প্রজন্মের পর প্রজন্ম। একই পেশা। পেশাটি কি? যুদ্ধক্ষেত্রে মানুষের প্রাণ বাঁচানো। যুদ্ধ-পাখির পেশা।
সময়টা ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। জার্মান সৈন্য বাহিনীর এক বিশেষ সংরক্ষাণাগার। জন্ম হয়েছে এক ছোট্ট পায়রার।
জন্মানোর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তার বাঁ পায়ে পরিয়ে দেওয়া হল একটা বিশেষ ট্যাগ। ট্যাগটির নম্বর - ১৭-০৩৫০-৪৭। খুদে কাঁধে চাপানো হল অনেকটা দায়িত্ব। তখন তার বয়স মাত্র পাঁচ দিন।
ওই বয়স থেকেই সে পেল মানুষকে বাঁচানোর দায়িত্ব।
তারপর শুরু হলো তার প্রশিক্ষণ। যুদ্ধক্ষেত্রে বার্তা বয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রশিক্ষণ। মানুষকে বাঁচানোর ব্রতই ছিল সঙ্গী ওই খুদে পায়রার।
তার পরের বছরই অর্থাৎ ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ঘোষণা হল।
যুদ্ধকালীন সম্পূর্ণ সময়টাতে জার্মান সৈন্যবাহিনীর হয়ে কাজ করতো এই পায়রা। ট্যাগে থাকা নম্বরই ছিল তার নাম।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষের দিকে একবার মার্কিন সৈন্যবাহিনীর হাতে প্রায় এগারো জন জার্মান যুদ্ধ-পায়রা ধরা পড়ে। তাদের নিয়ে যাওয়া হল মার্কিন সৈন্যদের হেডকোয়ার্টারে।
এই খুদে পাখিরা যোদ্ধাদের বড় প্রিয় ছিল। তাই ওই এগারো জন জার্মান পায়রার কোন ক্ষতি করেনি মার্কিন সেনারা।
তবে ওই বন্দীদের মধ্যে তাদের নজর কেড়েছিল একটি বিশেষ পাখি। খুব বুদ্ধিমান সে। একবার ইঙ্গিত দিলেই সে বুঝে যায় তার কর্তব্য।
শুধু তাই নয়, বেশ কয়েকবার নিজস্ব বুদ্ধি দিয়েও যুদ্ধক্ষেত্রের নানা সমস্যা মিটিয়ে ফেলেছিল সে।
আদর করে পায়রাটির নাম দেওয়া হল 'কাইজার'। শত্রুপক্ষের হলেও তাকে ভারি পছন্দ হয়েছিল মার্কিন সেনাদের।
তাই একমাত্র কাইজারকে মার্কিন সেনারা তাদের নিজেদের যুদ্ধ-পায়রাদের সঙ্গে রাখতে শুরু করল।
নিজেদের মতো করে আবার প্রশিক্ষণ দিল।
এর মধ্যেই শুরু হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী পায়রাদের মধ্যে অনেকেই তখন কর্মক্ষমতা হারিয়েছে।
কেউ আহত, কেউ মারাও গেছে।
তখন এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিল মার্কিন সেনারা। তারা কাইজারের হাইব্রিড অর্থাৎ কৃত্রিমভাবে তার পরবর্তী প্রজন্ম তৈরি করল।
বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসে প্রথমবার।
প্রযুক্তি তখন অনুন্নত। বেশ কঠিন ছিল কোন পাখির এরকম হাইব্রিড তৈরি করা। এমনকি হাইব্রিড তৈরি হলেও জন্মের পর তাদের বাঁচার আশাও থাকত না।
কিন্তু কাইজার সবক্ষেত্রেই ছিল ব্যতিক্রম। তার সন্তানেরা বাঁচলো।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করলো।
কাইজারের সন্তানদের থেকেও হাইব্রিড পায়রা তৈরি করা হয়েছিল।
বছরের পর বছর ধরে তারা যুদ্ধক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করে এসেছে।
কাইজার নিজেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। তারপরই মারা যায় এই বীর সৈনিক।
জার্মানি এবং আমেরিকা এই দুই জায়গার মিউজিয়ামেই জায়গা পেয়েছে কাইজারের স্মৃতিরা।
চিয়ার এমি, স্পাইক, দি মোকার, প্রেসিডেন্ট উইলসন এবং এই কাইজারের মত পাখিরা সবসময়ই ব্যতিক্রমী জীবনের শিক্ষক।