সন্তোষী মায়ের মাহাত্ম্য

সন্তোষী মা হলেন সন্তুষ্টি বিধানের দেবী। একসময় মূলত উত্তর ভারত ও নেপালের মহিলারা সন্তোষী মায়ের পুজো করতেন। তবে এখন সন্তোষী মা সারা ভারত জুড়েই পূজিত হন। অনেকেই মায়ের ব্রত পালন করেন। যোধপুরে প্রাচীনকাল থেকেই সন্তোষী দেবীর একটি মন্দির আছে। গত শতকের ষাটের দশকের শুরুতে সন্তোষী মায়ের মাহাত্ম্য নিয়ে জনসমক্ষে বড় পরিসরে প্রথম প্রচার শুরু হয়। মৌখিক কথা-কাহিনী, ব্রতের বিবরণী সম্বলিত বিভিন্ন বই, ছবি, পোষ্টার ইত্যাদির মাধ্যমে সন্তোষী মায়ের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। সন্তোষী মাকে নিয়ে সিনেমা তৈরি হওয়ার পর থেকেই বেশি করে প্রচারের আলোয় এসে পড়েন মা। সারা দেশ জুড়ে তাঁর পুজোর প্রচলন শুরু হয়।

শুক্রবার মানেই সন্তোষী মায়ের দিন। দেবীর জন্ম শুক্রবার, পূর্ণিমা তিথিতে। সেই কারণেই সন্তোষী মায়ের পুজোর জন্য শুক্রবার দিনটি বেছে নেওয়া হয়েছে। প্রচলিত বিশ্বাস মতে, ১৬টি শুক্রবার যাবৎ এক নাগাড়ে সন্তোষী মায়ের ব্রত পালন করলে, জীবনের সব দুঃখ কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই ভক্তেরা বিশ্বাস ভরে মায়ের পুজো করেন। হিন্দু ধর্ম অনুসারে, সপ্তাহের সাত দিনের প্রতিটি দিন কোনও না কোনও এক দেবতার নামে উত্‍সর্গীকৃত। যেমন শুক্রবার দিনটি সন্তোষী মায়ের উদ্দেশ্যে নিবেদিত।

সন্তোষী মায়ের ব্রত টানা ১৬টি শুক্রবার ধরে করতে হয় এবং শেষ শুক্রবার ব্রত উদযাপন করার জন্যে বালকভোজন করানোর রেওয়াজ রয়েছে। সন্তোষী মায়ের পুজোর জন্য সন্তোষী মায়ের ব্রত পালন করার নিয়ম রয়েছে, সেই কারণেই শুক্রবার সন্তোষী মায়ের কথা পাঠ করতে হয়। সন্তোষ কথাটি থেকে এসেছে সন্তোষী কথাটি। সন্তুষ্টি প্রদানের দেবী হলেন সন্তোষী। অন্যান্য ব্রতকথার মত সন্তোষী মায়ের ব্রতকথা কোনও প্রাচীন শাস্ত্রে পাওয়া যায় না। তাই মনে করা তুলনামূলক পরবর্তী কালে এই ব্রতকথার সৃষ্টি। সেই করণেই সন্তোষী মাকে তুলনায় নবীন দেবী বলেই মনে করা হয়।

 

SantoshiMata1

 

তবে পৌরাণিক মতে, রাখিপূর্ণিমা তিথিতে যখন গণেশের হাতে তাঁর বোন রাখি বেঁধে দিচ্ছিলেন। তখনই গণেশের দুই পুত্র শুভ আর লাভের রাখি বাঁধাবার পূর্ণ হয়। তাঁদেরও শখ হয় তাঁরা বোনের হাতে রাখী বাঁধবেন। অবুঝ সন্তানদের মনোবাসনা পূর্ণ করতে পিতা গণেশ কন্যা রূপে দেবী সন্তোষীর সৃষ্টি করেছিলেন। দাদাদের মনের ইচ্ছা পূর্ণ করার জন্য তার সৃষ্টি হওয়ায়, তাঁর নাম হল সন্তোষী। দিনটি ছিল রাখী পূর্ণিমার দিন এবং শুক্রবার। সন্তোষের অধিষ্ঠাত্রী এই দেবী, তার ভক্তের সকল মনোষ্কামনা পূর্ণ করেন বলে তাঁকে সন্তোষী মা বলা হয়।

