তাঁর বাবা পেশায় ছিলেন একজন খনি শ্রমিক। ছোট থেকেই খুব কষ্টে তাঁর দিন কেটেছে। বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলে বড় হয়ে সরকারি চাকরি করবেন, এবং পরিবারের দারিদ্র্য দূর করবেন। তিনি চাইতেন না যে তাঁর ছেলে তাঁরই মতো খনিতে কাজ করুক। তাঁর স্বপ্ন আজ পূরন হয়েছে। ছেলে ভারতীয় দলের প্রতিভাবান ক্রিকেটার। উমেশ যাদবের জীবন কাহিনী সত্যিই প্রমাণ করে যে যোগ্যতা থাকলে সাফল্য একদিন ধরা দেবেই।
নিজের সম্পর্কে দেওয়া এক ইন্টারভিউয়ে উমেশ নিজের সম্পর্কে এইসব তথ্য প্রকাশ্যে এনেছেন। উমেশের বাবার তাঁকে নিয়ে দেখা স্বপ্ন পূরণের জন্য পুলিশ কনস্টেবলের পরীক্ষাতেও বসেন উমেশ। কিন্তু ভাগ্য দেবতা তাঁর কপালে আরো অনেক বেশি লিখে রেখেছিলেন। কনস্টেবলের চাকরির পরীক্ষায় ফেল করেন তিনি। আর তাতেই তাঁর ভবিষ্যত বদলে যায়।
অর্থ উপার্জন করে সংসারে বাবাকে সাহায্য করার জন্য উমেশ ক্রিকেটে যোগ দেন। কয়েক বছরের অধ্যবসায়ে নিজেকে দারুন পেসারে পরিণত করেন। তাঁর বল খেলতে তাবড় তাবড় ব্যাটসম্যানরাও ভয় পেতেন। ২০০৮ সালের শুরু থেকেই তার ফাস্ট বোলিংয়ের দৌলতে সকলের নজর কেড়েছিলেন। বিদর্ভের হয়ে রঞ্জি ট্রফি খেলার সুযোগ পাওয়ার পর উমেশকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি।
এর আগে অবধি উমেশ টেনিস বলেই প্র্যাকটিস করতেন তাঁর গ্রামে। তাঁর অধিনায়ক প্রীতম গান্ধে সর্বপ্রথম তাঁর প্রতিভা চিনতে পারেন। ২০১০ সালে প্রথম জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ পান তিনি। তারপর ২০১১-তে অস্ট্রেলিয়া সফর। এর পর একের পর এক সাফল্যের আস্বাদন করতে থাকেন উমেশ। ধীরে ধীরে ক্রমশ জাতীয় দলের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠতে থাকেন ডানহাতি এই পেসার।
আইপিএল-এও নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন উমেশ। তবে সাফল্য অর্জন করলেও নিজেকে বদলে ফেলেননি উমেশ। এখনও মনে রেখেছেন বাবার ইচ্ছা। তাই তো ২০১৭ সালে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সহকারী ম্যানেজারের পদে যোগ দিয়েছেন। ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর বাবার স্বপ্ন পূরণে এই কাজেই যোগ দেবেন, জানিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত ধারাবাহিকতার জন্য মাঝেই মাঝেই প্রথম এগারোয় দেখা যায় না উমেশকে। কিন্তু চেষ্টা কোনও দিন ছাড়েন না। সুযোগ এলেই নিজের সেরাটা দেন। এই যেমন ইংল্যান্ড সফরে ব্যক্তিগত মাইলস্টোনের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন, তবে সুযোগ আসছিল না মাঠে নামার। শেষবার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে মেলবোর্ন টেস্টে মাঠে নেমেছিলেন উমেশ যাদব। চোট সারিয়ে ফিরে আসার পর পুনরায় টিম ইন্ডিয়ার সাদা জার্সিতে খেলতে নামেন ওভালে। সুযোগটাকে যথাযথ কাজে লাগিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে ব্যক্তিগত নজির গড়েন টিম ইন্ডিয়ার তারকা পেসার।
ওভাল টেস্টের আগে দীর্ঘতম ফর্ম্যাটে ৪৮টি ম্যাচে উমেশের ব্যক্তিগত সংগ্রহ ছিল ১৪৮টি উইকেট। ওভাল টেস্টের প্রথম দিনে যাদব তুলে নেন জো রুটের মূল্যবান উইকেট। পরে দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই ক্রেগ ওভারটনকে ফিরিয়ে ১৫০ টেস্ট উইকেটের মাইলস্টোন ছুঁয়ে ফেলেন উমেশ।
সার্বিকভাবে ১৬ নম্বর ভারতীয় বোলার হিসেবে টেস্টে ১৫০ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেন উমেশ যাদব। তিনি হলেন ৬ নম্বর ভারতীয় পেসার, যাঁর মুকুটে এই পালক যোগ হয়। উমেশের আগে ভারতীয় পেসারদের মধ্যে এই মাইলস্টোন টপকেছেন কপিল দেব (৪৩৪), ইশান্ত শর্মা (৩১১), জাহির খান (৩১১), জাভাগল শ্রীনাথ (২৩৬) ও মহম্মদ শামি (১৯৫)। পরে ডেভিড মালানের উইকেট তুলে নিয়ে উমেশ ছুঁয়ে ফেলেন টিম ইন্ডিয়ার বর্তমান হেড কোচ রবি শাস্ত্রীর ১৫১টি টেস্ট উইকেট নেওয়ার নজির।