গোলগাল চেহারা। পাট-পাট নীল সূতির শাড়ি। কপালে গোল লাল টিপ। পরিপাটি চুল। চোখে কাজল আর হালকা লাল লিপস্টিকও চোখ এড়ায় না। কাঁধের ঝোলা ব্যাগটি বলে দেয় তিনি চাকরি করেন। দেখলেই মনে হবে এই বুঝি হেঁটে গেলেন রাস্তা দিয়ে। কিংবা অফিস টাইমে দাঁড়িয়ে আছেন বাসের লাইনে। এই তো পাড়ার মধ্যবয়সী মাসিমা-কাকিমা বা বড়দিদি। মুখে লেগেই আছে হাসি।
একসময় শহরের প্রতিটি বড় রাস্তা, বা জনবহুল এলাকায় দেখা যেত তাঁকে। টিভিতেও নিয়মিত মুখ। গোটা দেশ তাঁকে এক নামে চিনত। সবার ‘বুলাদি’। মধ্য নাম পদবী কোনওটাই জানা নেই মুখে মুখে ‘বুলাদি’। পেশা এইচআইভি কাউন্সেলার। সরাসরি কথা বলা যেত বুলাদির সঙ্গে। চার সংখ্যার ফোন নম্বর মনে রাখতেও কসরত করতে হয় না। তিন ভাষায় কথা বলতে জানে বুলাদি।
শেষ নব্বই থেকে গোটা দেশে এইচআইভি সচেতনতা ক্যাম্পেনের মুখ হয়ে উঠেছিল বুলাদি। ২০০৪ সালে কাপড়ের তৈরি এক পুতুল ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট এইডস প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল সোসাইটি লঞ্চ করেছিল এই ম্যাসকটটি। পরিকল্পনায় নিউইয়র্কের বিজ্ঞাপন সংস্থা অলিলভি অ্যান ড মাদার।
বুলাদি সমাজকর্মী। আবার মা, দিদির ভূমিকাতেও দিব্যি মানিয়ে যায়। ক্যাম্পেনের থিম ছিল- ‘ওম্যান অ্যান্ড গার্লসঃ হ্যাভ অ্যা সে’। মানে মহিলাদেরও কিছু বলার আছে। সমাজে এইডস নিয়ে ধারণা গড়ে তুলতে দারুণভাবে সাহায্য করেছিল বুলাদি ক্যাম্পেন। টেলিভিশন, রেডিয়ো, সংবাদপত্র, হোডিং- গণমাধ্যমের সব’কটি অস্ত্র ব্যবহার করে ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছিল বুলাদি। সর্ব সাধারণের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয়তাও পায়।
এইডস নিয়ে ভুল ধারণা ভাঙ্গা, রোগটি সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা, রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সম্বন্ধে সাধারণ মানুষকে প্রাথমিক ধারণা দেওয়া ছিল এই ক্যাম্পেনের মূল উদ্দ্যেশ্য, যা করতে সফল হয়েছিল বুলাদি।
তার কাঁধের ঝোলা থেকে শুরু করে সাজ সবেতেই বিশেষ ভাবনাচিন্তার প্রয়োগ ঘটানো হয়েছিল।
২০০৪ থেকে টানা তিনবছর মানে ২০০৭ পর্যন্ত চলেছিল বুলাদি ক্যাম্পেন, তারপর হারিয়ে যায় বুলাদি। প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায় বোধহয়। অথবা সময়ের নিয়ম। তবে দু-হাজারি সময়ের স্মৃতি চিহ্ন হয়ে আজও মানুষের স্মৃতিতে রয়ে গিয়েছে নীল শাড়ি আর ঝোলা ব্যাগের পুতুল-মানবী।