখন চাই ছানার পেলবতা।

আগে কেটে যাওয়া দুধ ফেলে দিতেন দুধ ব্যবসায়ীরা। তার পরিমান খুব একটা কম নয়। পর্তুগিজ সাহেবরা সেই বাতিল হয়ে যাওয়া দুধ থেকেই তৈরি করতে শেখালেন ‘কটেজ চিজ’।  

‘ছানা’ শব্দটির উৎপত্তিও সেভাবেই। দুধ ‘ছেনে’ মানে কাটিয়ে তৈরী বলে ‘ছানা’।

সুকুমার সেন উপাদান অনুযায়ী বাঙালির মিষ্টিকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন। চিনি বা গুড়ের জ্বালে করা মিষ্টি। বাতাসা, পাটালি, কদমা প্রথম গোত্রের। আর ছানা দিয়ে তৈরি মিষ্টি। ছানার সঙ্গে চিনি বা গুড়। বৈচিত্র্য আনার জন্য তার সঙ্গে কখনও কখনও থাকত নারকেল, তিল।

mistimela-2 (1)

মুড়ি, মুড়কি, চিড়ে দিয়ে তৈরি হত ঘরোয়া মিষ্টি। সারা দিনের রান্নার শেষে মরা আঁচে দুধ ঘন করে তৈরি হত সেসব। বাড়ির গোরুর দুধ আর সর জমত হেঁশেলে। মেয়েমহলের নিজস্ব রেসিপিতে তৈরি হত নানারকম মিষ্টি। ঘরোয়া স্বাদে অতুলনীয়।

ধীরে ধীরে ব্যবসায়িক গুরুত্ব বাড়ল মিষ্টির। চলল নিত্য নতুন আবিষ্কার। সে যেন এক বিপ্লব। মানুষ সাদরে বরণ করল স্বাদ নিয়ে সব ধরনের পরীক্ষা-নিরিক্ষা।

সেই ট্র্যাডিশন এখনও চলছে। রসগোল্লা হোক বা সন্দেশ সবেতেই নতুন ছোঁয়া। মালাই , কেশর, চকোলেট এমনকি নানারকম ফুল, ফলও হয়ে উঠেছে মিষ্টির উপাদান। নামেও এসেছে চমক। ‘ফিউশন’ মিষ্টি বাঙালির পছন্দের মিষ্টির লিস্টে জায়গা করে নিয়েছে চটপট। সব ধরনের নতুনকে বরণ করে নিতে সদা তৎপর তারা। নতুন কিছু চোখে পড়লেই হল!

স্বাদের উদযাপনে একাকার নতুন পুরাতন। কোথাও কোনো ঝগড়া নেই। মিষ্টির মেলাতেও বজায় সেই ধারা। বাঙালি মিষ্টির ঐতিহ্য আর ইতিহাসে উদযাপনে জিয়ো বাংলা আয়োজন করেছে ‘মিষ্টি মেলার’। ডিজিটাল দুনিয়ায় এই প্রথম। ১১ ডিসেম্বর থেকে প্রতিদিন মিষ্টি দিন। থাকছে শহরের প্রথম সারির মিষ্টি প্রস্তুতকারক সংস্থা। তাদের নানা গল্প আর ঐতিহ্যের ইতিহাস। মিষ্টি তো থাকছেই। লোভনীয় সব স্বাদের সন্ধান পেতে চোখ রাখুন জিয়ো বাংলার পর্দায়।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...