অশাস্ত্রীয় লৌকিক দেবী হলেন মা সন্তোষী। সন্তোষী মাকে সন্তোষের অধিষ্ঠাত্রী দেবী বলে অভিহিত করা হয়। দেবীর জন্ম হয়েছিল শুক্রবারের পূর্ণিমা তিথিতে। তাই সন্তোষী মায়ের পুজোর জন্য শুক্রবার দিনটি শ্রেষ্ঠ। চর্তুভূজা দেবী রক্তবস্ত্র পরিহিতা। সন্তোষী মা তাঁর নিজের চার হাতের দুটিতে ত্রিশূল ও তলোয়ার ধারণ করেন। অন্য দুটি হাতে বরাভয় ও সংহার মুদ্রা ধারণ করেন। মায়ের ত্রিশূলপাত তিনটি গুণের প্রতীক, সেগুলি হল- সত্ত্ব, রজঃ এবং তম। তলোয়ারটি জ্ঞানের প্রতীক। এছাড়াও দেবীর সঙ্গে চালের সোনালী পাত্রও থাকে। দেবীর বাহন গাভী।

মায়ের ব্রতকথা নিয়ে নানা গল্প প্রচলিত রয়েছে। ​একদা এক সময় কোনাও এক মহিলা বাস করতেন, যার ওপরে তাঁর শাশুড়ি মা নানা ভাবে অত্যাচার করতেন। শাশু়ডি মায়ের সব রকম অত্যাচার ও খারাপ ব্যবহার মুখ বুজে সহ্য করতেন ওই মহিলা। কারণ তিনি তাঁর স্বামীকে খুবই ভালোবাসতেন। কিছুদিন পরে ওই মহিলার স্বামীকে কর্মসূত্রে অন্যত্র যেতে হয়। স্বামীর অনুপস্থিতির সুযোগে ওই মহিলার শাশুড়ি মা পুত্রবধূর ওপর অত্যাচারের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ওই মহিলা একটি মন্দিরে যান, সেখানে তিনি সন্তোষী মায়ের ব্রতকথার বিষয়ে জানতে পারেন।

এরপরই তিনি পরপর ১৬টি শুক্রবার ধরে উপবাস রেখে সন্তোষী মায়ের ব্রত পালনের সিদ্ধান্ত নেন। প্রথম শুক্রবার ব্রত পালন করার পরেই তিনি শাশুড়ি মায়ের ব্যবহারে পরিবর্তন টের পান। তাঁর স্বামীও বিদেশ থেকে তাঁকে চিঠি ও টাকা পাঠান।এক একটা করে শুক্রবার সন্তোষী মায়ের ব্রত পালন করে কাটাতে থাকেন তিনি, আর তাঁর জীবনেও পরিবর্তন আসতে থাকে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তাঁর স্বামীর উপার্জন অনেকটাই বেড়ে যায়। তাঁদের বেশ কিছু টাকা সঞ্চয়ও হয়ে যায়। স্বামী ফিরে আসার পর ১৬টি শুক্রবার সম্পূর্ণ হলে উদ্যাপনের মাধ্যমে ব্রত উদযাপনের আয়োজন করেন ওই মহিলা। কিন্তু তাঁর শাশুড়ি মোটেও চাননি যে তিনি সফল ভাবে সন্তোষী মায়ের ব্রত উদযাপন করতে পারেন। সেই কারণে যে আটটি ছেলেকে তিনি খাওয়ার জন্য নিমন্ত্রণ করেছিলেন, তাঁদের তিনি টক খাবার খাইয়ে দেন। সন্তোষী মায়ের ব্রত উদযাপন টক খাবার খাওয়ানো একেবারেই বারণ।

সন্তোষী মায়ের ব্রত সঠিক ভাবে উদযাপন করতে না পারায় ওই মহিলার স্বামীর বড় ক্ষতি হয়ে যায়। কিন্তু এরপর তিনি ব্রত উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নেন। এবার কোনও রকম সমস্যা ছাড়াই নিষ্ঠাভরে ব্রত উদযাপন করতে পারেন তিনি। ওই মহিলার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে মা তাঁকে আশীর্বাদ করেন। নিজের ভুল বুঝতে পেরে সন্তোষী মায়ের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে নেন তাঁর শাশুড়ি মা। এইভাবেই সন্তোষী মায়ের ব্রত কথার প্রচলন শুরু হয়।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...